পক্ষগণের মতৈক্য ও সম্মতি এবং সম্মতি যদি আইনের দ্বারা বলবৎ যোগ্য হয়, তখন তাকে চুক্তি বলা হয়। তবে,বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুসারে সকল ব্যক্তি চ...
পক্ষগণের মতৈক্য ও সম্মতি এবং সম্মতি যদি আইনের দ্বারা বলবৎ যোগ্য হয়, তখন তাকে চুক্তি বলা হয়। তবে,বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুসারে সকল ব্যক্তি চুক্তির জন্য যোগ্য নয়। এজন্য কোন ব্যক্তির সহিত চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পূর্বে আপনাকে দেখতে হবে যে তার মধ্যে চুক্তি করার Copetency বা যোগ্যতা আছে কি না।
সুতরাং আমি এখানে চুক্তিতে অযোগ্য ব্যক্তিদের সম্পর্কে আলোচনা করব। আসুন দেখা যাক, কারা চুক্তিতে অযোগ্য ব্যক্তি।
Who are the persons incompetent to contract?
চুক্তিতে অযোগ্য ব্যক্তিরা কারা?
চুক্তি সম্পাদন করার যোগ্যতা সম্পন্ন নয় এমন ব্যক্তিরা নিম্নরুপঃ
- Contract by a minor child (নাবালক);
- Contract by person of unsound mind (সুস্থ মনের অধিকারী নয় ব্যক্তি);
- Insolvency (প্রচলিত আইনে যার চুক্তি করার যোগ্যতা খর্ব করা হয়েছে এরুপ ব্যক্তি)।
নাবালক
বাংলাদেশে প্রচলিত The Indian Majority Act (1875) বা ১৮৭৫ সালের সাবালকত্ব আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী যার বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়নি তাকে নাবালক বলে। কতিপয় ব্যতিক্রম ছাড়া নাবালকের চুক্তি শুরুতেই বাতিল (Void ab Initio)। মোহরী বিবি বনাম ধর্মদাস মামলায় প্রিভি কাউন্সিল এরুপ রায় দিয়েছেন। চুক্তির বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিচার বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার মত মানসিক পরিপক্কতা নাবালকের নেই।
সেজন্য নাবালকের চুক্তি বাতিল হিসেবে গণ্য হবে। তবে নাবালকের মঙ্গল ও প্রয়োজনের নিমিত্তে তার পক্ষে তার অভিভাক চুক্তি করতে পারে। নাবালকের প্রয়োজন ও মঙ্গল কোনটি এবং কি পরিমাণ তা নির্ভর করবে নাবালকের তথা তার পিতা-মাতার সামাজিক ও আর্থিক মর্যদা ও অন্যান্য পরিবেশের উপর।
নাবালকের প্রয়োজনের জন্য যদি কেউ দ্রব্যাদি সরবরাহ করে থাকে তবে চুক্তি আইনের ৬৮ ধারা অনুযায়ী সে ব্যক্তি নাবালকের সম্পত্তি হতে উদ্ধার করতে পারবে। তবে এটা যে নাবালকের জন্য প্রয়োজন ছিল তা প্রমাণ করতে হবে।
নাবালকের অভিভাবক যদি তার প্রয়োজন ও উপকারের অজুহাতে অযৌক্তিক চুক্তি করে তবে নাবালক সাবালকত্ব অর্জনের পর এ চুক্তির যথার্থতা নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করতে পারে এবং আদালত তা বাতিল ঘোষণা করতে পারে। অবশ্য পূর্বেই যদি আদালতের অনুমতিক্রমে চুক্তি হয়ে থাকে, তবে তা বাতিল করা যাবে না।
মানসিক অসুস্থ ব্যক্তির চুক্তি
চুক্তি আইনের ১১ ধারা মোতাবেক মানসিক দিক হতে সুস্থ ব্যক্তি বৈধ চুক্তি সম্পাদন করতে পারে। সুস্থ মস্তিষ্ক বলতে কি বুঝায় তা চুক্তি আইনের ১২ ধারায় বর্ণিত হয়েছে।
উক্ত ধারায় বলা হয়েছে যে, চুক্তি সম্পাদনের সময় যদি কেউ ঐ চুক্তির মর্ম বুঝতে সমর্থ হয় এবং চুক্তি দ্বার তার স্বার্থের উপর যে প্রতিক্রিয়া হবে তৎসম্পর্কে একটা যুক্তিসঙ্গত অভিমত গ্রহণ করত পারে, তাহলে চুক্তি করার জন্য সে সুস্থ মনের অধিকারী বলা যায়।
