হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে পিতা, মাতা, ও সন্তান মূলতঃ ভরণ-পোষণ পাবার অধিকারী। কিন্তু সম্পর্কের কারণে কোন কোন ক্ষেত্রে কতিপয় ব্যক্তিবর্গ ভরণ-পোষণ...
হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে পিতা, মাতা, ও সন্তান মূলতঃ ভরণ-পোষণ পাবার অধিকারী। কিন্তু সম্পর্কের কারণে কোন কোন ক্ষেত্রে কতিপয় ব্যক্তিবর্গ ভরণ-পোষণ দাবী করতে পারে।
তাই আমি এখানে কারা হিন্দু আইন মোতাবেক ভরণ-পোষণ পেতে পারে সে সম্পর্কে আলোচনা করব। আশা করি আপনি উপকৃত হবেন।
Who can claim maintenance under Hindu law?
কারা হিন্দু আইনে ভরণ-পোষণ পাবে?
অভিভাবক কর্তৃক অধীনস্থ পোষ্যদের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বাসস্থান সহ মৌলিক চাহিদা ও অন্যান্য প্রয়োজন যেমন, বিয়ে, ব্যবসা ইত্যাদি মেটানোর উদ্দেশ্যে যক্তিযুক্ত খরচ বহন করার আইনগত বাধ্য বাধকতাকে ভরণ-পোষণ বলা হয়। মহামুনি মনু বলেন-
“In spite of hundreds of misdeeds, old parents, chaste wives and minor children must be given alimony.”
অর্থাৎ বৃ্দ্ধ পিতা-মাতা, সতী স্ত্রী এবং নাবালক সন্তান সর্বাবস্থায় ভরণ-পোষণ পাবার যোগ্য। তবে, হিন্দু আইন অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ব্যক্তিগণ তাদের অভিভাবকের নিকট হতে ভরণ-পোষণ পাবার অধিকারীঃ
নাবালক পুত্র (Minor son)
পিতা তার নাবালক পুত্রকে ভরণ-পোষণের জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকেন। দায়ভাগ মতে, কোন পিতা তার সাবালক পুত্রকে ভরণ-পোষণ করতে আইনতঃ বাধ্য থাকেন না। কিন্তু মিতাক্ষরা বিধান মতে, পুত্র নাবালক হলে ও যৌথ পারিবারিক সম্পত্তি হতে ভরণ-পোষণ পাবার অধিকারী। এই বিধানে পুত্র জন্মসূত্রে পৈত্রিক সম্পত্তির অংশীদার কিন্তু দায়ভাগ মতে, পিতার জীবদ্দশায় কোন পুত্র পিতার সম্পত্তির অধিকারী হতে পারে না। তাই নাবালক অবস্থায় পুত্রকে ভরণ-পোষণ করতে পিতা বাধ্য থাকে।
অবিবাহিতা কন্যা (Unmarried daughter)
কন্যার বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক পিতা তার কন্যার ভরণ-পোষণ প্রদানে বাধ্য থাকে। পিতার মৃতূর পর পিতৃ সম্পত্তি হতে এরুপ ভরণ-পোষণ অব্যহত থাকবে।
বিবাহিত কন্যার বিয়ে ভরণ-পোষণের ব্যপারে পিতার কোন আইনগত বাধ্য বাধকতা নাই। বিয়ের পর কন্যা পিতার পরিবারের সদস্য থাকে না, স্বামীর পরিবারের সদস্যভূক্ত হয়। বিবাহিত কন্যার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব স্বামীর। স্বামীর মৃত্যূর পর স্বামীর সম্পত্তি হতে তার ভরণ-পোষণ অব্যহত থাকবে। কিন্তু স্বামীর সেরুপ কোন সম্পত্তি না থাকলে স্বামীর পিতার সম্পত্তি হতে ভরণ-পোষণ পাবার অধিকার অর্জিত হয়। কিন্তু শ্বশুর কুলেরও কোন সম্পত্তি না থাকলে পিতার উপর নৈতিক দায়িত্ব অর্পিত হয়।
বৃদ্ধ পিতা-মাতা (Aged parents)
একজন সাবালক পুত্র তার বৃদ্ধ পিতা মাতাকে ভরণ-পোষণের জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকে। উত্তরাধিকার সূত্রে পৈত্রিক সম্পত্তি পাবার সম্ভবনা না থাকলেও পিতা-মাতাকে ভরণ-পোষণ করা প্রত্যেক সাবালক পুত্রের নৈতিক কর্তব্য।
স্ত্রী (Wife)
একজন স্বামী তার স্ত্রীকে আজীবন ভরণ-পোষণ দানে বাধ্য থাকে। এমন কি স্ত্রী যেরুপ রীতি-নীতি অনুযায়ী পিতৃগৃহে প্রতিপালিত হয়েছে, সেই রীতি-নীতি অনুসারে তাকে প্রতিপালিত করা স্বামীর কর্তব্য। কিন্তু ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে স্বামীর গৃহ ত্যাগকারী স্ত্রীকে স্বামী ভরণ-পোষণ দিতে বাধ্য থাকে না।
তবে, ১৯৪৬ সালের মেইনটেন্যান্স এন্ড রেসিডেন্স এ্যাক্টের (Maintenance and Residence Act, 1946) বিধান অনুযায়ী নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে স্ত্রী-গৃহ ত্যাগ করে পৃথকভাবে বসবাস করলেও স্বামীর নিকট হতে ভরণ-পোষণ পাবার অধিকারিণীঃ
- স্বামী যদি দুরারোগ্য পরিহারযোগ্য ব্যধিতে দীর্ঘকাল আক্রান্ত থাকে।
- স্বামী যদি তার প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ এবং স্ত্রীর জীবনাশাংকার ভয় থাকে।
- স্বামী যদি অন্য ধর্ম গ্রহণ করে।
- স্বামী যদি তাকে ত্যাগ করার মতলব করে।
- স্বামী যদি গৃহে রক্ষিতা রেখে তার সাথে বসবাস করে।
- স্বামী যদি স্ত্রীর বর্তমানে আবার বিয়ে করে।
- আদালতের মতে কোন সঙ্গত কারণ ঘটলে।
- স্ত্রী অসতী হলে;
- স্ত্রী অন্য ধর্ম গ্রহণ করলে; এবং
- সঙ্গত কারণ ব্যতীত স্বামীর সাথে থাকতে নারাজ হলে।
COMMENTS