কোন ব্যক্তির কর্তৃত্বাধীন সকল বস্তুকে সম্পত্তি বুঝায়। ব্যপক অর্থে সম্পত্তি বলতে কোন ব্যক্তির স্বত্বাধিকারে আছে এমন স্থাবর বা অস্থাবর যে কোন ...
কোন ব্যক্তির কর্তৃত্বাধীন সকল বস্তুকে সম্পত্তি বুঝায়। ব্যপক অর্থে সম্পত্তি বলতে কোন ব্যক্তির স্বত্বাধিকারে আছে এমন স্থাবর বা অস্থাবর যে কোন বস্তুকে বুঝায়। তবে, এই সম্পত্তি অর্জনের নানা উপায় রয়েছে।
আমি আপনাদের সুবিধার্থে নিম্নে সেগুলি সবিস্তারে আলোচনা করব।
What are the modes of acquiring property?
সম্পত্তি অর্জনের পদ্ধতিগুলি কী কী?
স্যামন্ডের মতানুসারে আইন বিজ্ঞানে ৪ পদ্ধতিতে সম্পত্তি অর্জন করা যায়। এগুলি হলো-
- Possession বা দখল;
- Prescription বা প্রেসক্রিপশন;
- Agreement বা সম্মতি;
- Inheritance বা উত্তরাধিকার।
দখল (POSSESSION)
সম্পত্তিতে দখলের অধিকারই হচ্ছে মালিকানা অর্জনের সবেচেয়ে উৎকৃষ্ট উপাদান। দখলের অধিকার সম্পর্কে ফ্রেডারিক পুলক বলেন যে, “যখন কোন ব্যক্তির কোন বিষয় বস্তুর সহিত এরুপ সম্পর্ক থাকে যে, সে বস্তুটির উপর মানসিক কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে পারে এবং সে তা কার্যকর করতে সক্ষম তখনই এরুপ বস্তুর সাথে সেই ব্যক্তির সম্পর্ককেই দখল বলা হয়।
মালিকানা স্বত্বের বিষয়বস্তু মালিকের দখলে রাখার অধিকার েএবং তা থেকে অনধিকার প্রয়োগকারীকে বিতাড়িত করার অধিকারও তার রয়েছে। এভাবে দখলী স্বত্বের মাধ্যমেও এক ব্যক্তি মালিকানা অর্জন করতে পারে।
মালিকানাবিহীন কোন সম্পত্তির দখলদার, সমুদ্রের মাছ ধৃতকারী, আকাশের পাখি শিকারী, সংশ্লিষ্ট সম্পত্তিতে শুধু দখলের মাধ্যমে মালিকানা অর্জন করে থাকে।
ব্যবহারসিদ্ধ (PRESCRIPTON)
অপ্রতিরোধ্যভাবে ও নিরবচ্ছিন্নভাবে দীর্ঘকাল কোন সম্পত্তি ভোগ দখলের ফলে সেই সম্পত্তিতে উক্ত ব্যক্তির মালিকানা স্বত্ব অর্জিত হতে পারে। একে প্রেসক্রিপশন বা ব্যবহারসিদ্ধ অধিকার বলে। স্যামন্ডের মতে, “দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হলে একদিকে অধিকার সৃষ্টি হয় এবং অপরদিকে অধিকারের বিলোপ ঘটে।” এটাই হচ্ছে প্রেসক্রিপশন। বাংলাদেশে প্রযোজ্য ১৯০৮ সালের তামাদী আইনের ২৬ ধারায় বলা হয়েছে যে, যেক্ষেত্রে কোন গৃহে আলো বা বাতাসাসের প্রবেশ ও ব্যবহার অব্যাহতভাবে ২০ বছর যাবত অক্ষুন্ন রয়েছে এবং যেক্ষেত্রে কোন পথ বা জলস্রোত বা পানির ব্যবহার বা অন্য কোন সুখাধিকার ২০ বছর যাবৎ শান্তিপূর্ণভাবে ও অব্যাহতভাবে ভোগ করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে অনুরুপ আলো বাতাসের প্রবেশ, জলস্রোত পানির ব্যবহার অথবা অন্য কোন সুখাধিকার নিরঙ্কুশ ও অলংঘনীয় অধিকারে পরিণত হবে। একে ইজমেন্টও বলে।
তামাদী আইনের ২৮ ধারায় জবরদখল (Adverse Possession) সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, অন্যের সম্পত্তি জোরপূর্বক ১২ বছরের বেশি সময় দখলে রাখলে এবং এ সময়ের মধ্যে প্রকৃত মালিক দখল পুনরুদ্ধারের জন্য আদালতের শরণাপন্ন না হলে সম্পত্তির উপর জবর দখলকারীর স্বত্ব অর্জিত হয় আর প্রকৃত মালিকের স্বত্ব বিলুপ্ত হয়। তাই দেখা যায় প্রেসক্রিপশন দু’ধরনের। যথা-
