বাংলাদেশে প্রযোজ্য ১৮৮২ সালের ট্রাষ্ট আইনে ট্রাষ্টের একটি সংবিধিবদ্ধ সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই আইনের ৩ নম্বর ধারাতে বলা হয়েছে যে, ট্রাষ্ট হলো ক...
বাংলাদেশে প্রযোজ্য ১৮৮২ সালের ট্রাষ্ট আইনে ট্রাষ্টের একটি সংবিধিবদ্ধ সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই আইনের ৩ নম্বর ধারাতে বলা হয়েছে যে, ট্রাষ্ট হলো কোন সম্পত্তির মালিকানা সম্পর্কিত এমন এক বাধ্যবাধকতা যা সম্পত্তির মালিক কর্তৃক বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে গৃহীত কিংবা অন্যের উপকারার্থে বা মালিকের নিজের কল্যাণার্থে তার দ্বারা ঘোষিত এবং গৃহীত বিশ্বাস থেকে উৎকলিত। আর ট্রাষ্ট সৃষ্টিতে কিছু প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে।
সুতরাংনিম্নে আমি ট্রাষ্ট গঠনের অত্যাবশ্যকীয় তিনটি উপাদান সম্পর্কে আলোচনা করব।
What are the three certainties of trust?
ট্রাষ্টের ক্ষেত্রে তিনটি নির্দিষ্টতা কী কী?
বাংলাদেশে প্রযোজ্য ট্রাষ্ট আইনের ৬ ধারায় ট্রাষ্ট গঠনের জন্য ৩টি নিশ্চয়তার কথা বলা হয়েছে। ইংল্যান্ডেও ১৮৪০ সালে অনুষ্ঠিত নাইট বনাম নাইট মামলায় লর্ড ল্যাংটেন ট্রাষ্ট গঠনের জন্য ৩টি বিষয়ের নির্দিষ্টতা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। যেগুলিকে "The rule of three certainties" বলা হয়। সুতরাং একটি বৈধ ট্রাষ্ট সৃষ্টির জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদানগুলিকে তিনটি নির্দিষ্ট বিষয়ে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ-
- বক্তব্যের নির্দিষ্টতা (Certainty of words);
- বিষয় বস্তুর নির্দিষ্টতা (Certainty of subject matter); ও
- উদ্দেশ্যের নির্দিষ্টতা (Certainty of object)।
বক্তব্যের নির্দিষ্টতা
ট্রাষ্ট সৃষ্টিকারীর সুষ্পষ্ট বক্তব্য বা ঘোষণার উপরই ট্রষ্ট সৃষ্টির বৈধতা অনেকাংশে নির্ভরশীল। ট্রাষ্ট সৃষ্টির ক্ষেত্রে দাতার বক্তব্য যদি সুনির্দিষ্ট বা সুস্পষ্ট ভাষায় প্রকাশ না পায় তবে ধারণা করা যেতে পারে যে, সত্যিকার অর্থে দাতা কর্তৃক কোন ট্রাষ্ট সম্পাদিত হয় নাই। অতএব, দাতাকে সুনির্দিষ্ট কথার মাধ্যমে এবং সুস্পষ্ট ভাষায় প্রকাশের মাধ্যমে ট্রাষ্ট গঠনেরে উদ্দেশ্য ব্যক্ত করতে হবে।
বিষয় বস্তুর নির্দিষ্টতা
একটি ট্রাষ্টে অবশ্যই ট্রাষ্টকৃত বিষয় বস্তুর অস্তিত্ব থাকতে হবে। ইংল্যান্ডের আইনের যে কোন হস্তান্তরযোগ্য সম্পত্তি ট্রাষ্টের বিষয় বস্তু হতে পারে, বাংলাদেশে এর কিছু ব্যতিক্রম আছে। কোন কোন সম্পত্তি হস্তান্তরযোগ্য তা (Transfer of Property Act, 1882) সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৬ ধারাতে বিবৃত আছে। ট্রাষ্ট সৃষ্টির উদ্দেশ্যে দাতা যদি ট্রাষ্টকৃত সম্পত্তিটিকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত না করে, তবে তা বিফল হবে। বিষয় বস্তুর এই নির্দিষ্টতাকে দু’টি বিশেষ অর্থে বিভক্ত করা যায়। যথাঃ
- ট্রাষ্ট সংক্রান্তু সম্পত্তি; ও
- লাভ ভোগীর স্বার্থ।
ট্রাষ্টকৃত সম্পত্তি নির্দিষ্ট সম্পত্তি হিসেবে সনাক্তকরণ যোগ্য হতে হবে এবং ঘোষণাও সে মর্মে হতে হবে। বিষয়বস্তু সম্পর্কে অস্পষ্ট ঘোষণা ট্রাষ্টকে বাতিল করে দিবে।
এছাড়া ট্রাষ্টকৃত সম্পত্তিতে লাভভোগীর স্বার্থ ও নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। কোন উইলকারী যদি তার সম্পত্তির যথাযথ চিহ্নিতকরণ ছাড়াই ট্রাষ্ট সম্পাদন করেন, তবে সম্পত্তিটির কোন অংশ বা কোন স্বত্ব লাভভোগী ভোগ করবে তা সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় না। তাই এক্ষেত্রে লাভভোগীর উপর কোন স্বত্ব বর্তাবে না। ফলে, ট্রাষ্টটি ব্যর্থ হয়ে যাবে।
উদ্দেশ্যের নির্দিষ্টতা
যে উদ্দেশ্যে ট্রাষ্ট সৃষ্টি করা হয় সে উদ্দেশ্যে অবশ্যই সুস্পষ্টভাবে এবং সুনির্দিষ্টভাবে দলিলে উল্লেখ করতে হবে। দাতাকে অবশ্যই সুস্পষ্টভাবে নিরুপণ করতে হবে যে, কে বা কারা ট্রাষ্টের লাভভোগী হবে এবং তাদের স্বার্থ কতটুকু, তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করতে হবে। অন্যথায় ট্রাষ্টটি বাতিল হয়ে যাবে।
বাংলাদেশের ট্রাষ্ট আইনের ৬ ধারায় ট্রাষ্ট সৃষ্টির ক্ষেত্রে এরুপ সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলি বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বক্তব্যের অনির্দিষ্টতার কারণে কিংবা বিষয়বস্তুর অনির্দিষ্টতার কারণে ট্রাষ্টের পতন হলে ট্রাষ্ট সম্পত্তি লাভ-ভোগীর স্বার্থের অনুকূলে চলে যায়, ট্রাষ্ট সৃষ্টিকারীর নিকট ফিরে আসে না। কিন্তু উদ্দেশ্যের অনির্দিষ্টতার কারণে ট্রাষ্ট ব্যর্থ হলে ট্রাষ্টকর্তা বা তার অবর্তমানে স্বাভাবিক উত্তরাধিকারীগণের নিকট সম্পত্তিটি ফিরে আসে।
COMMENTS