বাংলার মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত একটি প্রবাদ- “জোর যার মুল্লক তার” অর্থাৎ প্রতিনিয়তই ক্ষমতাধর এক শ্রেণীর মানুষের জবর দখলের শিকার হচ্ছেন অনেক...
সুতরাং আপনিও যদি এমন ঘটনার শিকার হন, তবে আপনি ফৌজদারী কিংবা দেওয়ানী মামলা দাখিলের মাধ্যমে প্রতিকার পেতে পারেন। তবে, এক্ষেত্রে বেআইনীভাবে দখলচ্যুত হলে তামাদী কাল অতিবাহিত হওয়ার পূর্বেই আপনাকে মোকাদ্দমা দায়ের করতে হবে। অন্যথায় অচল হিসেবে গণ্য হবে।
তবে, আমি এখানে কোন ব্যক্তি সম্পত্তি থেকে দখলচ্যুত হলে ১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারা অনুসারে দেওয়ানী মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করব।
আমার এই আলোচনায় যে বিষয়গুলি স্থান পাবে তা নিম্নরুপঃ
- ১৮৭৭ সালের ৯ ধারার বিধান মতে বেআইনীভাবে দখলচ্যুত ব্যক্তির প্রতিকার কি?
- দলখচ্যুত ব্যক্তির আদালতে দখল উদ্ধারের মোকাদ্দমা করা সময়সীমা কত?
- আদালত কর্তৃক তদন্তের পরিসর।
- দখল প্রদান আদেশে আদালতের সীমাবদ্ধতা।
- এই ডিক্রীর বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির প্রতিকার ব্যবস্থা।
আসুন জেনে নেই, Specific Relief Act (1877) বা সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারাতে উল্লেখিত বিধিবিধান সম্পর্কে।
Civil case for recovery of possession
দখল পুনরুদ্ধারের জন্য দেওয়ানী মামলা
১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারায় স্থাবর সম্পত্তির দখলচ্যুত ব্যক্তি কর্তৃক মামলা দায়ের বিধি-বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে যে,
যদি কোনও ব্যক্তি আইনসম্মত প্রক্রিয়া ছাড়াই যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই স্থাবর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন তবে তিনি মামলা দায়েরের মাধ্যমে তা পুনরুদ্ধার করতে পারেন, যদিও এই জাতীয় ক্ষেত্রে অন্যান্য অধিকার উত্থাপন হতে পারে।
This section further states that nothing in this section shall hinder the filing of suit by any person for the establishment of his right to such property and the restoration of his possession."
অর্থাৎ যদি কোনও ব্যক্তি আইনানুগ প্রক্রিয়া ছাড়াই তার সম্মতি ব্যতীত স্থাবর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন, তবে তিনি মামলা দায়েরের মাধ্যমে তা পুনরুদ্ধার করতে পারবেন, যদিও এ জাতীয় ক্ষেত্রে অন্যান্য অধিকার উত্থাপিত হতে পারে।
এই বিভাগে আরও বলা হয়েছে যে এই ধারার কোনও কিছুই এই জাতীয় সম্পত্তির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এবং তার দখল পুনরুদ্ধারের জন্য কোনও ব্যক্তির পক্ষে মামলা দায়ের করতে বাধা প্রদান করবে না।
এ ধারার অধীনে আদালত কর্তৃক তদন্তের পরিসর খুবই সীমিত এবং কেবল একটি বিষয়ের তদন্ত করা যেতে পারে আর তা হলো দখল সংক্রান্ত বিষয়। আদালত স্বত্বের প্রশ্নটি বিবেচনায় আনতে পারে না। বাদী যদি দখলচ্যুতির বিষয়টি প্রমাণে সমর্থ হন তাহলে বিবাদীর ভালো স্বত্ব থাকলেও তদন্তকালে আদালত তা বিবেচনায় আনতে পারবে না এবং বিবাদী স্বত্বের প্রশ্নটি উত্থাপন পূর্বক বাদীর মামলার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে না। বাদী নালিশী সম্পত্তির দখল কিভাবে পেয়েছেন সে প্রশ্নেও যাওয়া যাবে না।
