করদাতা আয় বছরে তার মোট আয়ের বিবরণসহ নির্ধারিত ফর্মে যে তথ্য উপ-করকমিশনারের নিকট দাখিল করেন তাকে আয়কর রিটার্ন বা আয়ের বিবরণী বলা হয়। উপ-কর কম...
করদাতা আয় বছরে তার মোট আয়ের বিবরণসহ নির্ধারিত ফর্মে যে তথ্য উপ-করকমিশনারের নিকট দাখিল করেন তাকে আয়কর রিটার্ন বা আয়ের বিবরণী বলা হয়। উপ-কর কমিশনারের অফিসে এবং বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে আয়কর রিটার্নের নির্ধারিত ফরম পাওয়া যায়। আপনি যদি নিবাসী হন তবে আপনার বাসস্থান বা কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট উপ-কর কমিশনারের নিকট রিটার্ন দাখিল করবেন। আর যদি অনিবাসী হন তাহলে নিকটস্থ উপ-কর কমিশনারের নিকট এবং বিদেশে অবস্থান করলে বাংলাদেশের দূতাবাসে আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন।
এছাড়াও আয়কর রিটার্ন দাখিলের নির্দিষ্ট সময়-সীমা রয়েছে। উপরোক্ত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল না করতে পারলে জরিমানাসহ শাস্তির বিধানও রয়েছে।
ফলে, আমি এখানে আয়কর রিটার্ন ও তৎসংশ্লিষ্ট শাস্তি সমূহ আলোচনা করব। আশা করি আপনারা উপকৃত হবেন।
Income tax return and related penalties
আয়কর রিটার্ন ও তৎসংশ্লিষ্ট শাস্তি সমূহ
প্রত্যেক করদাতার জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের ৭৫ ধারাতে আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এ সময় সীমা নিম্নরুপঃ
কোম্পানীর ক্ষেত্রে
করদাতা যদি কোম্পানী হয়ে তবে আয় বছর সমাপ্তির পরবর্তী ১৫জুলাই এর মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। কিন্তু কোম্পানীর আয় বছর যদি ভিন্নরুপ হয়, তবে আয় বছর শেষ হবার ৬ মাসের মধ্যেই কোম্পানীকে আয়কর বিবরণী দাখিল করতে হবে।
অন্যান্য করদাতা
কোম্পানী ব্যতীত অন্যান্য শ্রেণীর করদাতাগণকে তাদের আয় বছর শেষ হবার ঠিক পরবর্তী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আয়ের বিবরণী দাখিল করতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অবশ্য এই সময়-সীমা বৃদ্ধি করতে পারেন।
এই সময়-সীমার মধ্যে কোন করদাতা যদি আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে না পারেন তবে যুক্তিসঙ্গত ও গ্রনণযোগ্য কারণ দেখাতে পারলে ডেপুটি কর কমিশনার এই সময়-সীমা সর্বাধিক ৩ মাস পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারেন। এর মধ্যেও আয় বিবরণী দাখিল করা সম্ভব না হলে প্রয়োজনবোধে পরিদর্শী যগ্ম কর কমিশনারের অনুমোদনক্রমে ডেপুটি কর কমিশনার প্রয়োজনীয় সময় বৃদ্ধি করতে পারেন।
অতঃএব, দেখা যায় যে, প্রয়োজন বোধে একজন ডেপুটি কমিশনার নিজ ক্ষমতাবলে তিন মাস পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করতে পারেন, কিন্তু এর বেশি সময় বৃদ্ধি করতে হলে পরিদর্শী যুগ্ম কমিশনারের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
আয়কর দাখিল না করার জন্য জরিমানা
কোন করদাতা কোন কারণ ছাড়া আয়কর রিটার্ন দাখিল না করলে ডেপুটি কর কমিশনার অনুর্ধ্ব ১,০০০/- টাকা পর্যন্ত জরিমানা ধার্য করতে পারেন। জরিমানা করার পরেও যদি অবস্থার পরিবর্তন না হয় অর্থাৎ যদি খেলাপ চলতে থাকে, তবে সেই খেলাপকারীকে প্রত্যেক দিনের জন্য পঞ্চাশ টাকা হিসেবে অতিরিক্ত জরিমানা দিতে হবে। এভাবে একজন করদাতা কর্তৃক আয়ের বিবরণী দাখিল না করার দায়ে এবং চলমান খেলাপকারী করদাতা (Assessee continnuing default) হিসেবে অভিযুক্ত করার জন্য ডেপুটি কমিশনার ১২৪ ধারার বিধান মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।
আয়ের তথ্যাদি গোপন করার জন্য জরিমানা
অধ্যাদেশের ১২৮ ধারায় আয় গোপন করার জন্য জরিমানার বিধান করা হয়েছে। উক্ত ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোন করদাতা যদি তার আয়ের বিবরণী প্রস্তুত করতে গিয়ে প্রকৃত তথ্যাদি গোপন করেন, কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করেন, কিংবা কর ফাঁকি দিবার উদ্দেশ্যে কোন স্থাবর সম্পত্তির বিক্রিমূল্য কম করে দেখান, তবে ডেপুটি কর কমিশনার, অ্যাপিলেট যুগ্ম কমিশনার তাদের নিজ নিজ ক্ষমতায় উক্ত করদাতার উপর জরিমানা ধার্য করতে পারেন।
উক্ত করদাতার মিথ্যা বিবরণীর দ্বারা করদাতা যত টাকা আয়কর ফাঁকি দিতে পারতেন তার আড়াই গুণ পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে। অধিকন্তু, যেক্ষেত্রে স্ব-নির্ধারণী পদ্ধতীর মাধ্যমে করদাতা মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করে প্রকৃত আয় গোপন করেন সেক্ষেত্রে ডেপুটি কমিশনার আড়াই গুণ পর্যন্ত জরিমানা ধার্য করতে পারেন।
এভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল না করার জন্য এবং আয়ের বিবরণ গোপন করার জন্য আয়কর অধ্যাদেশের ১২৪ ও ১২৮ ধারা মোতাবেক করদাতাকে জরিমানা করা হবে।
পরিশেষে এক কথা বলা যায় যে, একটি রাষ্ট্র পরিচালনা করার জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন হয়। আর সেই অর্থ যোগানদানের অন্যতম উপায় হলো কর। ফলে, সঠিকভাবে কর আদায়ের জন্য আইনও প্রণীত হয়েছে। সুতরাং কর ফাঁকি দেওয়ার কোন সুযোগ নাই।
COMMENTS