একজন মুসলমান ব্যক্তি জীবিত অবস্থায় তার সম্পদ ইচ্ছামত দান বা উইল করতে পারে। তবে, মহানবী (সাঃ) এর নির্দেশ অনুসারে জীবদ্দশায় সম্পত্তি বন্টন করা...
একজন মুসলমান ব্যক্তি জীবিত অবস্থায় তার সম্পদ ইচ্ছামত দান বা উইল করতে পারে। তবে, মহানবী (সাঃ) এর নির্দেশ অনুসারে জীবদ্দশায় সম্পত্তি বন্টন করা হলে মেয়ে ও ছেলে সমান অংশ পাবে। পক্ষান্তরে, কোন মুসলমান ব্যক্তি মারা যাওয়ার পরে সম্পত্তি বন্টন করা হলে মেয়েরা ছেলেদের অর্ধেক অংশ পাবে। ফলে, ফারায়েজ বা উত্তরাধিকার সম্পর্কিত জ্ঞানকে বলা সমস্ত জ্ঞানের অর্ধেক।
সুতরাং আমি এখানে হানাফী উত্তরাধিকার আইনের মূলনীতি সমূহ সবিস্তারে আলোচনা করব। আশা করি আপনারা উপকৃত হবেন।
Principles of Hanafi inheritance law
হানাফী উত্তরাধিকার আইনের মূলনীতি
সম্পত্তি উত্তরাধিকার যোগ্য হতে হবেঃ
কোন মুসলমানের মৃত্যূ হলে তার ত্যক্ত সম্পত্তি হতে নিম্নক্রমানুযায়ী ব্যয় করতে হবেঃ
- তার দাফন ও মৃত্যূশয্যায় ব্যয়িত অর্থ পরিশোধ।
- প্রবেট সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা পত্র বা উত্তরাধিকারের প্রমাণপত্র গ্রহণের জন্য ব্যয়িত অর্থ পরিশোধ;
- কোন শ্রমিক, শিল্পি বা গৃহভৃত্য উক্ত ব্যক্তির মৃত্যূর পূর্বে ৩ মাসের মধ্যে কোন পরিশ্রম করে থাকলে সে পারিশ্রমি পরিশোধ করতে হবে।
- মৃত ব্যক্তির অন্যান্য ঋণ থাকলে এবং
- মৃত ব্যক্তির উইল থাকলে উল্লেখিত খাতে পরিশোধের পর অবশিষ্ট সম্পত্তির অনধিক এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত উইল কার্যকরী করতে হবে।
উপরোক্ত সকল খরচ মেটানোর পর যে সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকবে তা বৈধ ওয়ারিশগণের মধ্যে উত্তরাধিকার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
উত্তরাধিকারের সৃষ্টি
সম্পত্তির মালিকের মৃত্যূর পরেই তার বৈধ ওয়ারিশগণের উক্ত সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার সৃষ্টি হবে। কাজেই কোন ব্যক্তির মৃত্যূর পূর্বে তার সম্পত্তিতে তার ওয়ারিশগণের কোন অধিকার সৃষ্টি হয় না।
উত্তরাধিকারে বাধা
সিরাজিয়া গ্রন্থে উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হওয়া ৪টি কারণ বর্ণিত আছে। যথাঃ
- নরহত্যা;
- দাসত্ব;
- ধর্মের পার্থক্য;
- আনুগত্যের পার্থক্য।
উপরোক্ত বাধা সমূহের মধ্যে দ্বিতীয় বাধাটি , ১৮৪৩ সালের ৫ নম্বর আইন Indian Slavery Act, (1843) দ্বারা দুর করা হয়েছে; তৃতীয় বাধাটি ১৮৫০ সালের ২১ নম্বর আইন The Caste Disabilities Removal Act, (1850) দ্বারা দুর করা হয়েছে। আর চতুর্থ নম্বর বাধা ইসলামী রাষ্ট্র না হলে কার্যকর হয় না। ফলে, বর্তমানে একটি মাত্র বাধা তথা নরহত্যার কারণে উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হতে হয়।
