ট্রেসপাশ বা অনধিকার প্রবেশ একটি টর্ট অপরাধ। আমাদের চারপাশে অহরহ মানুষ এই অপরাধের শিকার হয়ে থাকে বা হচ্ছে। সুতরাং ট্রেসপাশ বা অনধিকার সংক্রান...
ট্রেসপাশ বা অনধিকার প্রবেশ একটি টর্ট অপরাধ। আমাদের চারপাশে অহরহ মানুষ এই অপরাধের শিকার হয়ে থাকে বা হচ্ছে। সুতরাং ট্রেসপাশ বা অনধিকার সংক্রান্ত অপরাধ সম্পর্কে আপনার সম্যক জ্ঞান থাকা বাঞ্চনীয়।
অতঃএব, আমি এখানে ট্রেসপাশ কিভাবে সংঘঠিত হয়, সে ব্যপারে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরছি। আশা করি, অনেক ট্রেসপাশ ভিকটিমদের উপকারে আসবে।
What does trespass mean in law?
আইনে অনধিকার প্রবেশ বলতে কী বুঝায়?
ট্রেসপাশ বা অনধিকার প্রবেশ বলতে আইন দ্বারা নির্ধারিত সীমারেখা অতিক্রম করাকে বুঝায়। প্রত্যেক ব্যক্তির নিজস্ব সম্পত্তি ভোগ-দখল করা এবং শরীর বা দেহ অস্পর্শ রাখার অধিকার রয়েছে। এ অধিকারে অহেতুক হস্তক্ষেপ করাকে ট্রেসপাশ বলে। প্রকৃত ক্ষতির প্রমাণ ব্যতিরেকেই ট্রেসপাশ প্রতিকারযোগ্য।
অনধিকার প্রবেশ তিন ধরণের হতে পারে। যথা-
- Person বা দেহে অন্যায় হস্তক্ষেপ;
- Land বা ভূমিতে হস্তক্ষেপে;
- Goods বা বস্তুতে অনধিকার প্রবেশ।
(ক) ব্যক্তির উপর অনধিকারঃ
কোন ব্যক্তির উপর অনধিকার বলতে অনুমতি ব্যতিরেকে প্রত্যক্ষভাবে শরীরে হস্তক্ষেপ বুঝায়। শরীরে অনধিকার হস্তক্ষেপ তিন প্রকারের হতে পারে। এগুলি নিম্নরুপঃ
(১) আক্রমন (Assault): আঘাত করতে উদ্যত হলে মানুষের মনে স্বাভাবিকভাবে একটা ভীতির সঞ্চার হয়। এরুপ উদ্যমকে আক্রম বলে। অবশ্য এই আঘাত করা ইচ্ছা ও ক্ষমতা আক্রমণকারীর মধ্যে থাকতে হবে। যেমন, মুষ্ঠাঘাত করতে উদ্যত হওয়া, লাঠি মারতে এগিয়ে আসা, বন্দুক উঁচানো ইত্যাদি সবই আক্রমন হিসেবে গণ্য হয়।
(২) আঘাত (Battery): বিরুদ্ধ মনোভাব নিয়ে রাগের বশর্বতী হয়ে আইনসঙ্গত কারণ ছাড়া কারো শরীরে বল প্রয়োগ করলে তাকে আঘাত বলে। বল প্রয়োগ বলতে সামান্য স্পর্শও বুঝায়। অবশ্য কাজটি স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হতে হবে। রাগান্বিত হয়ে কারো কান ধরা, ইচ্ছার বিরুদ্ধে মহিলাকে চুম্বন দেওয়া, বসার সময় চেয়ার সরানোর ফলে মেঝেতে পড়ে যাওয়া ইত্যাদি সবই আঘাত হিসেবে ধরা হয়।
(৩) কৃত্রিম অবরুদ্ধকরণ (False Imprisonment): স্বল্প সময়ের জন্য হলেও বৈধ কারণ ব্যতীত যে কোন স্থানে কারো ব্যক্তিগত চলা-ফেরার স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণ রোধ করাকে কৃত্রিম অবরুদ্ধকরণ বলে। চলা-ফেরার স্বাধীনতা রোধ করা হয়েছে এট সে সময়ে বাদীর জানার প্রয়োজন নাই। তাই ঘুমন্ত অবস্থায় ঘরে তালা লাগানো এবং জেগে উঠার আগে তালা ঘুলে দেয়া এই টর্টের অন্তর্ভূক্ত।
কোন বিশেষ দিকে যেতে বাধা দেয়া এই টর্টের আওতায় পড়ে না। কাউকে জোরপূর্বক কোথাও বসিয়ে রাখা, কোথাও যেতে বাধ্য করা, মেয়াদ অন্তে কয়েদীকে জেলে রাখা ইত্যাদি কৃত্রিম অবরুদ্ধকরণ টর্ট হিসেবে গণ্য হয়েছে।
(খ) জমির উপর অনধিকারঃ