মোকাদ্দমা করার সময়সীমা
১৯০৮ সালের তামাদি আইনের ১ নম্বর তফসীলের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ৯ ধারার মামলা অর্থাৎ দখলচ্যুত সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধার মামলা বেদখলের তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে উপযুক্ত আদালতে দায়ের করা না হলে তা অচল হবে।
আদালত কর্তৃক তদন্তের পরিসর
ফলে, উপরোক্ত ধারানুযায়ী বেদখল সম্পত্তি নিম্নোক্ত শর্ত সাপেক্ষ্যে দখল পুরুদ্ধার মামলা করতে পারেন। যেমন-
- সম্পত্তিটি বাদীর দখলে ছিল কি না।
- বাদীর সম্মতি ছাড়া তাকে দখলচ্যুত করা হয়েছিল কি না।
- আইনানুগ পন্থা ছাড়া দখলচ্যুত করা হয়েছিল কি না।
- এস. আর. এ. আইনের ৯ নম্বর ধারানুযায়ী মামলা দায়ের এর ৬ মাস পূর্ব বাদীর দখল ছিল কি না তা তদন্ত করতে পারে। যদি মামালা দায়েরের ৬ মাস পূর্ব হতে বাদীর উক্ত সম্মপত্তিতে দখল না থেকে থাকে, তবে বাদী দখলদারকে স্বত্ত্বের উপর ভিত্তি করে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করতে পারবেন না।
দখল প্রদান আদেশে আদালতের সীমাবদ্ধতা
বেআইনীভাবে স্থাবর সম্পত্তি হতে দখলচ্যুত বক্তিকে ৯ ধারাবলে আদালত দখল প্রদানের আদেশ দিতে পারেন। যেহেতু বাদীর, স্বত্ব সম্পর্কে কোন অনুসন্ধান করা হয় না এবং যেহেতু উৎকৃষ্ট স্বত্বের অধিকারী কোন ব্যক্তি সেই সম্পত্তি দাবী করলে বাদী সেই সম্পত্তি উক্ত ব্যক্তির নিকট অর্পণ করতে বাধ্য থাকে সেইহেতু গৃহাদী ভেঙ্গে সম্পত্তির ক্ষতি সাধন পূর্বক ৯ ধারায় দখল প্রদানের আদেশ আদালত দিতে পারে না। [P. L. D. (1973) Lahore 125]
৯ ধারার ডিক্রীর বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির প্রতিকার
সুনির্দিষ্টি প্রতিকার আইনের ৯ ধারায় যে প্রতিকার দেওয়া হয় তা কেবল দখল সংক্রান্ত বিষয়ে। এই ধারায় স্বত্ব সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয় না। আবার এই ধারাবলে ডিক্রীর বিরুদ্ধে আপীলও করা যায় না। কিন্তু এই ডিগ্রি চ্যালেঞ্জ করে স্বত্ব সাব্যস্থ পূর্বক দখল পুররুদ্ধারের অন্য নিয়মিত মামলা করা যায়। দেওয়ানী কার্যবিধি অনুসারে েএই মামলা দায়ের করা যায়। ৯ ধারায় বর্ণিত আছে যে, এই ধারার কোন কিছু সম্পত্তির ব্যপারে নিজের স্বত্ব প্রতিষ্ঠা ডিক্রী দেওয়া হয় তার জন্য দেওয়ানী কার্যবিধির আওতায় প্রতিকার লাভের পথ উন্মুক্ত থাকে।
এছাড়াও এই মামলায় বাদীর স্বত্ব প্রমাণ করতে পারলে ৯ ধারায় প্রতিকার পাওয়া স্বত্বেও দেওয়ানী কার্যবিধি আইনে প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে। তাই বলা যায় যে, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারায় বাদী ডিগ্রী পেলেও বিবাদী স্বত্ব সাব্যস্তপূর্বক দখল কায়েম ও নিষেধাজ্ঞার মামলা দায়ের অথবা স্বত্ব সাব্যস্তপূর্বক দখল পুনরুদ্ধারের মামলা দায়ের করে প্রতিকার পেতে পারে।
এই ধারাবলে প্রদত্ত ডিক্রীর বিরুদ্ধে কেবল আপীল নয়; বরং রিভিউও করার সুযোগ নাই।
COMMENTS