প্রতিটি অপরাধের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং সেই অনুযায়ী অপরাধের প্রতিকারও রয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন অপরাধের জন্য আদালতও ভিন্ন রয়েছে। আজকে আমি এখা...
প্রতিটি অপরাধের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং সেই অনুযায়ী অপরাধের প্রতিকারও রয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন অপরাধের জন্য আদালতও ভিন্ন রয়েছে। আজকে আমি এখানে টর্ট ও অপরাধের মধ্যে পার্থক্য সমূহ তুলে ধরার চেষ্টা করব।
The distinction between Tort and Crime
টর্ট ও অপরাধের মধ্যে পার্থক্য
টর্ট ও ফৌজদারী অপরাধ উভয়ই আইনের দৃষ্টিতে অন্যায় ও প্রতিকারযোগ্য। পুরাকালে এদের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য পরিলক্ষিত হতো না, কিন্তু অধুনাকালে অন্যায়ের প্রকৃতি, মাত্রা, মামলার পদ্ধতি ও প্রতিকার এদের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য নির্দেশ করে। এগুলি নিম্নরুপঃ
(১) টর্ট হচ্ছে দেওয়ানী প্রকৃতির ব্যক্তিগত অপরাধ যা শুধু ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু ফৌজদারী অপরাধ সামাজিক ও ক্ষতিকর অন্যায় এবং এর প্রভাব সমগ্র সমাজের উপর বিস্তার করে।
(২) টর্টের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিশেষের অধিকার ক্ষুন্ন হয়। ফৌজদারী অপরাধের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিশেষের ক্ষতি হলেও এতে সামাজিক শান্তি সু-শৃংখলা বিনষ্ট করে এবং রাষ্ট্র তথা জনগণের স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়।
(৩) টর্টের ক্ষেত্রে কেবল ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিই কেবল মামলা করতে পারে। পক্ষান্তরে, ফৌজদারী অপরাধের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির পক্ষে রাষ্ট্রের নামে মামলার উদ্ভব হয়ে থাকে, যদিও ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষ অভিযোগ আনতে পারে।
(৪) টর্টের প্রতিকার পাওয়া যায় দেওয়ানী আদালতে। অপরদিকে, ফৌজদারী অপরাধের প্রতিকার পাওয়া যায় ফৌজদারী আদালতে।
(৫) টর্টের মামলা দেওয়ানী মামলা হিসেবে পরিচিত। কিন্তু ফৌজদারী অপরাধের মামলা ফৌজদারী হিসেবে পরিচিত।
(৬) টর্টের ক্ষেত্রে মামলা আনয়নকারী পক্ষকে বলা হয় (Plaintiff) বাদী এবং বিরুদ্ধ পক্ষকে বলা হয় (Defendant) বিবাদী বা প্রতিবাদী। পক্ষান্তরে, ফৌজদারী মামলা আনয়নকারী পক্ষ (Complainant) ফরিয়াদী বা অভিযোগকারী, বিরুদ্ধ পক্ষ (Accused) আসামী বা অভিযুক্ত হিসেবে পরিচিত।
(৭) টর্টের ক্ষেত্রে বাদীকে প্রমাণ করতে হয় যে, বিবাদী তার আইনগত অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছে। কিন্তু ফৌজদারী অপরাধের ক্ষেত্রে অভিযোগকারীকে প্রমাণ করতে হয় যে, আসমী পক্ষ তার উপর দন্ডনীয় অপরাধ করেছে।
(৮) টর্টের প্রতিকার পাওয়া যায় সাধারণতঃ আর্থিক ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে। অপরদিকে, ফৌজদারী অপরাধের জন্য দন্ডবিধির বিধান মতে অপরাধীর সাজা দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষ কোন প্রতিকার পায় না।
(৯) টর্টের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ ছাড়াও প্রয়োজন বোধে নিষেধাজ্ঞা মনজুর করা হয় কিংবা প্রতিরোধ বা বাধা নিষেধের সুযোগও দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে, ফৌজদারী অপরাধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শাস্তি দেওয়া হয়, যেমন বেত্রদন্ড, কারাদন্ড, ও মৃত্যূদন্ড, যদিও আর্থিক জরিমানাও একটি শাস্তি হিসেবে দেওয়া হয়ে থাকে।
(১০) টর্টের অভিযোগ প্রমাণিত হলে অপকর্মকারী (Liable) দায়ী হিসেবে চিহ্নিত হয়। আর ফৌজদারী অপরাধ প্রমাণিত হলে অপকর্মকারী অপরাধী (Accused) বা দোষী হিসেবে আখ্যায়িত হয়।
(১১) টর্টের অভিযোগ প্রমাণিত হলে দায়ী ব্যক্তিকে সাধারণতঃ আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। কিন্তু ফৌজদারী অপরাধের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিধি অনুযায়ী শাস্তি পেতে হয়।
(১২) টর্টের আওতাভূক্ত অপকর্মগুলি মীমাংসাযোগ্য বিধায় বাদী ও বিবাদীর মধ্যে সমঝোতা আসলে টর্টের মামলা প্রত্যাহার করা যায়। অন্যদিকে, দন্ডবিধিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোন ফৌজদারী অপরাধগুলি মীমাংসাযোগ্য এবং কোন অপরাধগুলি মীমাংসাযোগ্য নয় এবাং সামাজিক শৃংখলার স্বার্থেই এ সকল মামলা প্রত্যাহারযোগ্য নয়।
(১৩) তামাদী আইনের প্রয়োগের দ্বারা নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হলে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ টর্টের প্রতিকার হতে বঞ্চিত হয়। কিন্তু ফৌজদারী অপরাধের ক্ষেত্রে তামাদী আইনের প্রয়োগ চলে না। কোন কোন ক্ষেত্রে একই কার্য টর্ট ও ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে- যেমন,
- Assault (আক্রমন);
- Battery (আঘাত);
- Defamation (মানহানি);
- Trespass (অনধিকার হস্তক্ষেপ);
- Malicious prosecution (বিদ্বেষপ্রসূত মামলা);
- False imprisonment (কৃত্রিম বন্দী)।
এ সকল ক্ষেত্রে দেওয়ানী অথবা ফৌজদারী অথবা উভয় আদালতে একই সাথে প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে। কোন কোন কার্য শুধু ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়- যেমন, গণ উৎপাত, (Public Nuisance) এ ক্ষেত্রে বাদীর বিশেষ ক্ষতি না হলে টর্টের মামলা করা যায় ন।
পক্ষান্তরে, কোন কোন কার্য কেবল টর্ট হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে, ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে নয়- যেমন, Trespass to land by inevitable mistake বা অনিবার্য ভূলক্রমে অন্যের অঙ্গনে প্রবেশ করা।
সাধারণতঃ ফৌজদারী অপরাধের বিষয়গুলি টর্টের ক্ষেত্রে বিচার্য নয়, তবে টর্টের জন্য দায়ী হলে তা ফৌজদারী অপরাধের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক হতে পারে।
COMMENTS