প্রতিটি ধর্মের মানুষ স্ব স্ব ধর্ম পালন করে থাকে। আর পরকালীন শান্তির জন্য কিছু কর্ম করে থাকে। তদ্রুপভাবে, এন্ডাউমেন্ট বা দেবোত্তর পরলৌকিক শান...
নিম্নে হিন্দু আইনের দেবোত্তর সম্পর্কে আলোচনা করব। আশা করি আপনি উপকৃত হবেন।
What is Endowment in Hindu law?
হিন্দু আইনে দেবোত্তর কি?
আক্ষরিক অর্থে ‘দেবোত্তর’ বলতে দেবতার উদ্দেশে উৎসর্গীকৃত সম্পত্তি বুঝায়। ধর্মই একমাত্র বন্ধু, যা মরণেও অনুগমন করে। হিন্দু শাস্ত্রের এই অমর বাণীর উদ্দীপনায় কোন কোন বিত্তবান ব্যক্তি পরলৌকিক শান্তির কামনায় এবং দেবতার স্মৃতি চিরস্মরণীয় করার মানসে তাদের সম্পদ দেবতার উদ্দেশ্যে দান করে থাকেন। এরুপ উৎসর্গীকৃত সম্পত্তির উপর দাতার আর কোন স্বত্ব বাকী থাকে। ইহা চিরস্থায়ীভাবে দেবতার বা ঈশ্বরের সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। দাতা মন্দির নির্মাণ করে তাতে কোন দেবমূর্তির প্রতিষ্ঠা করতঃ নিয়ৎ পূজা অর্চণার ব্যবস্থা করেন। এ রকম বিগ্রহ বা দেবমূর্তি একটা আইনগত স্বত্ব (Juridical person) এবং ইহাই ঐ সম্পত্তির মালিক হিসেবে গণ্য।
পূজা অর্চণা ছাড়াও দাতব্য তথা মানবতার সেবার জন্যও সম্পত্তি উৎসর্গ করা যায়। এই মালিকের পক্ষে একজন স্বাভাবিক ব্যক্তি সকল কার্য পরিচালনা করে থাকেন তাকে বলে সেবাইত (Sebait)।
দেবোত্তর সৃষ্টি
দেবোত্তর সৃষ্টির জন্য লিখিত দলিল প্রণয়ন ট্রাস্ট সৃষ্টির প্রয়োজন হয় না। তবে উইলের মাধ্যমে দেবোত্তর সৃষ্টি করতে হলে তা লিখিত হবার প্রয়োজন। পত্তনীদারকে ঠকানোর জন্য যদি সম্পত্তি দান করা হয়, তবে তা দেবোত্তর সম্পত্তি বলে গণ্য হবে না। দেবোত্তর সৃষ্টির জন্য নিম্নোক্ত উপাদানগুলি অপরিহার্যঃ
- উৎসর্গীকরণ শর্তহীন হতে হবে;
- বিষয়বস্তু সুনির্দিষ্ট হতে হবে;
- উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট হতে হতে হবে;
- দাতাকে সুস্থ্য মস্তিষ্ক সম্পন্ন ও সাবালক হতে হবে;
- দাতার দান করার ক্ষমতা থাকতে হবে; ও
- ইহা দেশের আইনের পরিপন্থী হওয়া চলবে না।
- আংশিক (Partial Debuttar);
- ব্যক্তিগত (Private Debuttar); ও
- সার্বজনীন (Public Debuttar)।
আংশিক দেবোত্তর
কোন ব্যক্তির লাভজনক স্বার্থ সংরক্ষণ করা হলে তা হবে আংশিক। এক্ষেত্রে ঈশ্বরী ভুবনেশ্বরী বনাম ব্রজনাথ মামলা উল্লেখযোগ্য।
ব্যক্তিগত দেবোত্তর
আর কোন পরিবারের পূজা-অর্চণার জন্য সম্পত্তি উৎসর্গ করা হলে তা হবে ব্যক্তিগত। কোন বিশেষ পরিবারের সদস্যদের জন্য বা বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য দানকৃত সম্পত্তিকে ব্যক্তিগত দেবোত্তর বলে। পারিবারিক সদস্যদের জন্য এটা সংরক্ষিত থাকে বিধায় তাদের সম্মতিক্রমে এগুলির পরিবর্তন করা যায় এবং জনসাধারণের এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা কিছু থাকে না।
গণ-দেবোত্তর
উৎসর্গীকৃত সম্পত্তিতে কারো স্বার্থ সংরক্ষিত না থাকলে তাকে সার্বিক উৎসর্গ বলে। এ ক্ষেত্রে জগদীশ বনাম হেমন্ত মামলা উল্লেখযোগ্য। অর্থাৎ যে সকল দেবোত্তর সম্পত্তি কোন বিশেষ গোষ্ঠী বা পরিবারের জন্য সংরক্ষিত না রেখে ব্যক্তি সর্বসাধারণের জন্য অর্থাৎ সকল জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয় তাকে গণ-দেবোত্তর বলে। হিন্দু ধর্মাবলম্বী সকল ব্যক্তিরাই গণ-দেবোত্তর প্রবেশ ও ধর্ম ক্রিয়াদি সম্পন্ন করার অধিকারী বিধায় এ সকল সম্পত্তি প্রশাসনে কোন নিয়মনীতি ভঙ্গ করলে যে কোন হিন্দু এর প্রতিকারের জন্য আদালতের আশ্রয় নিতে পারে।
এছাড়া সর্বসাধারণের মঙ্গলের জন্য সম্পত্তিটি দান করা হয় বলে তা হবে সার্বজনীন দেবোত্তর।
COMMENTS