বিয়ে প্রতিটি ধর্মেই একটি পবিত্র বন্ধনরীতি হিসেবে বিবেচ্য। আর এই বন্ধন সম্পাদনের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই ‘ঘটক’ প্রথা বিদ্যমান ছিল, এবং বিনিময়ে ...
বিয়ে প্রতিটি ধর্মেই একটি পবিত্র বন্ধনরীতি হিসেবে বিবেচ্য। আর এই বন্ধন সম্পাদনের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই ‘ঘটক’ প্রথা বিদ্যমান ছিল, এবং বিনিময়ে ঘটনগণ কিছু উপঢৌকন পেয়ে থাকত। কিন্তু ইদানিং কালে ‘ঘটকালী’, Marrige Brokerage বা বিবাহ দালালিতে পরিণত হয়েছে।
যৌতুক বিরোধী আন্দলোন প্রতিনিয়তই হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালে যৌতুক নিরোক অধ্যাদেশ জারি করে। তথাপিও পরোক্ষভাবে যৌতুকের সূচনাকারী হিসেবে বিবেচ্য একটি পদ্ধতি প্রাতিষ্ঠানিক রুপ নিতে চলেছে। আর তা হলো Marrige Brokerage বা বিবাহ দালালি।
সুতরাং আমি এখানে বর্তমান বাংলাদেশে প্রচলিত ‘বিবাহ দালালি’ সম্পর্কে আলোচনা উপস্থাপন করব। এছাড়াও দেখাবো যে, বিবাহ দালালি কীভাবে একটি জনস্বার্থ বিরোধী চুক্তি। আমি আশা করি, আপনি উপকৃত হবেন।
Is marriage brokerage opposed to public policy?
বিবাহ দালালি কী জনস্বার্থ বিরোধী চুক্তি?
জনস্বার্থ (Public Policy) এক ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। রাজনৈতিক, সামাজিক, বা অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ হতে যেগুলি আপত্তিজনক সেগুলি জনস্বার্থ বিরোধী বলা যায়। সামাজিক মূল্যবোধের পরিবর্তনের সাথে সাথে এর অর্থও পরিবর্তিত হয়। বিবাহের দালালি জনস্বার্থ বিরোধী একটি চুক্তি।
ইংল্যান্ডে বিয়ের ব্যপারে তৃতীয় ব্যক্তির প্রয়োজন হয় না, কারণ ছেলে মেয়ে নিজেরাই তাদের পছন্দমত জীবন সঙ্গী নির্বাচন করে থাকে। তাই এ ব্যপারে সহযোগিতা প্রদানের নিমিত্তে কাউকে পারিশ্রমিক প্রদানের চুক্তি জনস্বার্থ বিরোধী।
এদেশে পাত্র-পাত্রীর পিতা, মাতা বা অভিভাবক সাধারণতঃ বিয়ে স্থির করে থাকেন। প্রয়োজন বোধে তৃতীয় ব্যক্তি মধ্যস্থতা করে থাকে যাকে ‘ঘটক’ বলা হয়। একাজের জন্য ঘটককে কিছু উপঢৌকন দেয়া পারে, কিন্তু কোন পারিশ্রমিক প্রদানে চুক্তি বলবৎযোগ্য নয়। যৌতুকের লোভে কোন পিতা-মাতা তার মেয়ের বিয়েতে সম্মতি দিলে তা জনস্বার্থ বিরোধী ও যৌতুক বিরোধী আইনের পরিপন্থী হবে। যেমন বাংলাদেশের যৌতুক নিরোধক আইন, ২০১৮ এর ৪ ধারাতে বলা হয়েছেঃ
If one of the parties to the marriage pays or receives the dowry or assists in the payment or acceptance of the dowry or enters into an agreement for the purpose of giving or receiving the dowry, then this act will be an offense and for that he is not more than 5 (five) years but not less than 1 (one) year imprisonment or a fine not exceeding 50,000 (fifty thousand) taka or both shall be punishable.
বিবাহের কোনও পক্ষ যদি যৌতুকের অর্থ প্রদান বা গ্রহণ করে বা যৌতুকের প্রদান বা গ্রহণে সহায়তা করে বা যৌতুক প্রদান বা গ্রহণের উদ্দেশ্যে কোনও চুক্তিতে প্রবেশ করে, তবে এই কাজ অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। আর সে জন্য তিনি ৫ বছরের বেশি নয় অথবা কমপক্ষে ১ বছর কারাদণ্ড বা ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
উদাহরণঃ
১. ভেঙ্কটাকৃষ্ণ নামক জনৈক ব্যক্তি, ভেঙ্কটচালাম এর মেয়ের বিয়ে দিবে এবং বিনিময়ে কিছু পরিমাণ অর্থ নিবে সম্মতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু মাদ্রাজ হাইকোর্ট রায় দেন যে, এই ধরনের প্রতিশ্রুতি একটি বিবাহ দালালি চুক্তি, কাজেই তা অকার্যকর। [ভেঙ্কটাকৃষ্ণ বনাম ভেঙ্কটচালাম, ৩২ ম্যাড ১৮৫]
২. বিবাদী গঙ্গারাজু নামক ব্যক্তির দ্বিতীয় স্ত্রী সংগ্রহ করে দিবে সম্মতিতে বৈদ্যনাথ নামক জনৈক পুরোহিতকে সে নির্দিষ্ট পরিমাণ কিছু অর্থ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু মাদ্রাজ হাইকোর্ট রায় দেন যে, যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তা জননীতি বা জনস্বার্থ বিরোধী, কাজেই তা অকার্যকর [বৈদ্যনাথন বনাম গঙ্গারাজু (১২৯০) ১৭ ম্যাড ৯]।
উপরোক্ত অবস্থায় যদি বিবাহ সম্পাদন করা হয় এবং প্রতিশ্রুত অর্থ বাকী থাকে। তবে এটি আদালতে মামলা দ্বারা পুনরুদ্ধার করা যাবে না। তবে, যদি এই ধরনের চুক্তি অনুযায়ী অর্থ প্রদান করা হয় এবং বিবাহও সম্পাদিত হয়, তবে টাকাটি ফিরে পাওয়া যাবে না
COMMENTS