যে ব্যক্তি সাধারণতঃ সুস্থ চিত্ত থাকে, কিন্তু মাঝে মাঝে অসুস্থ চিত্ত থাকে, সে অসুস্থ চিত্ত অবস্থায় কোন চুক্তি করতে পারে না, অর্থাৎ সুস্থ চিত্ত অবস্থায় চুক্তি করতে পারে।
বিভিন্ন কারণে মানুষের মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটতে পারে, যেমন জড়বুদ্ধি, উন্মাদ, পানোন্মত্ততা, বার্ধক্য বা অসুস্থতাজনিত কারণে। এদের মধ্যে কতকগুলি স্থায়ী ও দূরারোগ্য, আর কতগুলি সাময়িক।
বিকৃত মস্তিষ্ক ব্যক্তির চুক্তি সাধারণতঃ বাতিল। তবে সাময়িকভাবে অসুস্থ চিত্ত ব্যক্তির চুক্তি বাতিলযোগ্য হতে পারে। উদাহরণ স্বরুপ, মদ্যপ অবস্থায় এক ব্যক্তি সাধারণতঃ চুক্তির মর্ম বুঝতে সক্ষম হয় না। এ অবস্থায় চুক্তি করলে পরবর্তীকালে সুস্থ চিত্ত অবস্থায় তা বাতিল করতে পারে।
স্থায়াভাবে অযোগ্য, উন্মাদ, জড়বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি ও নাবালকের মত স্থায়ী অযোগ্য বক্তির ক্ষেত্রে তাদের ভরণ-পোষণের জন্য তাদের অভিভাবকগণ চুক্তি সম্পাদন করতে পারে এবং এজন্য এ সকল অযোগ্য ব্যক্তির চুক্তি দায়বদ্ধ থাকবে, তারা ব্যক্তিগতভাবে দায়ী হবে না।
মানসিক অসুস্থতা একটি ঘটনার বিষয়, আইনের বিষয় নয়। কাজেই সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। যে ব্যক্তি সাধারণতঃ অসুস্থ থাকে কিন্তু চুক্তি সম্পাদনের সময় সুস্থ ছিল বলে দাবী উত্থাপন করা হয়, সেক্ষেত্রে এরুপ দাবী উত্থাপনকারীকে প্রমাণ করতে হবে যে, উক্ত সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সুস্থ চিত্ত ছিল বলে আদালতে অনুমিত হবে।
যে ব্যক্তি সাধারণতঃ সুস্থ থাকে কিন্তু মাঝে মাঝে মানসিক দিক দিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে, সে ব্যক্তি চুক্তি করার সময় অসুস্থ ছিল বলে যে পক্ষ দাবী করে তাকেই প্রমাণ করতে হবে যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ঐ সময় অসুস্থ চিত্ত ছিল। এরুপ প্রমাণে ব্যর্থ হলে চুক্তি সম্পাদনের সময় ঐ ব্যক্তি সুস্থ চিত্ত ছিল বলে আদালতে অনুমিত হবে।
Disqualified persons under other customary law
প্রচলিত অন্য আইনে অযোগ্য ব্যক্তি
দেউলিয়া ঘোষিত ব্যক্তি: ১৯২০ সালে দেউলিয়া আইনে যাদেরকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়েছে তারা চুক্তি মূলে তাদের স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারে না।
বিবাহিতা স্ত্রী: ইংল্যান্ডে ১৮৮৩ সালে বিবাহিতা স্ত্রীলোকের সম্পত্তি আইন পাস হবার পূর্বে বিবাহিতা স্ত্রীলোক তার সম্পত্তি হস্তান্তরের জন্য চুক্তি সম্পাদন করতে পারতো না। তার নিজের সম্পত্তি তার স্বামীর উপর বর্তাতো। উক্ত আইন পাস হবার পর হতে এখন বিবাহিত স্ত্রীলোকেরাও অন্য সকলের মত চুক্তি করতে পারে। বাংলাদেশে বিবাহিতা বা অবিবাহিতা স্ত্রীলোকের চুক্তির ব্যপারে আলাদা কোন আইন ছিল না বা বর্তমানেও নাই। অন্য সকলের মত তারা সমান অধিকার ভোগ করে।
দন্ডিত ব্যক্তিগণ: কারাবাসে দন্ডভোগকালীন কোন ব্যক্তি চুক্তি সম্পাদন করতে পারে না। অবশ্য সাময়িকভাবে মুক্ত হলে বা দন্ডভোগের মেয়াদ অন্তে এ অযোগ্যতা দূর হয়ে যায়। এছাড়া বিশেষ কোন আইন বা অধ্যাদেশ দ্বারা কোন ব্যক্তির চুক্তি করা যোগ্যতা খর্ব করা যায়।
COMMENTS