উত্তরাধিকার সূত্রে ইসলামী আইন অনুসারে, একজন মৃত ব্যক্তির ভাই/বোনদের উত্তরাধিকারের কিছু অধিকার দেওয়া হয়। এ ব্যপারে ইসলামী আইনের নীতি রয়েছে ...
উত্তরাধিকার সূত্রে ইসলামী আইন অনুসারে, একজন মৃত ব্যক্তির ভাই/বোনদের উত্তরাধিকারের কিছু অধিকার দেওয়া হয়। এ ব্যপারে ইসলামী আইনের নীতি রয়েছে যা ‘হিমারিয়া’ বা গাধার মামলা হিসেবে সুপরিচিত।
আমি আপনাদের জ্ঞাতার্থে (Donkey's Case) বা গাধার মোকাদ্দমা এখানে আলোচনা করছি। আশা করি আপনারা উপকৃত হবেন।
What is donkey case under Sharia Law?
শরীআ আইনে গাধার মামলা কী?
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উ’মর (রাঃ) এর খেলাফতের জমানায় তাঁর কাছে উত্তরাধিকার নিয়ে একটি সমস্যা উপস্থাপন করা হয়। মোকাদ্দমাটি নিম্নরুপঃ
“২ জন সহোদর ভাই, ২ জন বৈপিত্রেয় ভাইর এর সাথে মাতা ও স্বামী বর্তমান। স্বামী, মাতা, বৈপিত্রেয় ভাই সকলেই কুরআনিক অংশীদার এবং সহোদর ভাই অবশিষ্টভোগী।”
ইসলামী উত্তরাধিকার অনুযায়ী হযরত উ’মর (রাঃ) যে বন্টন নীতি দেন তা নিম্নরুপঃ
স্বামীর অংশ ১/২, মাতার অংশ ১/৬, ২ জন বৈপিত্রেয় ভাই এর অংশ ১/৩ অংশ। এদের অংশের যোগফল (১/২ + ১/৬ + ১/৩) = ১ । সুতরাং ২ জন সহোদর ভাই এর জন্য আর কোন অবশিষ্ট থাকে না।
তখন সহোদর ভাইয়েরা খলিফকাকে জানান যে, তারা মৃত ব্যক্তির আপন ভাই অথচ তারা কিছু পাবে না, কিন্তু মৃত ব্যক্তির বৈপিত্রেয় ভাইয়েরা পাবে এটা অযোক্তিক। খলিফা হযরত উ’মর (রাঃ) বললেন যে, সন্তান-সন্ততি না থাকার জন্য তার স্বামী ১/২, এবং একাধিক ভাই থাকার জন্য মাতা ১/৬ এবং সন্তান-সন্ততি এবং পিতা না থাকায় বৈপিতৃয় ভাইয়েরা ১/৩ অংশ কুরআনিক অংশ পেয়েছে। অতঃএব, অবশিষ্ট না থাকায় আপন ভাইয়েরা বঞ্চিত হয়েছে। কাজেই তাদের জন্য কিছু করার নাই।
সহোদর ভায়েরা আবার আরজ করলঃ “হে আমিরুল মুমিনীন, মৃত ব্যক্তির আপন ভাই হওয়ার জন্য যখন আমরা উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হচ্ছি, তখন না হয় আমাদের পিতা কোন ‘হিমারিয়া’ অর্থাৎ গাধা হতো তাহলে কি আমরা বৈপিতৃীয় ভাইদের সাথে উত্তরাধিকার পেতে পারি না?
এবার খলিফা বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েন ১/৩ অংশ সহোদর ভাই এবং বৈপিতৃীয় ভাইদের মধ্যে বন্টন করার নির্দেশ দেন। এ ঘটনা আল হিমারিয়া বা মোকাদ্দমা নামে খ্যাত। উক্ত ঘটনার এ নীতি প্রয়োগ করে স্বামী ১/২, মাতা ১/৬, ২ বৈপিতৃীয় ভাই এবং সহোদর ভাই ১/৩ অংশ (প্রতেক্যে ১/১২ অংশ) প্রদান করা হয়।
এই নীতিকে বলা হয় ‘হিমারিয়া’ নীতি। বিচার সম্পর্কীয় ন্যয়পরায়নতা ইসলামী আইনে ‘ইসতিহসান’ নামে পরিচিত। এই ইহতিসানের উপর ‘হিমারিয়া’ নীতি প্রতিষ্ঠিত।
তবে, এখানে লক্ষনীয় বিষয় হলো ‘হিমারিয়া’ নীতি কেবল মালিকী ও শাফিঈ মাযহাবের আইনবিদগণ অনুসরণ করে থাকেন।
পক্ষান্তরে, হানাফী ও হাম্বলির মতো অন্যান্য আইনবিদগণ ‘হিমারিয়া’ নীতিকে প্রত্যাখান করেছেন। কারণ তাদের অভিমত হলো যে, সহোদর ভায়েরা ‘হিমারিয়া’ এর জন্য আবেদন করার জন্য তারা স্বার্থপর।
এছাড়াও কেউ কেউ ‘হিমারিয়া’ কে মুশতরিক হিসাবে উল্লেখ করেছেন, যার অর্থ ১/৩ এর মধ্যে সহোদর ভাই এবং বৈপিতৃীয় ভাইদের অংশগ্রহণ। আবার কেউ কেউ এই নীতিকে যথাক্রমে হাজরিয়াহ এবং ইয়াম্মিয়াহ বলেছেন।
COMMENTS