হিন্দুদের ১০টি আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে বিয়ে অন্যতম। হিন্দু আইনে বিয়ে হচ্ছে একটি সংস্কার (Sacrament)। ধর্মীয় বিধান মতে, বিয়ের মাধ্যমে নর-নারীর ...
হিন্দুদের ১০টি আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে বিয়ে অন্যতম। হিন্দু আইনে বিয়ে হচ্ছে একটি সংস্কার (Sacrament)। ধর্মীয় বিধান মতে, বিয়ের মাধ্যমে নর-নারীর মধ্যে মিলনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়া হয়। তবে, এই বিয়ের বিভিন্ন রুপ আছে।
নিম্নে আপনাদের সুবিধার্থে হিন্দু আইনের স্বীকৃত ও অপ্রচলিত বিয়ের রুপ সম্পর্কে আলোচনা করব।
Different forms of marriage in Hindu law
হিন্দু আইনে বিয়ের বিভিন্ন রূপ
হিন্দু শাস্ত্র মতে বিশেষ করে মনুর মতে বিয়ে ৮ প্রকার। যেমন-
- ব্রাহ্ম;
- দৈব;
- আর্য;
- প্রজাপত্য;
- গন্ধর্ব;
- অসুর;
- রাক্ষস;
- পৈচাশ।
উপরোক্ত আট প্রকার বিয়ের মধ্যে ৪টি হলো অনুমোদিত এবং অবশিষ্ট ৪টি অননুমোদিত।
APPROVED FORM OF MARRIAGE বা অনুমোদিত বিবাহ
ব্রাহ্ম বিয়ে: এই রীতি অনুসারে কোন বেদজ্ঞ অর্থাৎ বেদ সম্পর্কে যার জ্ঞান আছে এমন ব্যক্তি ও জ্ঞানী-গুণী, অবিবাহিত ব্যক্তিকে বাসায় আমন্ত্রণ করে অলংকারে ভূষিত কন্যাকে যৌতুকাদিসহ তার হাতে সম্প্রদান করা হয়। পূর্বে এই ধরনের বিয়ে কেবল ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তীকালে প্রায় সকল বর্ণের হিন্দুদের মধ্যে এটা প্রচলিত হয়েছে। বাংলাদেশেরে প্রায় শিক্ষিত হিন্দু পরিবারে এই পদ্ধতিতে বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
দৈব বিয়ে: ব্রাহ্ম বিয়ের চাইতে এ ধরনের বিয়ে নিকৃষ্টতর বলে বিবেচনা করা হয়। এ পদ্ধতিতে মেয়ের পিতা যজ্ঞানুষ্ঠান নিযুক্ত পুরোহিতকে দক্ষিণার বিনিময়ে তার মেয়েকে দান করেন।
আর্য বিয়ে: কোন ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করার জন্য পাত্র কনের পিতাকে এক জোড়া গরু, মহিষ প্রদান করে তার কন্যাকে নিজ পত্নীরুপে গ্রহন করেন।
প্রজাপত্য বিয়ে: এই ধরনের বিয়েতে পাত্র কনের পিতার কাছে প্রার্থনা করে কনের পাণি গ্রহণ করে। বর কনের পিতার কাছে তার মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করা অঙ্গিকার করে এবং কনের বাবা তার মেয়েকে বরের হাতে সমর্পণ করে এবং বলে আজ থেকে তোমরা দুজন জাগতিক ও ধর্মীয় কাজের অংশীদার হলে। এ বিয়ে মোটামুটি ব্রাহ্ম বিয়ের মতই।
UNAPPROVED FORM OF MARRIAGE বা অননুমোদিত বিবাহ
গন্ধর্ব বিয়ে: পাত্র-পাত্রী নিজের ইচ্ছানুযায়ী পরস্পরকে স্বামী-স্ত্রী রুপে গ্রহণ করতো। এ ধরনের বিয়ে হিন্দু সমাজে নিন্দনীয় মনে করা হতো যদিও তা অস্বীকার করা হতো না। প্রকৃতপক্ষে, এ রকম বিয়েকে উপ-পত্নী রাখার মতো মনে করা হতো।
অসুর বিয়ে: এ বিয়ের রীতি ব্রাহ্ম বিয়ের মতই। তবে, এক্ষেত্রে কনের পিতা পাত্র পক্ষের নিকট কনের মূল্য দাবী করতো এবং পাত্র নির্ধারিত মূল্য প্রদান করে কনেকে নিজ পত্নীরুপে গ্রহণ করতো। এই অর্থকে বলা হয় শুল্ক। শুল্কের মালিকানা স্বত্ব কনেরই থাকে।
রাক্ষস বিয়ে: জোর করে কনেকে ধরে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করাকে রাক্ষস বিয়ে বলে। ক্ষত্রিয় ও সামরিক শ্রেণীর লোকেরা এভাবে বিয়ে করতো। কনের আত্মীয় স্বজনকে পরাস্ত করে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে বিয়ে করা হতো। হিন্দু সমাজে এ বিয়ে মনোনীত ছিল না।
পৈচাশ বিয়ে: কোন কুমারী মেয়েকে মাদক দ্রব্য সেবনে নেশাগ্রস্থ অবস্থায় তার সতীত্ব হরণ করে বিয়ে করা হতো। এভাবে ধর্ষণ করার মাধ্যমেই ব্যক্তি উক্ত মেয়ের স্বামী হতে পারতো।
উপরোক্ত আট ধরনের বিয়ের মধ্যে বর্তমানে শুধু ব্রাহ্ম ও অসুর বিয়ে প্রচলিত আছে। বাকী ৬ ধরনের বিয়ে অবলুপ্ত হয়ে গেছে। বাঙালী হিন্দুদের মধ্যে ‘ব্রাহ্মমতে’ বা ‘অসুর’ মতে বিয়ের পরিবর্তে ‘দানে’ বা ‘পণে’ বিয়ে বলা হয়।
COMMENTS