অপরাধীকে তার কৃত অপরাধের জন্য শাস্তি বা কষ্ট দেওয়া হয়। আর এই শাস্তি শারিরীক বা মানসিক হতে পারে। তবে, বিভিন্ন দেশে অপরাধ অনুসারে নানা ধরণের শ...
অপরাধীকে তার কৃত অপরাধের জন্য শাস্তি বা কষ্ট দেওয়া হয়। আর এই শাস্তি শারিরীক বা মানসিক হতে পারে। তবে, বিভিন্ন দেশে অপরাধ অনুসারে নানা ধরণের শাস্তি বিধান রয়েছে, তন্মধ্যে মৃত্যূদন্ড অন্যতম একটি শাস্তি। বাংলাদেশে বর্তমানে মোট ১০ প্রকার অপরাধের জন্য মৃত্যূদন্ড প্রচলিত আছে।
তবে, আমি এখানে বাংলাদেশে মৃত্যূদন্ড সাংবিধানিকভাবে বৈধ কিনা সে ব্যপারে আলোচনা করব। আমি প্রত্যাশা করি, পাঠক মহল উপকৃত হবেন।
Is the death penalty constitutional in Bangladesh?
বাংলাদেশে মৃত্যূদন্ড কী সাংবিধানিকভাবে বৈধ?
মৃত্যূদন্ড সমর্থনযোগ্য কিনা সে প্রশ্নটি অতি প্রাচীন কাল হতেই চিন্তাবিদদের আলোড়িত করে রেখেছে। মৃত্যূদন্ড রাখার পক্ষে যেমন জোরালো যুক্তি রয়েছে তেমনী এটা রহিত করণের পক্ষেও পর্যাপ্ত যুক্তি দেখানো হয়েছে। তাই বিষয়টি এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
মৃত্যূদন্ড রহিত করার পক্ষে যুক্তি
মৃত্যূদন্ড রহিত করার পক্ষে যুক্তি হচ্ছে এই যে, দুশমনী বশতঃ হোক কিংবা উত্তেজনার বশেই হোক কিংবা যে কোন কারণেই হোক অপরাধী খুন করার মত একটি অপরাধ করে ফেলেছে। সে জন্য তার দুষ্ট মনের ক্ষতচিহ্ন চিরতরে মুছে ফেলে চরিত্রের আমূল পরিবর্তনের জন্য সংস্কারমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করলে ভবিষ্যতে সে একজন সৎ জীবন-যাপন করতে অনুপ্রেরণা পাবে।
তাকে মেরে ফেলার অর্থ হচ্ছে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে একজন মানুষকে হত্যা করা যা খুনের নামান্তর। এক্ষেত্রে আইনের সমর্থন রয়েছে বলে খুনের দায়ের প্রশ্ন উঠে না।
এছাড়া পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, মৃত্যূদন্ড থাকা সত্ত্বেও খুনের মত অপরাধের হার কমছে না। কারণ মানুষ যখন ক্রোধান্ধ ও বেপরোয়া হয়ে পড়ে তখন তার কাজের পরিণতির কথা চিন্তা করে না। তাছাড়া অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলেন যে, মৃত্যূদন্ডের মত অপরাধ যারা করে তারা এক প্রকার সামাজিক ব্যধিগ্রস্ত ব্যক্তি। তাদের উপযুক্ত চিকিৎসা হলে তারা সুস্থ হয়ে উঠবে। কাজেই আরেকজনের প্রাণ নাশ করার প্রয়োজন হয় না। এ সকল যুক্তির ভিত্তিতে অনেক দেশই মৃত্যূদন্ড রহিত করা হয়েছে। যেমনঃ
মৃত্যূদন্ডের পক্ষে যুক্তি
মৃত্যূদন্ডের পক্ষে যুক্তি হচ্ছে এই যে, সামাজিক শান্তি ও শৃঙ্খলাই যদি আইনের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তবে আইন ভঙ্গকারীকে অবশ্যই আদালতে বিচার করে শাস্তি দিতে হবে। সুপরিকল্পিতিভাবে, ঠান্ডা মাথায় মানুষ হত্যা করলে বাংলাদেশ দন্ডবিধি অনুযায়ী মৃত্যূদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান আছে। অন্য মানুষকে বেঁচে থাকার অধিকার সে বিনষ্ট করেছে বিধায় তারও বেঁচে থাকার অধিকার থাকে না বলে অনেকে অভিমত প্রকাশ করেছেন।
এছাড়া একজন অপরাধীর মৃত্যূদন্ড কার্যকরী হতে দেখলে সমাজে বসবাসকারী অন্যান্য অপরাধীদের মনেও এর একটা প্রতিক্রিয়া হবে এবং মানুষ খুন করার মত জঘন্যতম অপরাধ করা হতে কিছুটা তাদের নিবৃত্ত রাখবে।
অনেকে বলেন যে, মৃত্যূদন্ড প্রচলিত থাকা সত্ত্বেও মানুষ খুনের হারতো কমছে না। এরুপ অপরাধের সংখ্যা হিসাব করলে অবশ্য অনেক বেশি মনে হবে। কিন্তু ৪০ বছর পূর্বে এদেশের জনসংখ্যা ছিল ৪ কোটি। বর্তমানে জনসংখ্যা ৪ গুণ হয়েছে। কাজেই এরুপ অপরাধের সংখ্যা সে সময়ের ৪ গুণ হলে তবে আনুপাতিক হারে অপরাধের হার বৃদ্ধি পায়নি বলা যায়। তবে এটা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, মৃত্যূদন্ড থাকা সত্ত্বেও অপরাধের হার না কমলেও মোটামুটি একটা ভারসম্য বজায় রয়েছে। মৃত্যূদন্ড রহিত করলে এই ভারসম্য বিনষ্ট হবে এবং অপরাধের হার অধিকমাত্রায় বেড়ে যাবে। ফলে, জঘন্যতম অপরাধের ক্ষেত্রে মৃত্যূদন্ড বজায় থাকা সমর্থনযোগ্য।
বাংলাদেশ সংবিধানের প্রদত্ত মৌলিক অধিকার সমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জীবনের অধিকার। বিনা কারণে কারো কেউ জীবন হানি ঘটালে তার বেঁচে থাকার অধিকার থাকে না। সংবিধানের ৪৪ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীন সুপ্রীম কোর্টের কোন ক্ষমতার খর্ব না ঘটায়ে সংসদে গহীত আইন দ্বারা অন্য কোন আদালতকে তার আঞ্চলিক এখতিয়ারের সীমার মধ্যে সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক প্রয়োগযোগ্য সকল ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষমতা প্রদান করতে পারবেন। তাই সংবিধানের আওতায় আইন দ্বারা নির্ধারিত এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত কর্তৃক আইন অনুযায়ী বিচারপূর্বক কারো মৃত্যূদন্ড দেওয়া হলে তা সম্পন্ন সাংবিধানিক হবে।
COMMENTS