বাক-স্বাধীনতা মানুষের মৌলিক অধিকার। ফলে, বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ নম্বর অনুচ্ছেদে বাক-স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। তবে, এই বাক-স্বাধীনতা মোটেও ...
বাক-স্বাধীনতা মানুষের মৌলিক অধিকার। ফলে, বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ নম্বর অনুচ্ছেদে বাক-স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। তবে, এই বাক-স্বাধীনতা মোটেও অবাধ নয়। কারণ, নিরাপত্তার খাতিরে মানহানিকর অপরাধের উপরে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি আইনগত সমর্থন ছাড়াই আপনার বিরুদ্ধে এমন ধরনের মিথ্যা ও মানহানিকর উক্তি প্রকাশ করে যাতে আপনার সম্মান সমাজের বিবেকসম্পন্ন মানুষের নিকট হেয় প্রতিপন্ন ও ক্ষুন্ন হয় এবং মানুষের মধ্যে আপনাকে বর্জন প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়, তবে তাকে টর্ট আইনের ভাষায় (Defamation) বা মানহানি বলে। অর্থাৎ অন্যের নাম ও যশে আঘাত করাই হচ্ছে মানহানি।
টর্ট আইনে যে সব অপরাধের কথা বলা হয়েছে তন্মধ্যে মানহানিও একটি দেওয়ানী অপরাধ। তবে, মানহানি সংঘটনের জন্য কতগুলি উপাদান রয়েছে। সেইগুলি পাওয়া গেলে একজন ব্যক্তি মানহানির মামলা দায়ের করতে পারেন।
অতঃএব, আমি এখানে মানহানি মামলার জন্য কি কি উপাদান থাকলে মামলা করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করব।
When can you file a defamation suit?
আপনি কখন মানহানির মামলা করতে পারেন?
মানহানি সংঘটনের জন্য মূলতঃ তিনটি উপাদান রয়েছে। যথাঃ
- Defamatory Statement বা মানহানিকর উক্তি;
- Reference to the Plaintiff বা বাদীর প্রতি আরোপিত;
- Publication বা প্রকাশনা।
মানহানিকর উক্তি: মানহানিকর উক্তি বলতে এমন ধরনের উক্তিতে বুঝানো হয় যা বাদীকে সমাজে ঘৃণা বা উপহাসের পাত্র বানায়। ফলে সমাজের লোকের মধ্যে তাকে পরিহার করার প্রবণতা দেখা দেয়। আর তা নানাভাবে হতে পারে। যেমনঃ
- সরাসরি বিবৃতি বা (Direct statement);
- Irony বা বিড়ম্বনা;
- Caricature বা ব্যঙ্গচিত্র;
অথবা, ভিন্নভাবে হতে পারে। যেমনঃ
- পাগল বলা;
- সংক্রামক ব্যধির অপবাদ দেওয়া;
- যৌন রোগের আছে বলে অপ-প্রচার করা, ইত্যাদি।
আবার, প্রায়শই বলা হয় যে, নিছক অশ্লীল অপব্যবহার বা অপমানজনক নাম-কলিং, বা গালাগালি করাও মানহানি বলে ধর্তব্য হয় না; বরং এগুলির সহিত পরিস্থিতিও বিবেচ্য বিষয়। এক্ষেত্রে, Slazenger Ltd v Gibbs (1916) এর মামলা উল্লেখযোগ্য।
তবে, কোন কোন ক্ষেত্রে কেবল শব্দগত অর্থ মানহানিকর না হলেও অন্তর্নিহিত অর্থকে মানহানি বলে ধরা হয়। সুতরাং যদি বাদীকে অন্তর্নিহিতভাবে আক্রমন করা হয়, তবে মানহানি মামলার আর্জিতে ব্যাখ্যাসহকারে (ইন্নায়োন্ডা) উল্লেখ করতে হবে।
বাদীর প্রতি আরোপিত: মানহানিকর প্রকাশনা বা উক্তি প্রত্যক্ষভাবে বাদীর উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে প্রমাণিত হতে হবে। উদাহরণ স্বরুপ বলা যেতে পারে যে, “ক” একজন বিবাহিত ব্যক্তি কিন্তু “খ” তাকে বলে যে, সে ব্যাচেলর বা অবিবাহিত। তাতে “ক” এর সম্মানের কোন হানি হবে না। তবে, যদি “খ” বলে যে, “ক” চরিত্র ভ্রষ্ট তাহলে মানহানি হবে।
অনুরুপভাবে, যদি “ক” তার প্রতিবেশি “খ” এর পিতা সম্পর্কে বলে যে, “খ” এর পিতা একজন মানসিক রোগী। তাতে “খ” এর filial feelings বা সন্তানোচিত অনুভূতিকে আহত করলেও তার মানহানি হবে না।
এতদ্ভিন্ন, নাম উল্লেখ না করেও এমনভাবে উক্তি করা হয় যেন সমাজের বিবেকবান মানুষসহ একজন পথচারীর বুঝতে বাকী থাকে না যে, কার প্রতি আরোপিত করা হয়েছে।
গোষ্ঠী মানহানি: শ্রেণীগত মানহানির ক্ষেত্রে নির্ভর করবে উহার আকারের উপর। অর্থাৎ ক্ষুদ্র নাকি বৃহৎ।
প্রকাশনা: প্রকাশনা বিবাদী পক্ষের একতরফা আইন নয়, বরং দ্বিপক্ষীয় আইন। অবশ্য অনেক লোকের সামনে প্রকাশ করতে হবে তা শর্ত নয়; বরং বাদী ছাড়া অন্য একজন লোকের নিকট প্রকাশ করলেও যথেষ্ট বলে গণ্য হবে। প্রতিটি মামলা বা কেসের ক্ষেত্রে সাক্ষী একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ফলে, মানহানির ক্ষেত্রেও সাক্ষী উহার ব্যতিক্রম নয়।
সুতরাং কেউ যদি আপনার ব্যপারে মানহানিকর উক্তি করে, তবে বেশি সাক্ষীর প্রয়োজন না হলেও কমপক্ষে একজন সাক্ষী থাকা বাঞ্চনীয়। আরোও প্রকাশ থাকে যে, স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক আলোচনা প্রকাশনা হিসেবে গ্রাহ্য নয়; কারণ আইনের দৃষ্টিতে কতিপয় ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীকে একক ব্যক্তি হিসেব পরিগণিত। [Wennhak v Morgan (1888) 20 Q.B.D. 635. 639]
এছাড়াও প্রকাশনা এমন লোকের নিকট করা হয়েছে যার মানহানির অর্থ
বোধগম্য হয়। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায় যে, বিদেশী ভাষাতে নয়; বরং বাংলা ভাষাতে প্রকাশনা হতে হবে।
পক্ষান্তরে, প্রিন্ট মিডিয়া বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া আপনা বিরুদ্ধে মানহানিকর কিছু ছাপানো হলে, পেপার কাটিং আপনার জন্য Evidentiary বা প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট।
আশা করি, মানহানি সম্পর্কে আপনারা যথেষ্ট ধারণা পেয়েছেন।
COMMENTS