দৈনন্দিন জীবনে চুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম। তবে এমন কিছু চুক্তি আছে যে গুলির আইনী কোন মূল্য নাই অর্থাৎ সে সব চুক্তি গুলি বাতিল হিসেবে গণ্য করা হ...
দৈনন্দিন জীবনে চুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম। তবে এমন কিছু চুক্তি আছে যে গুলির আইনী কোন মূল্য নাই অর্থাৎ সে সব চুক্তি গুলি বাতিল হিসেবে গণ্য করা হয়। এমনকি সেগুলি জননীতি বিরোধী।
নিম্নে আমি জনস্বার্থ বিরোধী চুক্তিগুলি কী কী তা বিস্তারিত আলোচনা করব।
What are the Agreements Opposed to Public Policy?
জনস্বার্থ বিরোধী চুক্তিগুলি কী কী?
একটি চুক্তি যা "জননীতির" বিরোধী, তাতে উভয় পক্ষই তা প্রয়োগ করতে পারে না। জননীতি হ'ল "আইনের নীতি"। কোনও চুক্তি জন নীতিবিরোধী বা না তা এই প্রশ্নটি সাধারণ নীতিগুলির ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং কোনও বিশেষ চুক্তির শর্তাদি বিবেচনা করে নয়।
- Trading with foreign enemies বা বিদেশী দুশমনের সহিত ব্যবসায়িক চুকি;
- Contract for stifling prosecutions বা মামলায় প্রতিবন্ধকতা চুক্তি;
- Misuse of legal process বা আইন প্রক্রিয়ার অপব্যবহার;
- Marriage brokerage বা বিবাহ দালালী;
- Agreement in restraint of marriage বিবাহে বাধামূলক চুক্তি;
- Contract for sale of public offices সরকারি চাকুরী ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি;
- Immoral contracts বা অনৈতিক চুক্তি;
- Agreement in restraint of trade বা ব্যবসায় বাধামূলক চুক্তি।
বিদেশী দুশমনের সাথে ব্যবসায়িক চুক্তি
সরকারের অনুমতি ছাড়া বিদেশী দুশমনের সাথে ব্যবসায়িক আদান-প্রদান চলে না। কাজেই এরুপ পরিস্থিতিতে কোন চুক্তি হলে তা জনস্বার্থী হিসেবে চিহ্নিত হবে।
উদাহরণঃ
বাংলাদেশের সহিত যদি ভারতের বন্ধুত্বসূলভ সম্পর্কে না থাকে, তবে বাংলাদেশী কোন কোম্পানী ভারতের কোন কোম্পানীর সহিত ব্যবসায়িক চুক্তি করলে তা জনস্বার্থ বিরোধী চুক্তি হবে।
মামলায় প্রতিবন্ধকতার চুক্তি
ফৌজদারী অপরাদের জন্য প্রত্যেক ব্যক্তির বিচার হওয়া ও দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। এরুপ অপরাধ হলে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ কোন নালিশ করবে না কিংবা করলেও একটা আপোস রফা করা হবে এই মর্মে কোন চুক্তি করা জনস্বার্থ বিরোধী। ফৌজদারী কার্যবিধিতে কিন্তু লঘু অপরাধের তালিকা রয়েছে। যেগুলির জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগণ আপোস রফা করতে পারে। কিন্তু মামলা দায়ের করতে কেউ নিষেধ করতে পারে না। দেওয়ানী মামলার ক্ষেত্রে সাধারণতঃ আপোস করা চলে। এ ব্যপারে সালিশী আইন (Arbitration Act) রয়েছে। উক্ত আইনের বিধান মতে সালিশীর নিমিত্ত চুক্তি বৈধ। কিন্তু কোন চুক্তি দ্বারা আদালতের আশ্রয় নেয়া হতে বিবৃত্ত রাখার প্রচেষ্টা চুক্তি আইনের ২৮ ধারার বিধান মতে নিষিদ্ধ।
আইনের প্রক্রিয়ার অপব্যবহার
আইনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে কোন ব্যক্তি তার বৈধ অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারে এবং এ অধিকারে কেউ অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত প্রতিকার পাওয়া যায়। স্বীয় অধিকার প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে যদি কেউ অন্য কাউকে বিরক্ত করার জন্য বা অযৌক্তিক আর্থিক সুবিধার উদ্দেশ্যে মামলা দায়ের করে বা অন্যকে দায়ের করতে প্ররোচিত করে, তবে তা আইনে সমর্থনীয় হবে না।
তাই বৃটিশ আইনে প্রবর্তিত মেইন্টেনেন্স ও চাম্পার্টিকে বাংলাদেশ আইনের ক্ষেত্রে বিশেষ জনস্বার্থ বিরোধী হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। নিজের স্বার্থের জন্য এমন মামলায় কোন পক্ষকে অর্থ সাহায্য দ্বারা মামলা চালাতে বা তার বিরুদ্ধে আনীত মামলা প্রতিহত করতে প্ররোচিত করা হচ্ছে (Maintainance and Champerty)। কোন ব্যক্তিকে মামলার ব্যাপারে এই শর্ত সমর্থন করা যে, বিতর্কিত বিষয়টি উদ্ধারের পর তাকে তার অংশ প্রদান করতে হবে।
ভগতদয়াল শিং বনাম দেবীদয়াল সাহু মামলায় প্রিভি কাউন্সিল এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে, যদি কোন মামলা সদুদ্দেশ্যে প্রণোদিত হয়ে থাকে, তবে সে ক্ষেত্রে উদ্ধারকৃত সম্পত্তির অংশ প্রদানের চুক্তি জনস্বার্থ বিরোধী নয় কিন্তু অসৎ উদ্দেশ্যে তা দায়ের করা হলে এরুপ চুক্তি জনস্বার্থ বিরোধী হিসেবে গণ্য হবে।
বিবাহের দালালি
জনস্বার্থ বিরোধী চুক্তির মধ্যে বিবাহের দালালিও অন্তর্ভূক্ত। বিস্তারিত জানতে পড়েতে পারেনঃ বিবাহ দালালি কী জনস্বার্থ বিরোধী চুক্তি?
