বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ থেকে মজুরীর একটি সাধারণ সংজ্ঞা নির্ধারণ করা যেতে পারে। যেমন, কোন শ্রমিকের তার কর্মসংস্থান বা এই ধরনের চাকরীর ক্ষেত্র...
বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ থেকে মজুরীর একটি সাধারণ সংজ্ঞা নির্ধারণ করা যেতে পারে। যেমন, কোন শ্রমিকের তার কর্মসংস্থান বা এই ধরনের চাকরীর ক্ষেত্রে যে কাজের জন্য সম্মতি দেওয়া হয় তার জন্য প্রদেয় সমস্ত পারিশ্রমিক।
নিম্নে আমি শ্রমিকদের মজুরী সম্পর্কিত অধিকার বিষয়ে আলোচনা করব। আশা করি আপনি উপকৃত হবেন।
The rights of the workers relating to wages
শ্রমিকদের মজুরী সম্পর্কিত অধিকার
বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ২(৪৫) ধারায় মজুরী সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। ‘মজুরী’ অর্থ টাকায় প্রকাশ করা হয় বা যায় এমন সকল পারিশ্রমিক যা পরিষেবার শর্তাদি, সর্বজনীন বা নিহিত যেভাবেই থাকুক না কেন পালন করা হলে কোন শ্রমিককে তার চাকুরীর জন্য বা কাজ করার জন্য প্রদেয় হয়, এবং উক্তরুপ প্রকৃতির অন্য কোন অতিরিক্ত প্রদেয় পারিশ্রমিকও এর অন্তর্ভূক্ত হবে, তবে নিম্নলিখিত অর্থ অন্তরভূক্ত হবে না, যথাঃ
- বাসস্থান সংস্থান, আলো, পানি, চিকিৎসা সুবিধিা বা অন্য কোন সুবিধা প্রদানের মূল্য অথবা সরকার কর্তৃক সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দ্বারা বাদ দেওয়া হয়েছে এইরুপ কোন সেবার মূল্য;
- অবসর ভাতা, তহবিল বা প্রভিডেন্ট ফান্ডে মালিকের দ্বারা প্রদত্ত যে কোন চাঁদা;
- কোন ভ্রমণ ভাতা অথবা কোন ভ্রমণ রেয়াতের মূল্য; ও
- কাজের প্রকৃতির কারণে কোনও বিশেষ ব্যয় বহন করার জন্য কোনও শ্রমিককে যে অর্থ প্রদান করা হয়।
এই আইনের ১২০ ধারায় মজুরীর বিশেষ সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। মজুরীর উক্ত সংজ্ঞা ছাড়াও নিম্নোক্ত পাওনাগুলি এর অন্তর্ভূক্ত হবে।
বিষয় অথবা প্রসঙ্গের পরিপন্থী কোন কিছু না থাকলে, এই অধ্যায়ে ‘মজুরী বলতে ধারা ২(৪৫) এ মজুরী বলতে যে অর্থ করা হয়েছে তা, এবং নিম্নলিখিত পাওনাগুলিও এর অন্তর্ভূক্ত হবে, যথাঃ
- চাকরীর শর্তাদির অধীনে প্রদেয় কোনও বোনাস বা অন্য কোনও অতিরিক্ত পারিশ্রমিক;
- ছুটি, বন্ধ বা অতিরিক্ত সময়ের জন্য প্রদেয় যে কোনও পারিশ্রমিক;
- কোন আদালত আদেশ অথবা পক্ষদ্বয়ের মধ্যে কোন পুরষ্কার বা নিষ্পত্তির অধীনে প্রদেয় কোন পারিশ্রমিক;
- চাকুরির অবসান, উহা ছাটাই, ডিসচার্জ, অপসারণ, পদত্যাগ, অবসর, বরখস্ত অথবা অন্য যে কোন ভাবেই হোক না কেন, এর কারণে কোন চুক্তি বা এই আইনের অধীনে প্রদেয় কোন অর্থ; এবং
