ইমাম আবু হানিফার (রহঃ) এর মতে, ওয়াকফ এর অর্থ হলো কোন নির্দিষ্ট বস্তুতে ওয়াকিফের মালিকানা আটক করে তার আয় দরিদ্রদের জন্য দান বা অপর কোন নেক উদ...
ইমাম আবু হানিফার (রহঃ) এর মতে, ওয়াকফ এর অর্থ হলো কোন নির্দিষ্ট বস্তুতে ওয়াকিফের মালিকানা আটক করে তার আয় দরিদ্রদের জন্য দান বা অপর কোন নেক উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা।
এছাড়া, ১৯১৩ সালের মুসলমান ভ্যালিডেটিং অ্যাক্ট ও ১৯৬২ সালের ওয়াকফ অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী ওয়াকফ বলতে ধর্মীয় ও দাতব্য উদ্দেশ্যে ইসলাম ধর্ম পালনকারী কোন ব্যক্তি কর্তৃক স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির স্থায়ী উৎসর্গ করণ বুঝায়। ওয়াকফ সাধারণঃ দুই প্রকার তথা ওয়াকফ আ’ম ও ওয়াকফ আল-আওলাদ বা সন্তানদের উদ্দেশ্যে ওয়াকফ করা।
অন্যদিকে, একজনের ভোগ বা ব্যবহারের নিমিত্তে অন্য ব্যক্তির অনুকূলে সম্পত্তি অর্পণ করাকে ট্রাষ্ট বলে।
সুতরাং ওয়াকফ ও ট্রাষ্টের মধ্যে অর্থগত, গঠনগত এবং উদ্দেশ্যগতভাবে অনেক পার্থক্য রয়েছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক উভয়ের মাঝের পার্থক্য সমূহ।
The distinction between Waqf and Trust
ওয়াকফ এবং ট্রাস্টের মধ্যে পার্থক্য
ওয়াকফ ও ট্রাষ্টের মধ্যে বেশ কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। কেণনা, উভয় ক্ষেত্রে সম্পত্তি অন্যের সুবিধার্থে দান করা হয়। যাদেরকে বলা হয় সুবিধাভোগী। কিন্তু এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য বেশি এগুলি নিম্নরুপঃ
১. একটি ওয়াকফ সাধারণতঃ আখেরাতে পুণ্য লাভের উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়। তাই এর উৎস হচ্ছে ধর্মীয় বা স্বর্গীয়।
ট্রাষ্টে এরুপ কোন উদ্দেশ্য থাকে না। জনগণের উপকারার্থে কিংবা মনোনীত ব্যক্তিদের উপকারার্থে ট্রাষ্ট করা হয়।
২. যিনি ওয়াকফ করেন তাকে বলা হয় ওয়াকিফ, যিনি তা দেখাশুনা করেন তাকে বলা হয় মুতাওয়াল্লি এবং যারা এর ফল ভোগ করে তাদেরকে বলা হয় উপকারভোগী।
ট্রাষ্টের ক্ষেত্রে যিনি তা সৃষ্টি করেন তাকে বলা হয় Settlor বা ট্রাষ্টকারী, যিনি দেখাশুনা করেন তাকে বলা হয় Trustee বা ট্রাষ্টি, িএবং যার উপকারার্থে করা হয় তিনি হচ্ছেন Beneficiary বা উপকারভোগী।
৩. মুসলিম আইনের বিধি-বিধানের উপর ভিত্তি করে ওয়াকফের সৃষ্টি এবং বর্তমানে বাংলাদেশে ১৯১৩ সালের মুসলিম ভ্যালিডেটিং অ্যাক্ট এবং ১৯৬২ সালের ওয়াকফ অর্ডিন্যান্স দ্বারা ইহা পরিচালিত হয়।
পক্ষান্তরে, ব্রিটিশ আইন ব্যবস্থায় ইকুইটি সৃষ্ট ট্রাষ্টের বিধি-বিধানের আলোকে প্রবর্তিত ১৮৮২ সালের ট্রাষ্ট আইন দ্বারা ট্রাষ্ট পরিচালিত হয়।
৪. ওয়াকফকৃত সম্পত্তি আল্লাহর নামে অর্পিত হয়। কিন্তু ট্রাষ্টকৃত সম্পত্তি ট্রাষ্টির বরাবরে ন্যস্ত হয়।
৫. একটি ওয়াকফ স্থায়ী, অপ্রত্যারযোগ্য এবং অহস্তান্তরযোগ্য। পক্ষান্তরে, একটি ট্রাষ্ট চিরস্থায়ী নাও হতে পারে এবং তা প্রত্যাহারযোগ্য বা হস্তান্তরযোগ্য হতে পারে।
৬. ওয়াকফের ক্ষেত্রে Cy-press (সাইপ্রেস) নীতি প্রয়োগ করা যায় এবং নিকটবর্তী উদ্দেশেও উক্ত সম্পত্তি ব্যবহৃত হতে পারে।
দাতব্য ট্রাষ্টের ক্ষেত্রে সাইপ্রাস নীতি প্রয়োগ করে নিকটবর্তী উদ্দেশ্যে ট্রাষ্টকৃত সম্পত্তি ব্যবহৃত হতে পারে।
৭. হানাফী আইনের বিধানে সামান্য কিছু উপকার ছাড়া ওয়াকিফ স্বয়ং নিজের জন্য কোন উপকার সংরক্ষণ করতে পারে না। কিন্তু ট্রাষ্ট সৃষ্টিকারী নিজের উপকারের জন্য তা করতে পারেন।
পরিশেষে বলা যায় যে, ওয়াকফ করার সময় ওয়াকিফের মূলতঃ নিয়ত থাকে ছাওয়াবের। পক্ষান্তরে, ট্রাষ্ট জনকল্যাণকর হলেও উহাতে এরুপ কোন উদ্দেশ্য থাকে না।
COMMENTS