- অধিকার সৃষ্টিকারী প্রেসক্রিপশন (Rights-creating prescription);
- অধিকার বিলোপকারী প্রেসক্রিপশ (Rights abolition prescription)।
সম্মতি (AGREEMENT)
সম্মতি হচ্ছে সম্পত্তি অর্জনের অন্যতম পদ্ধতি। প্যাটনের মতে, দুই বা ততোধিক ব্যক্তি তাদের মধ্যে আইনগত সম্পর্ক স্থাপনের সাধারণ অভিপ্রায়ে পারস্পারিক যোগাযোগের অভিব্যক্তি হচ্ছে সম্মতি। তবে, এই সম্মতি দু’ধরনের হতে পারে। যথা-
- স্বত্বনিয়োগ (Assignment)
- দান (Grant)।
স্বত্বনিয়োগ দ্বারা বর্তমান বিদ্যমান একজনের স্বত্ব অপরজনের নিকট হস্তান্তর করা হয়। দানের মাধ্যমে নতুন করে একটি স্বত্বের সৃষ্টি হয়। নদীতে জেগে উঠা এক খন্ড চরের ইজারা প্রদান করা হচ্ছে এ জাতীয় হস্তান্তর।
সম্মতি আবার আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক হতে পারে। লিখিত দলিল রেজিষ্ট্রি ও সত্যায়নের দ্বারা আনুষ্ঠানিক সম্মতির সৃষ্টি হয়। পক্ষান্তরে, মৌখিক সম্মতিকে অনানুষ্ঠানিক বলা হয়।
আইনের একটি প্রতিষ্ঠিত নীতি হচ্ছে (memo dat qui non habet) অর্থাৎ কোন ব্যক্তি তার নিজ স্বত্বের চেয়ে উত্তম স্বত্ব অন্যের নিকট হস্তান্তর করতে পারে না। সম্পত্তির মাধ্যমে হস্তান্তরের ক্ষেত্রেও এই নীতিটি সমভাবে প্রযোজ্য। তবে এর দুটি ব্যতিক্রম আছে। এগুলি নিম্নরুপঃ
- ন্যায়পর মালিকানা হতে আইনগত মালিকানার পার্থক্যের কারণে। তাই একজন ট্রাষ্টী যদি প্রতারণামূলক ভাবে ট্রাষ্ট সম্পত্তি বিক্রয় করে তবে হস্তান্তর গ্রহীতা এতে উত্তম স্বত্ব অর্জন করবে যদি সে মূল্যের বিনিময়ে এটা কিনে থাকে এবং ট্রাষ্ট সম্পর্কে সে অবগত না থেকে থাকে।
- মালিকানা হতে দখলের পার্থক্যের কারণে। কোন বস্তুর দখলদারকে ঐ বস্তুর মালিক মনে করে সরল বিশ্বাসে যদি কেউ তা করে থাকে তবে সে এতে উত্তম স্বত্ব অর্জন করবে। তাই একজন বাণিজ্যিক প্রতিনিধি তার দখলস্থিত সম্পত্তি হস্তান্তর করলে হস্তান্তর গ্রহীতা এতে উত্তম স্বত্ব অর্জন করে।
উত্তরাধিকার (INHERITANCE)
প্রাচীন কাল হতেই জীবিত ব্যক্তি উত্তরাধিকারবলে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে মালিকানা স্বত্ব অর্জন করে। যখন কোন ব্যক্তি মৃত্যূকালে পতিত হয় তখন তার কতিপয় স্বার্থ বহাল থাকে এবং কতিপয় স্বার্থ মৃত্যূর সাথে সাথে বিলুপ্ত হয়ে যায়। যেগুলি বহাল থাকে সেগুলি উত্তরাধিকারযোগ্য এবং উত্তরাধিকারীদের উপর ন্যস্ত হয়। মালিকানা স্বত্বগুলি কতিপয় ব্যতিক্রম সাপেক্ষে উত্তরাধিকারযোগ্য এবং ব্যক্তিগত অধিকারগুলি উত্তরাধিকারযোগ্য নয়। ব্যতিক্রমগুলি নিম্নরুপঃ
(ক) যৌথ মালিকানাঃ কোন সম্পত্তির যৌথ মালিকদের মধ্যে কেউ মারা গেলে তার অংশটি অন্যান্য জীবিত মালিকদের উপর বর্তায়, তার আইনগত উত্তরাধিকারদের উপর নয়।
(খ) ইজারাঃ কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে ইজারা দেয়া হয়ে থাকলে সে ব্যক্তির মৃত্যূর পর ঐ ইজারার পরিসমাপ্তি ঘটে।
COMMENTS