পূর্ব রাগারাগির জেরে একজন আরেকজনকে বিদ্বেষ প্রসূত মামলায় জড়িত করা বাংলাদেশে একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যপার। ন্যায় সঙ্গত কারণ ব্যতীত বিদ্বেষমূলক...
পূর্ব রাগারাগির জেরে একজন আরেকজনকে বিদ্বেষ প্রসূত মামলায় জড়িত করা বাংলাদেশে একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যপার।
ন্যায় সঙ্গত কারণ ব্যতীত বিদ্বেষমূলক ফৌজদারী মামলা দায়ের করে অকৃতকার্য হলে তার বিরুদ্ধে টর্ট আইনে ক্ষতি পূরণ মামল করা যায় এবং এই টর্টের নাম বিদ্বেষ প্রসূত মামল।
কোন মামলায় বাদী অকৃতকার্য হলে বিবাদী অযথা মামলায় জড়ানেরা জন্য সাধারণতঃ কোন ক্ষতি পূরণের ব্যবস্থা নাই। কিন্তু আদালত রায় প্রদানকালে এ মর্মে নির্দেশ দিলে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে খরচ বহন করতে হয়। কারো বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের করলে অভিযোগকারীর অভিযোগ প্রমাণিত না হলে আসমাী খালাস পায় কিন্তু কোন ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেওয়া হয় না। শুধু হয়রানীর উদ্দেশ্যে বিদ্বেষ প্রসূত মামলা করলে অভিযুক্ত ব্যক্তির অনেক ক্ষতির আশাঙ্কা দেখা যায়। যেমন-
- তার সুনাম ক্ষুন্ন হয়;
- তাকে আটক করলে শরীরে অবৈধ হস্তক্ষেপ করা হয়;
- মামলায় জড়ায়ে আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়;
- প্রাইভেসী ক্ষুন্ন হয় ও মানসিক অশান্তির সৃষ্টি হয়।
কাজেই উক্ত মামলা পরিসমাপ্তির পর খালাস পেয়ে ক্ষতিপূরণের জন্য বিদ্বেষ প্রসূত মামলা করা যায়।
ফলে, যদি কোন ব্যক্তি বিনা অপরাধে বিদ্বেষমূলক ভাবে আপনাকে মামলায় জড়িত করে, তবে আপনি কি কি কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ে করতে পারেন তা আমি নিম্নে তুলে ধরা চেষ্টা করছি।
Who can be sued for malicious prosecution?
বিদ্বেষ প্রসূত বিচারের জন্য কার বিরুদ্ধে মামলা করা যেতে পারে?
এই অপকর্মের প্রতিকারের জন্য বাদীকে (অর্থাৎ ফৌজদারী মামলার আসামী) নিম্নলিখিত উপাদান গুলি প্রমাণ করতে হবেঃ
- বিবাদী (ফৗজদারী মামলার অভিযোগকারী) তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
- কোন যথার্থ ও যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়াই এ মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
- ইহা বিদ্বেষমূলক দায়ের করা হয়েছিল।
- উক্ত মামলা বাদীর অনুকূলে নিষ্পত্তি হয়েছিল।
- উক্ত মামলার ফলে বাদীর সুনাম, প্রাইভেসী, আর্থিক, মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি হয়েছিল।
বাদীর বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের
যে ফৌজদারী মামলা সম্পর্কে বাদীর অভিযোগ তা বিবাদী কর্তৃক বাদাীর বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছিল তা প্রমাণ করতে হবে। বিবাদী স্বয়ং এ মামলা দায়ের করেছিল এরুপ প্রয়োজন নাই। কোন আইনজীবি তার মক্কেলের মাধ্যমে এরুপ মামলা দায়ের করলেও তাকে দায়ী করা যায়। অবশ্য মামলা দায়ের করতে প্ররোচিত করা আর মামলা দায়েরের জন্য তথ্য সরবরাহ করা এক কথা নয়। তথ্য সরবরাহকারীকে কোন ক্রমেই দায়ী করা যায় না।
সম্ভাব্য ও যথার্থ কারণের অভাব
