সংবিধান বলতে কতিপয় লিখিত বা অলিখিত মৌলিক বিধিমালাকে বুঝায়। যা কোন রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করে এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষম...
সংবিধান বলতে কতিপয় লিখিত বা অলিখিত মৌলিক বিধিমালাকে বুঝায়। যা কোন রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করে এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহারের ও বন্টনের নীতি নির্ধারণ করে। আধুনিক বিশ্বে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সংবিধান এক অপরিহার্য দলিল।
নিম্নে আমি বাংলাদেশের সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচন করব।
What are the features of the constitution of Bangladesh?
বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?
গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানটি ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর জাতীয় সংসদে বিপুল ভোটে গৃহীত হয় এবং ঐ বছরের ১৬ ডিসেম্বর হতে কার্যকরী করা হয়। ইতিমধ্যে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১৭ বার এই সংবিধানের সংশোধনী করা হয়। বাংলাদেশ সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরুপঃ
(১) প্রজাতন্তঃ সংবিধানের প্রথমেই বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ হলো একটি একক স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র, যাকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামে অভিহিত করা হয়।
(২) রাষ্ট্রীয় মূলনীতি সমূহঃ প্রথম সংবিধানটি ৪টি রাষ্ট্রীয় মূলনীতির উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলি হচ্ছেঃ
- জাতীয়তাবাদ;
- গণতন্ত্র;
- নিরপেক্ষতা; ও
- সমাজতন্ত্র।
পরবর্তীকালে পঞ্চম সংশোধনীতে এর পরিবর্তন করা হয়েছে। পরিবর্তিত মূল নীতিগুলি হচ্ছে-
- সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসই হবে যাবতীয় কার্যাবলীর মূল ভিত্তি;
- গণতন্ত্র;
- জাতীয়তাবাদ; ও
- সমাজতন্ত্র অর্থাৎ সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিচার।
(৩) নাগরিকত্বঃ বাংলাদেশের সকল নাগরিক বাংলাদেশী বলে পরিচিত হবেন।
(৪) রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সরকারঃ বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে সংসদীয় শাসন পদ্ধতীর উল্লেখ থাকলেও চতুর্থ ও পঞ্চম সংশোধনীর দ্বারা রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির প্রচলন করা হয়। ১৯৯১ সালে দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আবার সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রবর্তনের জন্য বিল পাশ করা হয়েছে।
(৫) এককেন্দ্রীক সরকারঃ গ্রেট ব্রিটেনের ন্যায় বাংলাদেশে এককেন্দ্রীক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছে এবং সকল সরকারী ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের উপর ন্যাস্ত হবে।
(৬) এক কক্ষ বিশিষ্ট সংসদঃ বর্তমান শাসনতন্ত্র অনুযায়ী বাংলাদেশে এক কক্ষ বিশিষ্ট জাতীয় সংসদ থাকবে। ৩০০ জন গণপ্রতিনিধি নিয়ে এই সংসদ গঠিত হবে। এছাড়া ৪৫ জন মহিলা সদস্য থাকবে।
(৭) সংবিধানের সার্বভৌমত্বঃ সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন এবং জনগণের আশা-আকাংখা বাস্তবায়নের একমাত্র পথ নির্দেশক। তাই সংবিধানের সার্বভৌমত্ব এখানে স্বীকৃত হয়েছে। সংবিধানের সহিত সামঞ্জস্যহীন যে কোন আইন বাতিল বলে গণ্য হবে।
(৮) জনগণের সার্বভৌমত্বঃ সকল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং শাসনতন্ত্রের বিধান মোতাবেক জনগণের পক্ষে সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন।
(৯) মৌলিক অধিকারঃ শাসনতন্ত্রে নাগরিক গণের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে এবং মৌলিক অধিকার সমূহ যথাযথভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এগুলির মধ্যে অবাধ চলাফেরা, বাক স্বাধীনতা, চিন্তা, ও বিবেকের স্বাধীনতা, সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা, পেশা ও বৃত্তির অধিকার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
(১০) পৃথক বিচার বিভাগঃ সংবিধান মোতাবেক বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত “বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট” নামে অভিহিত। ইহা হাইকোর্ট বিভাগ ও আপীল বিভাগ নিয়ে গঠিত। সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রের প্রশাসনিক অঙ্গসমূহ হতে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ রাষ্ট্র কর্তৃক নিশ্চিত করা হবে।
(১১) অনমনীয় সংবিধানঃ বাংলাদেশের সংবিধান মূলতঃ অনমনীয় প্রকৃতির যদিও ইহা আংশিক নমনীয় এবং আংশিক অনমনীয়। জাতীয় সংসদেরে অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য একমত না হলে এবং রাষ্ট্রপতি সম্মতি প্রদান না করলে কোন সংশোধনী কার্যকর হবে না।
এই সকল মূল বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণীত হয়েছে। ভাল সংবিধানের বৈশিষ্ট্যসমূহের অনেকগুলি বাংলাদেশের সংবিধানে বিদ্যমান। তাই বলা যায় বাংলাদেশের সংবিধান একটি ভাল সংবিধান।
COMMENTS