- লে-অফ অথবা অস্থায়ী বরখস্তের কারণে প্রদেয় কোন অর্থ।
মজুরী থেকে কর্তন
শ্রম আইন, ২০০৬ এর ১২৫ ধারার বিধান মোতাবেক কতিপয় কারণে মজুরী থেকে টাকা কেটে নেয়াকে মজুরী কর্তন বলে। নিম্নোক্ত কারণে মজুরী হতে কর্তন করা যাবেঃ
- মালিক কর্তৃক পূর্বে বিজ্ঞাপিত কারণে শ্রমিকের ত্রুটি বিচ্যূতি ঘটলে ২৫ ধারার বিধান সাপেক্ষে আরোপিত জরিমান;
- কর্তব্য কাজে অননুমোদিত অনুপস্থিতির জন্য;
- কোন শ্রমিকের হেফাজতে প্রদত্ত মালিকের কোন মালামালের ক্ষতি কিংবা যে অর্থের জন্য হিসাব দিতে তিনি দায়ী তার অবহেলার কারণে যদি তা বিনষ্ট হয়;
- মালিক কর্তৃক সরবরাহকৃত বাসস্থানের জন্য কর্তন;
- চাকুরীর প্রয়োজনীয়তার জন্য ব্যবহৃত কাঁচামাল এবং সরঞ্জাম ব্যতীত সরকার অনুমোদিত এবং নিয়োগকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধাগুলি এবং পরিষেবাদিগুলির জন্য কাটা;
- যে কোন অগ্রিম বা ঋণ পুনরুদ্ধারের জন্য কর্তন, বা অতিরিক্ত মজুরি সমন্বয়ের জন্য কর্তন;
- শ্রমিক কর্তৃক প্রদেয় আয়কর বাবদ;
- উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের আদেশ অনুযায়ী বা কোন আদালতের আদেশ মেনে;
- আইন অনুযায়ী ভবিষ্যৎ তহবিলের জন্য প্রদেয় চাঁদা;
- সরকার কর্তৃক অনুমোদিত কোন সমবায় সমিতিকে প্রদানের জন্য অথবা ডাকবিভাগ বা সরকারি কোন বীমা কোম্পানী কর্তৃক সংরক্ষিত কোন বীমা স্কীমকে প্রদানের জন্য কর্তন;
- শ্রমিকদের বা তাদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণের জন্য সরকারের অনুমোদনক্রমে মালিক কর্তৃক গঠিত তহবিলের জন্য প্রদেয় চাঁদা কর্তন; এবং
- চেক-অফ পদ্ধতিতে সিবিএ ইউনিয়নের জন্য চাঁদা।
মজুরী পরিশোধ
শ্রম আইন, ২০০৬ এর ১২৩ ধারায় এ সম্পর্কে বিধান রয়েছে। এগুলি নিম্নরুপঃ
(১) একজন শ্রমিককে তার মজুরির সময়কাল শেষ হওয়ার পরে সাত কার্যদিবসের মধ্যে অবশ্যই তার মজুরী প্রদান করতে হবে।
(২) যে ক্ষেত্রে কোন শ্রমিকের চাকুরি হতে তার অবসর গ্রহণের কারণে অবসান হয়, অথবা মালিক কর্তৃক তার ছাটাই, ডিসচার্জ, অপসারণ, বরখস্ত অথবা অন্য কোন কারণে উহার অবসান করা হয় সে ক্ষেত্রে উক্ত শ্রমিককে প্রদেয় সকল মজুরী তার চাকুরি অবসানের তারিখ হতে পরবর্তী সাত কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।
(৩) সকল মজুরী কর্মদিবসে পরিশোধ করতে হবে। কর্মদিবস বলতে কোন ছুটি বা বন্ধের দিন ব্যতীত এবং অফিস চলাকালীন সময় বুঝায়।
মজুরী কর্তন বা পরিশোধের বিলম্বের ক্ষেত্রে প্রতিকার
এ সম্পর্কে শ্রম আইনের ১৩২ ধারায় বিধান রয়েছে যা নিম্নরুপঃ