বাদীকে প্রমাণ করতে হবে যে, যথার্থ ও সম্ভাব্য কারণ ছাড়াই তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। যথার্থ কারণ ছিল কিনা তার জবাব বিবাদীর পক্ষে দেওয়াই সুবিধাজনক। যদি বিবাদী যথার্থ কারণ প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়, তবে মামলা বাদীর অনুকূলেই যাবে। কিন্তু ঘটনার প্রেক্ষিতে বিবাদীর আচরণ যুক্তিযুক্ত ছিল না কিংবা বাদীর অপরাধ সম্পর্কে বিবাদীর সন্দেহ হবার যথার্থ ও সম্ভাব্য কারণ ছিল প্রমাণের দায়িত্ব বাদীর উপর অর্পণ করা হয়েছে।
এছাড়াও যেহেতু এটা একটা ঘটনার বিষয়, ঘটনার আলোকে সাক্ষ্য-প্রমাণ দ্বারা তা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বিচারে বাদীর খালাস চুড়ান্তভাবে প্রমাণ করে না যে, মামলার সম্ভাব্য ও যথার্থ কারণের অভাব ছিল। বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলে কারণের সম্ভাব্যতা দৃঢ় হয়, যদিও আপীলে তা বাতিল হতে পারে। যেমন হার্নিম্যান বনাম স্মিথ মামলা।
বিদ্বেষ
বিদ্বেষ প্রসূত মামলায় বিবাদীর বিদ্বেষ প্রধান উপাদান। বিদ্বেষ দুই ধরণের- আইনের বিদ্বেষ ও ঘটনার বিদ্বেষ। এক্ষেত্রে ঘটনার বিদ্বেষ বিবেচ্য বিষয় আইনের বিদ্বেষ নয়। বাদীকে প্রমাণ করতে হবে যে, বিবাদী হিংসার বশর্বতী হয়ে বাদীকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানেরা উদ্দেশ্যে বিদ্বেষমূলক ভাবে মামলা দায়ের করেছে। বাদীর সাথে বিবাদী পূর্ব দুশমনী ছিল তা প্রমাণ করার কোন প্রয়োজন নাই। এক্ষেত্রেও বাদীকে বিবাদীর বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ সাক্ষ-প্রমাণের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
বাদীর অনুকূলে নিষ্পত্তি
যে ফৌজদারী মামলা বাদীর বিরুদ্ধে করা হয়েছিল সেটা তার অনুকূলে নিষ্পত্তি হয়েছিল তা প্রমাণ করতে হবে। বাদী যদি উক্ত মামলায় সাজা প্রাপ্ত হয়ে থাকে, তবে টর্টের েএ মামলা চলবে না। বিবাদী প্রতারণা বা অন্যায়ভাবে তাকে শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে এ মামলা করছিল এরুপ প্রমাণও যথেষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে বাদী জন্য উপযুক্ত প্রতিকার উচ্চতর আদলতে আপীল করা। ফলে, আপীলে খালাস পেলেও তা বাদীর অনুকূলে যাবে।
মোদ্দা কথা, বিচারে কিংবা আপীলে বাদী নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবে । অবশ্য বাদীর অবর্তমানে একতরফা ভাবে যতি বাদীর প্রতিকূলে সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে, তবে আদালত এই উপাদানের ব্যতিক্রম হিসেবে গণ্য করতে পারে।
ক্ষতি
বিদ্বেষ প্রসূত ফৌজদারী মামলার ফলে বাদীর কেবল সুনাম নষ্ট হয় তা কিন্তু নয়; বরং শারীরিক, মানসিক, আর্থিক, এমনকি প্রাইভেসী ক্ষুন্ন হয়ে থাকে। ফলে, এই টর্টের জন্য বাদীর প্রকৃত ক্ষতি প্রমাণের প্রয়োজন নাই। অন্যান্য উপাদান গুলি প্রতিষ্ঠিত হলেই বাদীর ক্ষতি অনুমিত হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, মানহানি মামলা প্রমাণের জন্য কতগুলি উপাদান রয়েছে। ঠিক তদ্রুপভাবে, বিদ্বেষ-প্রসূত মামলাও কতগুলি উপাদানের উপর নির্ভরশীল। ফলে, সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আপনি এই মামলায় ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন।
COMMENTS