বিবাহে বাধামূলক চুক্তি
১৮৭২ সালের চুক্তি আইনের ২৬ ধারাতে বলা হয়েছে যে, নাবালক ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তির বিয়ের ব্যপারে বাধা নিষেধ আরোপের উদ্দেশ্যে গঠিত চুক্তি বাতিল হিসেবে গণ্য হবে। ১৯২৯ সালের বাল্য বিবাহ নিরোধক আইন লংঘন করে বিয়ে দেওয়া সরকারী নীতি বিরোধী।
বিয়ে একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও সামাজিক রীতি। বিয়ে করতে কেউ আইনতঃ বাধ্য নয়, আবার বিয়ে করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে নিবৃত্তি রাখাও আইন সম্মত নয়। বিয়ের ব্যাপারে ব্যক্তি স্বাধীনতাকে প্রভাবিত করে এরুপ চুক্তি করা জনস্বার্থ বিরোধী।
উদাহরণঃ
‘ক’ ও ‘খ’ এর মধ্যে যদি এই মর্মে কোন চুক্তি হয় যে, একজন অপরজনকে ছাড়া বিয়ে করবে না, যদি করে তবে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে বাধ্য থাকবে। এই ধরণের চুক্তিতে বিয়ে করার কোন প্রতিশ্রুতি নাই বরং এটা হচ্ছে কাউকে বিয়ে না করার অঙ্গিকার। কাজেই এটা বাধ্যতামূলক চুক্তি বিধায় তা বাতিল।
অনুরুপভাবে, কোন বিবাহিত লোক যদি তার স্ত্রীর সাথে এই মর্মে চুক্তি করে যে, স্ত্রীর মৃত্যূর পর সে আর কাউকে বিয়ে করবে না কিংবা অপর কোন মহিলার সাথে এই মর্মে চুক্তি করে যে, তার স্ত্রীর মৃত্যূর পর সেই মহিলাকেই বিয়ে করবে, তা হলে সকল চুক্তি জনস্বার্থ বিরোধী বিধায় বাতিল হিসেবে গণ্য হবে।
সরকারী চাকুরী ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি
সরকারী চাকুরী প্রদানের উদ্দেশ্যে যদি কোন চুক্তি করা তবে তা জনস্বার্থ বিরোধী। যেমন, ‘ক’ একজন সরকারী কর্মচারী, যথাসময়ের পূর্বে অবসর গ্রহণ করার জন্য ‘খ’ এর সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হয় এই শর্তে যে,অবসর গ্রহণ করার পর উক্ত পদে ‘খ’ কে নিয়োগ করা হবে। এই চুক্তিও বাতিল হিসেবে গণ্য হবে।
নৈতিকতা বিরোধী চুক্তি
অনৈতিকতা বলতে সাধারণতঃ যৌন সংক্রান্ত অসামাজিকতা বুঝায়। অসামাজিক কাজ কর্মের চুক্তি জনস্বার্থ বিরোধী বিধায় তা অবৈধ। তাই বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ না হয়ে স্বামী-স্ত্রী রুপে সহবাস করার চুক্তি কিংবা পতিতাবৃত্তির নিমিত্তে কোন ঘরভাড়ার চুক্তি নৈতিকতা বিরোধী।
ব্যবসায় বাণিজ্যে বাধ্যতামূলক চুক্তি
যে কোন লোকের বৈধ ব্যবসায়, চাকুরী, বা পেশা পরিচলানার ব্যাপারে বাধার সৃষ্টি করে তা বাতিল। বাংলাদেশের চুক্তি আইনের ২৭ ধারাতে বলা হয়েছে যে, চুক্তি দ্বারা কোন ব্যক্তিকে যে কোন বৈধ ব্যবসায় বা পেশা থেকে বিবৃত্ত রাখা হয়, সে সীমা পর্যন্ত তা বাতিল। কিন্তু নিম্নোক্ত ব্যতিক্রম আইনে স্বীকৃত হয়েছেঃ
- কোন ব্যবসায়ের সুনাম যদি বিক্রি করা হয় তবে সুনাম বিক্রেতা, ক্রেতার সাথে এই চুক্তি করতে পারে যে, যতদিন ক্রেতা একটা নির্দিষ্ট এলাকায় উক্ত ব্যবসা পরিচালনা করবেন ততোদিন সুনাম বিক্রেতা ঐ এলাকায় একই ব্যবসা পরিচালনা করা হতে বিরত থাকবেন। অবশ্যই এই সীমা যুক্তি সঙ্গত হতে হবে।
- অংশীদারিত্বের বিলুপ্তির পর অংশীদারগণ এই মর্মে চুক্তি করতে পারে যে, তারা অনুরুপ ব্যবসায় একটা যুক্তি সঙ্গত এলাকার মধ্যে পরিচালনা করবে না।
- অংশীদারগণ এই মর্মে চুক্তি করতে পারে যে, অংশীদারীত্ব চালু থাক অবস্থায় তারা আর অনুরুপ ব্যবসা পরিচালনা করবেন না।
COMMENTS