(১) যে ক্ষেত্রে এই আইনের বিধান লঙ্ঘন করে কোন শ্রমিকের মজুরী হতে কোন কর্তন করা হয় বা কোন শ্রমিকের মজুরী প্রদান করা না হয় অথবা তার মজুরী কিংবা কোন বিধির অধীনে প্রদেয় গ্রাচ্যুইটি বা ভবিষ্যৎ তহবিলের প্রাপ্য প্রদানে বিলম্ব হয় সে ক্ষেত্রে তিনি, অথবা তার মৃত্যূ হলে তার কোন উত্তরাধিকারী অথবা কোন আইনসঙ্গত প্রতিনিধি কর্তৃক মজুরী ফেরত পাওয়ার জন্য অথবা বকেয়া বা দেরী মজুরী ও অন্যান্য বকেয়া আদায়ের জন্য আপনি শ্রম আদালতে আবেদন করতে পারেন।
(২) এই ধরনের আবেদন সংশ্লিষ্ট শ্রমিক যেখানে কর্মরত ছিলেন বা যেখানে তাকে মজুরী দেওয়া হতো সে স্থানের শ্রম আদালতের এখতিয়ারাধীন, সে শ্রম আদালতে মজুরী কর্তনের তারিখ হতে অথবা ক্ষেত্রমত, মজুরী প্রদেয় হওয়ার তারিখ হতে বারো মাসের মধ্যে পেশ করতে হবে।
তবে শর্ত থাকে যে, উক্তরুপ কোন দরখস্ত উক্ত সময়ের পরেও পেশ করা যাবে যদি দরখস্তকারী শ্রম আদালতকে এই মর্মে সন্তুষ্ট করতে পারেন যে, উক্ত সময়ের মধ্যে দরখস্ত দাখিল না করার পিছনে তার যথেষ্ট করাণ ছিল।
(৩) উপ-ধারা (১) এর অধীন আবেদন প্রাপ্তির পরে শ্রম আদালত মজুরি প্রদানের জন্য এই অধ্যায়ের বিধানের অধীনে আবেদনকারী এবং মালিক বা অন্য কোনও ব্যক্তিকে শুনানির জন্য যুক্তিসঙ্গত সুযোগ দেবে এবং প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য প্রামাণ গ্রহণ করবে, এবং যে মজুরী কর্তন করা হয়েছে বা যে মজুরী পরিশোধ করা হয় নাই বা পরিশোধে বিলম্ব করা হচ্ছে উহা দরখস্তকারীরেক পরিশোধ করবার জন্য মালিক বা মজুরী প্রদানের জন্য দায়বদ্ধ ব্যক্তিকে নির্দেশ দিতে পারে।
(৪) উপ-ধারা (৩) এর অধীন কোন আদেশ এই আইনের অধীন উক্ত মালিক বা মুজরী পরিশোধের জন্য দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রহণীয় কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থার হানি করবে না।
(৫) শ্রম আদালত উপ-ধারা (৩) এর অধীন প্রদত্ত নির্দেশের সময় মজুরীর শতকরা ২৫ ভাগ ক্ষতিপূরণ হিসেবে দরখস্তকারীকে প্রদানের জন্যও মালিক বা মজুরী পরিশোধের জন্য দায়ী ব্যক্তি নির্দেশ দিতে পারেন।
(৬) বেতন পরিশোধে বিলম্বের ক্ষেত্রে উপ-ধারা (৫) এর অধীনে ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য কোন নির্দেশ দেওয়া যাবে না যদি শ্রম আদালত সন্তুষ্ট হন যে বিলম্বের কারণ ছিল-
- শ্রমিককে প্রদেয় মজুরীর পরিমাণ সম্পর্কে প্রকৃত ত্রুটি বা প্রকৃত বিরোধ;
- জরুরি বা বিশেষ পরিস্থিতির কারণে যথাযথ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সময়মতো মজুরী পরিশোধের জন্য দায়বদ্ধ ব্যক্তির অক্ষমতা; বা
- মজুরী গ্রহণে অথবা উহার জন্য দরখস্ত করতে শ্রমিকের ব্যর্থতা।
COMMENTS