প্রতিনিধিত্বের মতবাদ
হানাফী আইনে উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্বের স্বীকৃতি পূর্বে ছিল না। কেণনা, এটা স্বীকৃত নীতি যে, নিকটতম ওয়ারিশ দুরবর্তী শ্রেণীকে বহিষ্কার করে। তবে, ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ এর মাধ্যমে প্রচলন করা হয়।
উত্তরাধিকারের শ্রেণী
সুন্নী আইনে উত্তরাধিকার তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে। যথাঃ
- Sharer (অংশীদার);
- Residuary (অবশিষ্টভোগী);
- Distant Kindred (দূরবর্তী আত্মীয়)।
অংশীদার: কুরআন মাজিদে এদের অংশ নির্দিষ্ট করা হয়েছে। তাই এদেরকে কুরআনী উত্তরাধিকার বলা হয়। উত্তরাধিকারীগণের মধ্যে এরা প্রথম শ্রেণীভূক্ত। এদের সংখ্যা ১২ জন- ৮ জন মহিলা ও ৪ জন পুরুষ। রক্ত সম্পর্কিত ও বিয়ের দ্বারা সম্পর্কিত এ দু’শ্রেণীর আত্মীয় অংশীদারে শ্রেণীভূক্ত। এরা হচ্ছে-
- স্বামী/স্ত্রী
- পিতা;
- পিতার পিতা;
- মাতা;
- মাতার মাতা;
- পিতার মাতা;
- কন্যা;
- পুত্রের কন্যা;
- সহোদর ভগ্নি;
- বৈমাত্রেয় ভগ্নি;
- বৈপিত্রেয় ভ্রাতা;
- বৈপিত্রেয় ভগ্নি।
অবশিষ্টভোগী: অংশীদারদের নির্দিষ্ট অংশ বন্টনের পর রক্ত সম্পর্কিত কতিপয় ব্যক্তির মধ্যে অবশিষ্ট সম্পত্তি বন্টন করা হয়। প্রকৃতপক্ষে এরা সিংহভাগ পেয়ে থাকে। অবশিষ্টভোগীদের মধ্যে নিম্নোক্ত ব্যক্তিবর্গ অন্তর্ভূক্তঃ
- পুত্র; কন্যা (পু্ত্রের সাথে) পুত্রের পুত্র, পুত্রের কন্যা, এভাবে যতই নিম্নগামী হোক;
- পিতা, পিতার পিতা যতই উর্ধ্বগামী হোক;
- সহোদর ভাই, সহোদর ভগ্নি (ভাইয়ের সাথে);
- বৈমাত্রেয় ভ্রাতা, বৈমাত্রেয় ভগ্নি (ভ্রাতার সাথে);
- সহোদর ভাই এর পুত্র, পুত্রের পুত্র, এভাবে নিম্নগামী;
- পিতার সহোদর ভাই, তার পুত্র এভাবে নিম্নগামী;
- পিতার বৈমাত্রেয় ভাই, তার পুত্র এভাবে নিম্নগামী।
দূরবর্তী আত্মীয়: অংশীদার বা অবশিষ্টভোগী শ্রেণী উত্তরাধিকার অবর্তমানে দূরবর্তী আত্মীদের মধ্যে সম্পত্তি বন্টন করা হয়। এরা তৃতীয় শ্রেণীভূক্ত ও সবাই (Cognate)। এগুলি চার শ্রেণীতে বিভক্তঃ
- অংশীদার ও অবশিষ্টভোগী ব্যতীত মৃত ব্যক্তির বংশধরগণ;
- অংশীদার ও অবশিষ্টভোগী ব্যতীত মৃত ব্যক্তির পূর্ব পুরুষগণ;
- অংশীদার ও অবশিষ্টভোগী ব্যতীত মৃত ব্যক্তির পিতা মাতার বংশধরগণ;
- অংশীদার ও অবশিষ্টভোগী ব্যতীত মৃত ব্যক্তির নিকটতম পিতামহ মাতামহীদের বংশধরগণ।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে অনুমিত হয় যে, হানাফী উত্তরাধিকারের মূলনীতিগুলি অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও যথার্থ।
COMMENTS