ইসলামী শরীআ পরামর্শ দিয়েছে যে, পুরুষ ও স্ত্রীর মধ্যে যৌন মিলন ঘনিষ্ঠতা এবং প্রেমের সাথে পরিচালিত করা উচিত। তবে, দাম্পত্য জীবনে ক্ষেত্র বিশে...
ইসলামী শরীআ পরামর্শ দিয়েছে যে, পুরুষ ও স্ত্রীর মধ্যে যৌন মিলন ঘনিষ্ঠতা এবং প্রেমের সাথে পরিচালিত করা উচিত। তবে, দাম্পত্য জীবনে ক্ষেত্র বিশেষ পারস্পারিক সম্মতি ছাড়াও যৌন মিলন একতরফাভাবে সংঘটিত হয়ে থাকে। আর এই এক তরফা যৌন মিলনকে বর্তমান সময়ে বৈবাহিক ধর্ষণ হিসেবে অভিহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সুতরাং আমরা এখানে জানার চেষ্টা করব যে, স্ত্রীর সাথে জোরপূর্বক বা একতরফা মিলন যাই বলি না কেন তা বৈবাহিক ধর্ষণ কিনা।
Could forcible intercourse with wife be marital rape?
স্ত্রীর সাথে জোরপূর্বক মিলন কি বৈবাহিক ধর্ষণ?
সাধারণ আইন অনুসারে বৈবাহিক বা (Spousal rape) বলতে স্ত্রীর অসম্মতি সত্ত্বেও স্বামী কর্তৃক জোর করে যৌন মিলনে বাধ্য করা। তবে, বাংলাদেশে প্রচলিত ১৮৬০ সালের দন্ডবিধি আইনের ৩৭৫ ধারাতে বলা হয়েছে-
“১৩ বছরের বেশি বয়স্ক নারীর ক্ষেত্রে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্বামী জোরপূর্বক যৌন মিলন করলে তা বৈবাহিক ধর্ষণ বলে গণ্য হবে না।”
ইসলামী শরিয়তে ধর্ষণ বলতে জোর করে ব্যভিচার করাকে বুঝায়। মহিলা যতক্ষণ তার স্ত্রী, ততক্ষণ এটিকে ধর্ষণ বলে অভিহিত করা যায় না। এটি নিন্দনীয়, তবে আমরা এটিকে ধর্ষণ বলি না।
পক্ষান্তরে, শরীআ আইনে বলা হয়েছে যে, বৈবাহিক ধর্ষণ তখন ঘটে যখন পুরুষ তার স্ত্রীকে ঋতুস্রাবের সময় বা অস্বাভাবিক যৌন অবস্থানে বা রমজানের রোজার সময় যৌন মিলনে বাধ্য করে। এ ব্যাপারে নিন্মোক্ত বিধান হতে পারে। যথাঃ
ঋতুমতি অবস্থায় স্বামীর জোরপূর্বক সহবাসের হুকুম
স্ত্রীর হায়েজ বা ঋতু ও নেফাস বা সন্তান প্রসব পরবর্তী ৪০ দিন যৌন মিলন হারাম। কেননা, কুরআন মাজিদের সূরা বাকারার ২২২ নং আয়াতে বলা হয়েছে-
“তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের পিরিয়ড চলাকালিন অবস্থায় যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা হতে বিরত থাকবে । সুতরাং যখন তোমাদের স্ত্রীগণ ঋতুস্রাব হতে পবিত্র হবে, তখন যৌন সম্পর্ক স্থাপনে কোন প্রতিবন্ধকতা নাই।”
ফলে, উপরোক্ত অবস্থায় যৌন মিলন হারাম। তবে, যদি জোরপূর্বক বা ভূলবশতঃ করে ফেলে তবে এস্তেগফার করতে হবে এবং সেই সাথে কাফফারা বা ক্ষতি পূরণ দিতে হবে। এক্ষেত্রে ঋতু কালিন সময়ের শুরুর দিকে যৌন মিলন করলে ১ দিনার এবং ঋতু চলা কালিন সময়ের শেষের দিকে যৌন মিলন করলে অর্ধ দিনার কাফফারা দিতে হবে।
অস্বাভাবিক যৌন মিলনের বিধান
- Oral sex মুখমেহন তথা স্বামী তার স্ত্রীকে ঠোঁট বা জিহ্বা দিয়ে লিঙ্গ চুষতে বা চাটতে (অর্থাৎ যাকে ফেলিটিও বলা হয়), বাধ্য করা।
- Anal sex বা স্ত্রীর মলদ্বারে সহবাসের জন্য বাধ্য করা।
“তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য শস্যক্ষেতের ন্যায়; ফলে, তোমরা সুবিধামত পদ্ধতিতে তোমাদের শস্যক্ষেতে গমন করতে পারে।”
সুতরাং, কোন অবস্থাতেই গুহ্যদ্বার তথা পায়ূ পথে সহবাস করা যাবে না। কারণ স্ত্রীর যৌনাঙ্গ ব্যতিত মলদ্বারে লিঙ্গ প্রবেশ করা হারাম।
রোজা অবস্থায় স্বামীর জোরপূর্বক সহবাসের হুকুম
রোজা অবস্থায় সহবাস করা হারাম। তার পরেও যদি স্বামী জোর করে স্ত্রী সহবাস করে তবে, এ ক্ষেত্রে উভয়ের জন্য ভিন্ন বিধান রয়েছে। যেমন স্ত্রীকে রোজার কাজা আদায় করতে হবে কিন্তু কাফফারা বা ক্ষতিপূরণ দেওয়া লাগবে না। পক্ষান্তরে, স্বামী উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন অর্থাৎ রোজার কাজা আদায়সহ কাফফারা দিতে হবে। কাফফারা হলো টানা ৬০ দিন রোজা রাখতে হবে। মাঝখানে একটি দিনও বাদ দেওয়া যাবে না। মাঝখানে যদি একটি দিনও কাজা হয় তবে আপনাকে প্রথম থেকেই পুনরায় ৬০ টি রোজা রাখতে হবে।
যদি কোনও ব্যক্তি বার্ধক্য বা অসুস্থতার কারণে উপবাস করতে অক্ষম হন, তবে তিনি ৬০ টি মিসকিনকে দুই বেলা খানা খাওয়াবেন। এক দিনের খাদ্য সদকায়ে ফিতিরের সমপরিমাণ। সর্বোপরি তাকে আল্লাহর নিকট তৌবা করতে হবে।
COMMENTS