মৃত্যূকালীন ঘোষণাকে বলা হয় Leterm Mortem (লেটারম মর্টেম) যার অর্থ ‘মৃত্যুর আগে শব্দগুলি বলেছিল’। ১২০২ সালে সর্ব প্রথম ইংল্যান্ডের কোর্টে এক...
মৃত্যূকালীন ঘোষণাকে বলা হয় Leterm Mortem (লেটারম মর্টেম) যার অর্থ ‘মৃত্যুর আগে শব্দগুলি বলেছিল’। ১২০২ সালে সর্ব প্রথম ইংল্যান্ডের কোর্টে একটি মামলায় ‘মৃত্যূকালীন ঘোষণা’ সাক্ষ্য হিসেবে গৃহিত হয়েছিল।
নিম্নে আমি মৃত্যূকালীন ঘোষণা ও উহার আইনী মূল্য সম্পর্কে আলোচনা করব। আশা করি আপনি উপকৃত হবেন।
Dying declaration and its legal value
মৃত্যূকালীন ঘোষণা ও উহার আইনী মূল্য
সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ এর ৩২ ধারাা মতে, কোন নিহত ব্যক্তি মৃত্যূর পূর্বে যদি তার মৃত্যূর কারণ, অবস্থা এবং পরিস্থিতি বর্ণনা করে কোন বিবৃতি বা জবানবন্দী প্রদান করে থাকেন তবে তাকে মৃত্যূকালীন ঘোষণা বলা হয়। ৩২(১) ধারায় বলা হয়েছে যে, যদি কোন মামলায় কোন মৃত ব্যক্তির কারণ সম্পর্কে কোন প্রশ্ন উঠে তখন ঐ ব্যক্তির মৃত্যূর কারণ সম্পর্কে অথবা যে অবস্থা বা পরিস্থিতিতে তার মৃত্যূ ঘটেছে সে সম্পর্কে যদি কোন বিবৃতি প্রদান করে থাকে, তবে এরুপ বিবৃতি প্রদানের সময় বিবৃতি দানকারীর মৃত্যূর আশাংকা উপস্থিত থাকুক বা না থাকুক এবং যে মামলায় তার মৃত্যূর কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন উঠে তার প্রকৃতি যাই থাকুক না কেন, উক্ত বিবৃতি প্রাসঙ্গিক।
এরুপ ঘোষণা লিখিত হতে পারে বা মৌখিক হতে পারে কিংবা ভাব ভঙ্গির মাধ্যমে প্রকাশিত হতে পারে। ইহা ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক ম্যাজিস্ট্রেট বা কোন বিশেষ ব্যক্তির নিকট ঘোষণা করতে হবে তা কোন বাধ্যবাধকতা বা বিধি-বিধান নাই। ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ অফিসার বা সাধারণ নাগরিকের নিকট এরুপ ঘোষণা বা বিবৃতি প্রদান করা যায়।
মারজুল মাউত অর্থাৎ মৃত্যূ ব্যাধিতে আক্রান্ত অবস্থায় পতিত হবার পর কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি দান করলে তা সুস্থ বা স্বাভাবিক অবস্থায় দানের মত গণ্য হবে না। উক্ত দান উইলের মত কার্যকরী হবে। [বেইলী ১ : ৫৫১]
যদি অনাত্মীয়কে দান করা হয় তাহলে সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত দান বহলা থাকবে। যদি উত্তরাধিকারী দান করা হয়, তাহলে বাতিল হয়ে যাবে। অবশ্য অন্যান্য উত্তরাধিকারীগণ সম্মতি প্রদান করলে তা আইন সিদ্ধ হবে। প্রখ্যাত মুসলিম আইন বিশারদ আমীর আলী ‘হেদায়া’ কে অনুসরণ করে এরুপ মতামত ব্যক্ত করলে আদালত এর বিপরীত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন [Beenjan Vs. Fatima Bibi 81.C. 431 Gulam Quadir Vs. Sardozi 91.C. 721]
মৃত্য ব্যাধিতে আক্রান্ত অবস্থায় পতিত হবার পর দান করলে তা স্বাভাবিক দানের ন্যায় হবে না; বরং উইলের মত হবে। কিন্তু পুরোপুর উইলের মতও নয়। অনাত্মীয়ের অনুকূলে এক-তৃতীয়াংশ সম্পত্তি অছিয়ত বা উইল করা যায় কিন্তু উত্তরাধিকারীগণ সম্মতি প্রদান করলে এর বেশি সম্পত্তিও উইল করা যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এক-তৃতীয়াংশের বেশি দান করা যায় না। আবার উত্তরাধিকারীর অনুকূলে সাধারণ উইল করা যায় না কিন্তু অন্যান্য উত্তরাধিকারীগণ সম্মত থাকলে তা করা যায়। কিন্তু মৃত্যূ ব্যাধিতে আক্রান্ত অবস্থায় দানের ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারের অনুকূলে তা বাতিল হয়ে যাবে। আবার অন্যান্য উত্তরাধিকারীগণ সম্মতি প্রদান করলে তা আইনসিদ্ধ হবে।
এ সকল কারণে বলা হয় যে, মৃত্যূব্যাধিতে আক্রান্ত অবস্থায় দান করলে তা পুরোপুরি দানও নয়, আবার উইলও নয় এই দু’য়ের সংমিশ্রণ মাত্র।
সর্বোপরি, ‘মৃত্যূকালীন ঘোষণা’ সাক্ষ্য হিসেবে আদালতকে দিক নির্দেশনা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও দান ও উইলের ক্ষেত্রে এর যথেষ্ট সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
COMMENTS