বৈধ কারণ ছাড়া অন্যের জমির দখলের উপর প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপকে জমিতে অনধিকার প্রবেশ বলা হয়। নিম্নবর্ণিত তিনটি পদ্ধতিতে এই টর্ট সংঘটিত হতে পারেঃ
(১) অবৈধ প্রবেশঃ যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে অন্যের অঙ্গনে প্রবেশ করা ট্রেসপাশ। জানালায় হাত ঢুকানো, দেয়ালে হেলান দেয়া, অনিচ্ছাকৃতভাবে বা ভূলক্রমে প্রবেশ করা, এই অপকর্মের অন্তর্ভূক্ত। ভূমির নিচে বা গৃহের উপরে প্রবেশ করাও অন্যায়। নিজে প্রবেশ না করে গবাদী পশু বা অন্য কিছু প্রবেশ করালেও এই টর্ট সংঘটিত হয়।
(২) অবৈধ অবস্থানঃ বৈধ কারণ ব্যতীত অন্যের ভূমিতে প্রবেশ করা যেমন অন্যায়, বৈধ কারণে অন্যের ভূমিতে প্রবেশ করে নির্দিষ্ট সময় অন্তে বা নির্দিষ্ট কাজের পর অবস্থান করা অবৈধ। এরুপ অবৈধ অবস্থানের দ্বারা ভূমিতে ট্রেসপাশ সংঘটিত হয়।
(৩) কোন বস্তু রাখা বা নিক্ষেপণঃ যথার্থ কারণ ছাড়া অন্যের অঙ্গনে কোন বস্তু রাখলে বা নিক্ষেপ করলে ভূমিতে ট্রেসপাশ সংঘটিত হয়। তাই অন্যের দেয়ালে পেরেক ঢুকানো, লতাগুল্ম লাগানো, মই লাগানো কিংবা দেয়াল ঠেকায়ে আবর্জনা ফেলা ইত্যাদি সবই ট্রেসপাশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। কিন্তু এ সকল কাজ প্রত্যক্ষ হতে হবে। কারো অঙ্গনে ঢিল ছুঁড়া প্রত্যক্ষ কাজ এবং তাই এটা ট্রেসপাশ। কিন্তু দেওয়াল হতে কিছু ধসে অন্যের অঙ্গনে পড়লে তা পরোক্ষ এবং সেজন্য এটা ট্রেসপাশ হবে নয়; বরং এটা উৎপাত।
(গ) বস্তুর উপর অনধিকার প্রবেশঃ
কারো দখলকৃত বস্তুতে অন্যায় হস্তক্ষেপ করলে বস্তুর উপর অনধিকার প্রবেশ সংঘটিত হয়। যেমন- অন্যের ক্ষতি সাধন করার উদ্দেশ্যে তার গাড়ীর চাকা খুলে নেয়া কিংবা কারো গবাদি পশুর ক্ষতি করা ইত্যাদি। এই অপকার তিন পদ্ধতিতে সংঘটিত হতে পারেঃ
(১) আটক রাখা (By seizure): কোন দ্রব্যের বা বস্তু কারো দখলে থাকা অবস্থায় তা আটক করলে বা নিজ দখলে নিলে বস্তুর উপর অনধিকার প্রবেশ সংঘটিত হয়।
(২) অপসারণ দ্বারা (By removal): কারো দখলে থাকা অবস্থায় কোন বস্তু বা দ্রব্য অন্যায়ভাবে অপসারণ করলে এই টর্ট সংঘটিত হয়।
(৩) প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিসাধন দ্বারা (By causing damage): প্রত্যক্ষভাবে বলপ্রয়োগ দ্বারা বা শারীরিক স্পর্শ দ্বারা অন্যের দখলকৃত বস্তুর ক্ষতি সাধন করলে বস্তুর প্রতি অনধিকার প্রবেশ সংঘটিত হয়। অন্যের বাড়িতে ঢিল মেরে জানালার কাঁচ ভেঙ্গে দেয়া এ ধরনের অপরাধ।
১৯৪৯ সালে Stone v Bolton মামলায় (I. All E. R. 237) অনুরুপ ঘটনায় ইংল্যান্ডের আদালত রায় দেন যে, বিবাদীর আঙ্গিনা হতে একটা ক্রিকেট বল ছুটে এসে বাদীকে আঘাত করা কদাচিত ঘটে থাকে বিধায় তা উৎপাতের পর্যায়ে পড়ে না। তবে এটা ট্রেসপাশ বা অনধিকার প্রবেশের পর্যায়ে পড়ে। তাই এই সিদ্ধান্ত অনুসারে রাস্তায় দন্ডায়মান কোন ব্যক্তিকে ক্রিকেট বলে আঘাত করলে সে ব্যক্তি অনধিকার মামলা দায়ের করতে পারেন।
COMMENTS