শরীআ আইন শর্ত সাপেক্ষ স্ত্রীকে তালাক প্রদানের অধিকার প্রদান করেছ। তবে, বাংলাদেশে প্রচলিত Dissolution of Muslim Marriages Act, 1939 বা মুসলিম...
শরীআ আইন শর্ত সাপেক্ষ স্ত্রীকে তালাক প্রদানের অধিকার প্রদান করেছ। তবে, বাংলাদেশে প্রচলিত Dissolution of Muslim Marriages Act, 1939 বা মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইনে স্ত্রী কর্তৃত বিচ্ছেদের যথেষ্ট সুযাগ রয়েছে।
সুতরাং আমি এখানে স্ত্রী কখন তালাক দিতে পারেন সে বিষয়ে বাংলাদেশে প্রচলিত আইন অনুসারে আলোচনা করব। আশা করি আপনি উপকৃত হবেন।
When can a wife divorce?
স্ত্রী কখন তালাক দিতে পারেন?
মুসলিম আইনে তালাক দেয়ার ক্ষমতা একমাত্র স্বামীর। স্ত্রীর কোন আইনগত ক্ষমতা নাই। ১৯৩৯ সালের বিবাহ বিচ্ছেদ আইন পাস হবার পর নিম্নোক্ত কারণে একজন মুসলিম স্ত্রী বিয়ে বিচ্ছেদের ডিক্রী পেতে পারেঃ
নিখোঁজ স্বামী
চার বছর যাবত স্বামীর কোন খোঁজ খবর জানা না থাকলে স্ত্রী বিয়ে বিচ্ছেদের দাবী করতে পারে। তবে মামলা শুনানীর সময় ওয়ারিশগণের মতামত শুনতে হবে। এই মামলায় আদালত ডিক্রী প্রদান করলেও ডিক্রীর তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে ইহা কার্যকরী হবে না। এই সময়ের মধ্যে স্বামী ব্যক্তিগতভাবে বা প্রতিনিধির মাধ্যমে হাজির হয়ে এই মর্মে আদালতের আস্থা সৃষ্টি করতে পারেন যে, তিনি স্বামী হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত আছেন তাহলে আদালত ঐ ডিক্রী বাতিল করে দিবেন।
ভরণ-পোষণে ব্যর্থতা
স্বামী তার সামাজিক মর্যদা অনুসারে স্ত্রীর ভরণ-পোষণ করতে আইনত বাধ্য। দুই বছর যাবত স্বামী তার এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে বা অবহেলা করলে স্ত্রী বিয়ে বিচ্ছেদ দাবী করতে পারেন। তবে কোন প্রকার যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতিরেকে স্ত্রী দাম্পত্য মিলনে অস্বীকার করলে স্বামী তার ভরণ-পোষণ দিতে বাধ্য থাকেন না। কিন্তু তলবী মোহরানা পরিশোধে ব্যর্থতার কারণে স্ত্রী এরুপ অস্বীকৃতি জানালে তা আইনত দূষণীয় নয় হেতু স্বামী এ ক্ষেত্রে ভরণ-পোষণ প্রদানে বাধ্য থাকে।
পুনরায় বিয়ে
মুসলিম আইন অধ্যাদেশের বিধান লংঘন করে স্বামী পুনরায় বিয়ে করলে স্ত্রী বিয়ে বিচ্ছেদের জন্য মামলা করতে পারেন।
স্বামীর কারাদন্ড
কোন অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়ে স্বামীর সাত বছর বা ততোধিক সময়ের জন্য কারাদন্ড হলে স্ত্রী বিয়ে বিচ্ছেদের জন্য মামলা দায়ের করতে পারেন। কিন্তু দন্ডাজ্ঞা চুড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত ডিক্রী দেয়া যাবে না।
দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা
স্বামী কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতীত একাধিক্রমে তিন বছর দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে, স্ত্রী বিয়ে বিচ্ছেদের জন্য ডিক্রী পাবার অধিকারিণী হবেন।
স্বামীর পুরুষত্বহীনতা
বিয়ের সময়ে স্বামীর নপুংসক অর্থাৎ সন্তান জন্মদানে অক্ষম থাকলে এবং পরবর্তীকালে সে অবস্থা অব্যাহত থাকলে স্ত্রী বিয়ে বিচ্ছেদ দাবী করে মামলা করতে পারেন। কিন্তু স্বামী যদি আদালতকে এই মর্মে সন্তুষ্ট করেন যে, তিনি উক্ত অক্ষমতা হতে পরিত্রাণ পেয়েছেন এবং এক বছরের মধ্যে প্রমাণ করেন যে, তিনি উৎপাদনের ক্ষমতা অর্জন করেছে তা হলে স্ত্রীর মামলা খারিজ হয়ে যাবে।
উন্মাদ স্বামী
স্বামী দুই বছর যাবৎ উন্মাদ থাকলে অথবা কুষ্টরোগ বা কোন সংক্রামক যৌন রোগে আক্রান্ত হলে স্ত্রী বিয়ে বিচ্ছেদ দাবী করতে পারেন।
বিয়ে অস্বীকার
স্ত্রীর ষোল বছর পূর্ণ হবার আগেই বিয়ে হয়ে থাকলে এবং ১৮ বছর পূর্ণ হবার আগেই স্ত্রী উক্ত বিয়ে অস্বীকার করে থাকলে, তিনি বিয়ে বিচ্ছেদের দাবী জানায়ে মামলা করতে পারেন।
স্বামীর নিষ্ঠুরতা
স্বামী স্ত্রীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করলে স্ত্রী বিয়ে বিচ্ছেদের ডিক্রী পেতে পারেন। নিম্নোক্ত আচরণগুলি নিষ্ঠুর হিসেবে গণ্য হবেঃ
- স্বামী প্রতিনিয়ত স্ত্রীকে মারধোর করেন, অথবা এমন নিষ্ঠুর আচরণ করেন বা দৈহিক নির্যাতন না হয়েও স্ত্রীর জীবনকে অসহ্য করে তোলে।
- স্বামী দুশ্চরিত্র নারীদের সাথে মেলামেশা করেন, অথবা কলঙ্কিত জীবন যাপন করেন।
- স্ত্রীকে নৈতিকতা বিরোধী জীবন-যাপন করতে চেষ্টা করেন বা তাকে বাধ্য করেন।
- স্ত্রীর সম্পত্তি অপচয় করেন, অথবা তাকে তার সম্পত্তির উপর আইনগত অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা প্রদান করেন।
- স্ত্রীকে ধর্ম চর্চা করতে বাধা প্রদান করেন।
- একাধিক স্ত্রী থাকলে কুরআনের নির্দেশ অনুসারে ন্যায়পরায়ণতার সহিত সমান ব্যবহার করেন না।
COMMENTS