ইসলামে দেনমোহরের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্ত্রীর মর্যদার প্রতিক হিসেবে ইহা পরিশোধ করা স্বামীর জন্য বাধ্যতামূলক। স্ত্রী ইহা মওকুফ করত...
ইসলামে দেনমোহরের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্ত্রীর মর্যদার প্রতিক হিসেবে ইহা পরিশোধ করা স্বামীর জন্য বাধ্যতামূলক। স্ত্রী ইহা মওকুফ করতে পারে। তবে, মওকুফ অবাধ ও স্বেচ্ছায় হতে হবে। মওকুফ করা না হয়ে থাকলে ইহা একটি অনিশ্চিত ঋণ (Unsecured debt) হিসেবে গণ্য হবে।
প্রিয় পাঠক! আমি এখানে আপনাদের সুবিধার্থে দেনমোহর সংক্রান্ত খুটিনাটি বিষয়গুলি আলোচনা করব।
The law relating to dower
দেনমোহর সম্পর্কিত আইন
দেনমোহরের সহিত অনেক বিষয়ই জড়িত। ফলে, দেনমোহর সংক্রান্ত আলোচনায় যে বিষয়গুলি এখানে স্থান পাবে তা নিম্নরুপঃ
- দেনমোহরের সংজ্ঞা;
- দেনমোহরের পরিমাণ;
- দেন মোহরের প্রকারভেদ;
- তামাদী আইন;
- দেনমোহরের পরিবর্তে স্বামী সম্পত্তি দখলে রাখা;
- মোহরানা আদায়ের জন্য মামলা।
দেনমোহর কি?
প্রিয় পাঠক! দেনমোহর সম্পর্কে আইনবিদগণ বিভিন্নভাবে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। যেমন, মুসলিম আইন গ্রন্থাকার ডি. এফ. মোল্লার মতে, দেনমোহর হচ্ছে মুসলিম বিয়ে চুক্তির প্রতিদান স্বরুপ যা স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে প্রদেয়। চুক্তি আইন মতে, প্রতিদানের যে সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে সে মোতাবেক এ ক্ষেত্রে প্রতিদানের ব্যাখ্যা প্রদান করা হয় না। প্রকৃত পক্ষে মোহরানা হচ্ছে বিয়ে চুক্তির এমন এক অনুসঙ্গ স্বরুপ যা একজন স্বামী কর্তৃক তার স্ত্রীর সম্মানার্থে আইনতঃ কর্তব্য হিসেবে প্রদান করা হয়। মুসলিম বিয়ের ইহা একটি আবশ্যিক উপাদান।
দেন মোহরের পরিমাণ
দেনমোহরের সর্বোচ্চ কোন সীমা নাই। সুন্নী আইনে যে কোন পরিমাণ অর্থ নির্ধারণ করা যায় এ অর্থ যদিও স্বামীর ক্ষমতার উর্ধে থাকে। খেয়াল খুশিমত তালাক দিবার ব্যপারে বাধাদান করার উদ্দেশ্যে দেনমোহরের পরিমাণ সাধারণতঃ অধিক রাখা হয়। তবে, সর্বোচ্চ পরিমাণ না থাকলেও দেনমোহরের নিম্নতম সীমা রয়েছে। কোন ক্ষেত্রেই মোহরানা ১০ দিরহাম বা সমপরিমাণ অপেক্ষা কম হবে না। দেনমোহন বিয়ের আগে বা বিয়ের সময় অথবা বিয়ের পরে নির্ধারণ করা যায়। এছাড়া বিয়ের সময় পরিমাণ নির্ধারণ করা হলেও বিয়ের পরে যে কোন সময়ে তা বৃদ্ধি করা যায়।
সাধারণতঃ দেনমোহর নির্ধারণের সময় কনের পিতার বংশ মর্যদা, তার অপর বোন, ফুফুদের দেনমোহরের পরিমাণ, কনের গুণাবলী, স্বামীর সঙ্গতি ইত্যাদি বিবেচনা করে করা হয়।
দেনমোহরের প্রকারভেদ
মুসলিম আইনে দেনমোহর প্রধানতঃ দুই প্রকার-
- Promt Dower (তলবী);
- Defferred Dower (বিলম্বিত)।
তলবী মোহরানা স্ত্রী কর্তৃক চাওয়া মাত্রই স্বামী দিতে বাধ্য থাকে। এই মোহরানা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী তার দাম্পত্য দায়িত্ব পালন করতে ও সহবাসে অস্বীকৃতি জানাতে পারে। তবে দাম্পত্য মিলন যদি হয়েই থাকে তবুও এরুপ অস্বীকৃতি জানানোর অধিকার বিলুপ্ত হয়ে যায় না।
অপরদিকে, বিলম্বিত মোহরানার অর্থ স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক দ্বারা বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটলে কিংবা স্বামী বা স্ত্রীর মৃত্যূ ঘটলে এ অর্থ পরিশোধ করতে হয়।
দেনমোহর সম্পর্কিত তামাদী আইন
মোহরানার টাকা আদায় না হয়ে থাকলে স্ত্রী এবং তার মৃত্যূর পর তার উত্তরাধিকারগণ তা আদায়ের জন্য মামলা দায়ের করতে পারেন। ১৯০৮ সালের তামাদী আইনের ৩ নম্বর তফসীলের ১০৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে বিয়ে-বিচ্ছেদের তিন বছরের মধ্যে তলবী বা বিলম্বিত মোহরানা আদায়ের জন্য মামলা করা যায়।
দেনমোহরের পরিবর্তে মৃত স্বামীর সম্পত্তি দখলে রাখা
মোহরানা যেহেতু একটি ঋণ। ফলে, তা আদায়ের লক্ষ্যে আদালতের ডিক্রির মাধ্যমে মৃত স্বামীর সম্পত্তির উপর চার্জ সৃষ্টি করা যায়। কিন্তু স্বামীর কোন সুনির্দিষ্ট সম্পত্তিতে চার্জ সৃষ্টি করা যায় না। স্বামীর সম্পত্তি হতে অর্জিত অর্থ দ্বারা মোহরানা পরিশোধ হওয়া পর্যন্ত অধিকারে রাখতে পারবে। মোহরানা পরিশোধ হলে তা উত্তরাধিকারীদের নিকট ফিরিয়ে দিতে হবে।
মোহরানা আদায়ের জন্য মামলা
১৯৮৫ সালের পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশের আওতায় যে পারিবারিক আদালত গঠন করা হয়েছে সেই আদালতে মোহরানা আদায়ের জন্য মামলা দায়ের করতে হবে।
পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশের ৫ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে যে, ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশের বিধানাবলী সাপেক্ষে কোন পারিবারিক আদালতের নিম্নরুপ বিষয়াদির সকল বা যে কোনটির সাথে সম্পর্কিত বা তথা হতে উদ্ভুত যে কোন মোকাদ্দমা গ্রহণ, বিচার বা নিষ্পত্তি করার জন্য নিরঙ্কুশ এখতিয়ার থাকবে। যেমন-
- Divorce (বিবাহ বিচ্ছেদ);
- Restoration of marital rights (দাম্পত্য অধিকারসমূহ পুনরুদ্ধার);
- Dower (মোহরানা);
- Alimony (খোরপোষ);
- Child custody and supervision (শিশুদের অভিভাবকত্ব ও তত্ত্বাবধান)।
আশা করি প্রদত্ত আলোচনা হতে আপনারা নিশ্চয় উপকৃত হবেন।
COMMENTS