বাংলাদেশের চুক্তি আইনে বলা হয়েছে যে, পরস্পরের মধ্যে প্রতিদান সৃষ্টি করতে পারে এরুপ প্রতিশ্রুতিকে সম্মতি বলে। পক্ষান্তরে, চুক্তি আইনের ২(জ) ...
বাংলাদেশের চুক্তি আইনে বলা হয়েছে যে, পরস্পরের মধ্যে প্রতিদান সৃষ্টি করতে পারে এরুপ প্রতিশ্রুতিকে সম্মতি বলে। পক্ষান্তরে, চুক্তি আইনের ২(জ) ধারাতে বলা হয়েছে যে, আইনে বলবৎযোগ্য সম্মতিই হচ্ছে চুক্তি।
বাহ্যিকভাবে, সম্মতি ও চুক্তি একই মনে হলেও এতদ্ভয়ের মধ্যে ব্যপক ব্যবধান রয়েছে। সুতরাং আমি এখানে আপনাদের সুবিধার্থে উভয়ে মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা তুলে ধরছি।
আসুন দেখা যাক এদের মধ্যে কি কি পার্থক্য রয়েছে।
The distinction between agreement and contract
চুক্তি ও সম্মতির মধ্যে পার্থক্য
একরারের ইংরেজি প্রতিশব্দ (Agreement) এবং চুক্তির প্রতিশব্দ (Contract) এবং দুটি শব্দই বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ও অন্যান্য আর্থিক লেনেদেনে বহুল প্রচলিত। আপাতদৃষ্টিতে এগুলি একই অর্থ বোধক প্রতীয়মান হয়। কিন্তু আইনগত দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্লেষণ করলে এদের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এগুলি নিম্নরুপঃ
(১) ১৮৭২ সালের চুক্তি আইনের ২(ক) ধারায় একরারের এবং ২(জ) ধারায় চুক্তির সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। কাজেই চুক্তি আইনে এদের পৃথক সত্তা স্বীকৃত হয়েছে।
(২) প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী পরস্পরের মধ্যে প্রতিদান গঠন করতে পারে এরুপ প্রতিশ্রুতিগুচ্ছকে একরার বলে। পক্ষান্তরে, যে সকল একরার আইনে বলবৎযোগ্য সেগুলি চুক্তি।
(৩) প্রদত্ত সংজ্ঞা হতে বোঝা যায় যে, একরার চুক্তি পূর্ববর্তী পর্যায় বা চুক্তির ভিত্তি। অপরদিকে, চুক্তি একরারের পরবর্তী পর্যায়। অর্থাৎ একরার হচ্ছে শ্রেণীবর্গ এবং চুক্তি হচ্ছে শাখা।
(৪) কোন এক পক্ষ অপর পক্ষের নিকট কোন কাজ করা বা করা হতে বিরত থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করলে এবং অপর পক্ষ এত সম্মত হলে তাদের মধ্যে এক প্রতিশ্রুতির (Promise) সৃষ্টি হয়। এই প্রতিশ্রুতির সমর্থনে যদি পারস্পারিক প্রতিদান হয়ে থাকে তবে তা অঙ্গীকার বা একরার (Agreement) পরিণত হয়। পক্ষান্তরে, এইরুপ অঙ্গীকার যদি চুক্তি আইনের ১০ নম্বর ধারায় বর্ণিত উপাদানগুলি বর্তমান থাকে তবে তা চুক্তিতে পরিণত হয়। উক্ত ধারার বিধান মতে, অঙ্গীকার ছাড়াও যে সকল উপাদান প্রয়োজন তা হচ্ছে - পক্ষগণের স্বাধীন সম্মতি, পক্ষগণের আইনগত যোগ্যতা, চুক্তির বৈধ উদ্দেশ্য ও প্রচলিত কোন আইনে এরুপ চুক্তি বাতিল ঘোষণা করা হয় নাই এমন।
(৫) অতঃএব, একরারের সৃষ্টি হয় পণযুক্ত পারস্পারিক প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে। পক্ষান্তরে, চুক্তির সৃষ্টি হয় আইনের দ্বারা বলবৎযোগ্য সম্মতির মাধ্যমে।
(৬) একরার হচ্ছে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির কোন এক বিষয়ে একই অর্থে ঐক্যমত পোষণ। পক্ষান্তরে, চুক্তি হচ্ছে পক্ষগণের ঐক্যমত ও পারস্পারিক আইনগত বাধ্য বাধকতা (Obligation)।
(৭) একরারের অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে প্রস্তাব, গ্রহণ ও প্রদিদান। চুক্তির প্রয়োজনীয় উপাদান হচ্ছে প্রস্তাব, গ্রহণ ও বৈধ প্রতিদান ছাড়াও পক্ষগণের স্বাধীন সম্মতি, আইনগত সামর্থ, বৈধ উদ্দেশ্য এবং অন্য কোন আইনে নিষিদ্ধ নয় এমন।
(৮) শুধুমাত্র একরার আইনের দৃষ্টিতে মূল্যহীন। কেণনা, এতে কোন আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকে না। উদাহরণ স্বরুপঃ “ক” যদি “খ” কে বলে চলো সিনেমা দেখতে যায় এবং “খ” উক্ত প্রস্তাব গ্রহন করে তবে তাদের মধ্যে এক প্রতিশ্রুতির সৃষ্টি হয় এবং এর সমর্থনে যদি পারস্পারিক প্রতিদান থাকে তবে তাদের মধ্যে একরারের সৃষ্টি হয়। কিন্তু এতে আইনগত কোন বাধ্যবাধকতা থাকে না। তাই আইন বলে ইহা কার্যকর করা যায় না।
যে সকল একরারে আর্থিক লেনদেন জড়িত, সেক্ষেত্রে আইনগত বাধ্যাবাধকতার সৃষ্টি হয় এবং তা আদালতের মাধ্যমে কার্যকর করা যায়। “ক” যদি “খ” এর নিকট তার সাইকেলটি দুই হাজার টাকায় বিক্রয় করত প্রস্তাব দেয় এবং “খ” এতে সম্মত হয় তবে এক্ষেত্রে আইনগত বাধ্যবাধকতার সৃষ্টি করে।
(৯) একরার কোন অধিকার ও দায় দায়িত্বের সৃষ্টি করে না। কেণনা এটা পক্ষগণের মতৈক্যের অভিব্যক্তি।
পক্ষান্তরে, চুক্তি আইনগত অধিকার ও দায় দায়িত্ব সৃষ্টি করে, কেণনা তা আইনের নির্দেশ মত গঠন করা হয়।
(১০) একরারের পরিধি চুক্তির পরিধি হতে তুলনামূলক ভাবে ব্যপকতর।
(১১) একরার চুক্তির উপর নির্ভরশীল নয়, অর্থাৎ চুক্তি ছাড়াই একরার গঠন করা যায়। কিন্তু চুক্তি একরারের উপর নির্ভরশীল, অর্থাৎ একরার চুক্তির পূর্বশর্ত। কাজেই একরার ব্যতীত চুক্তি গঠন সম্ভব নয়। তাই বলা হয়েছে যে, সকল চুক্তিই সম্মতি কিন্তু সকল সম্মতি চুক্তি নয়।
COMMENTS