ধর্ষণ বিশ্বব্যাপী নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অন্যতম প্রচলিত রূপ হিসাবে অব্যাহত রয়েছে। দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। ১...
ধর্ষণ বিশ্বব্যাপী নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অন্যতম প্রচলিত রূপ হিসাবে অব্যাহত রয়েছে। দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর সংবিধান কার্যকর করা হয়। সমতা ও বৈষম্যকে মৌলিক অধিকার হিসাবে সুনিশ্চিত করে, মহিলাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সম্পর্কিত আইন প্রবর্তনের ব্যপক প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে তিনটি পৃথক সরকার ধর্ষণ আইন চারবার সংস্কার করেছে।
নিম্নে আমি বাংলাদেশে সংবিধিবদ্ধ ধর্ষণের শাস্তি কি সে বিষয়ে আলোচনা করব। আশা করি এ আলোচনা আপনার জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে।
What is the punishment for statutory rape in Bangladesh?
বাংলাদেশে সংবিধিবদ্ধ ধর্ষণের শাস্তি কি?
ধর্ষণ হলো অনিচ্ছুক কাউকে সহিংসতা বা হুমকীমূলক আচরণ ও ব্যবহারের মাধ্যমে যৌন সঙ্গমে বাধ্য করা অর্থাৎ কোন ব্যক্তির সম্মতি ব্যতীত কিংবা (By force) জোরপূর্বকভাবে তার সাথে যৌন সঙ্গম। অধিকন্তু, নাবালক স্বেচ্ছায় যৌন মিলনের সঙ্গী হলেও প্রাপ্তবয়স্ককে ধর্ষণের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা যায়। কেণনা, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ও নাবালকের মধ্যে যৌন মিলন (Statutory rape) বা আইনত ধর্ষণ হিসাবে পরিচিত।
সুতরাং বাংলাদেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৯ ধারাতে বলা হয়েছে যে, “কোন পুরুষ যদি বিবাহ বন্ধন ছাড়াই ভয় দেখিয়ে বা প্রতারণামূলকভাবে ষোল বছরের কমবয়সী কোন মহিলার সাথে তার সম্মতি বা অসম্মতিতে যৌন সঙ্গম করে, তবে সে ব্যক্তি উক্ত মহিলাকে ধর্ষণ করেছে বলে বিবেচিত হবে।”
অনুরুপভাবে, দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় বলা হয়েছে যে, একজন ব্যক্তি তখনই ‘ধর্ষণ’ ঘটিয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে যদি নিম্নোক্ত পাঁচটি পরিস্থিতির যে কোন একটির অধীনে একটি মহিলার সাথে যৌন সঙ্গম করে থাকেঃ
- তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে;
- তার সম্মতি ব্যতীত;
- তার সম্মতিতে, যখন তাকে মৃত্যূর ভীতি প্রদর্শন করে সম্মতি আদায় করা হয়;
- তার সম্মতিতে, যখন লোকটি জানতে পারে যে, সে তার স্বামী নয়, এবং তার সম্মতি দেওয়া হয়েছে কারণ তিনি বিশ্বাস করেন যে, তিনি অন্য কোনও ব্যক্তি যার সাথে তিনি আছেন বা নিজেকে আইনত বিবাহিত বলে বিশ্বাস করেন; এবং
- তার বয়স চৌদ্দ বছরের কম।
দণ্ডবিধি আরোও ব্যাখ্যা করে যে "ধর্ষণ অপরাধে যৌন মিলনের জন্য প্রয়োজনীয় অনুপ্রবেশ যথেষ্ট।"
ধর্ষণের শাস্তি
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এ ধর্ষণের নিম্নোক্ত শাস্তি বিধান রয়েছেঃ
ধারা ৯(১) অনুযায়ী কোন পুরুষ যদি কোন মহিলা বা শিশুকে ধর্ষণ করে তবে তাকে অতিরিক্ত জরিমানা করে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দন্ডিত করা হবে।
৯(২) ধারাতে বলা হয়েছে যে, ধর্ষণের পরে বা অন্য কোনও ক্রিয়াকলাপের ফলে ধর্ষিতা মহিলা বা শিশু মারা গেলে সেই ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অতিরিক্ত অন্যূন এক লক্ষ টাকা জরিমানা করা যেতে পারে।
৯(৩) ধারাতে উল্লেখ আছে, গ্যাং রেপ বা দলবদ্ধভাবে কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করার ফলে ভিকটিমের মৃত্যূ ঘটলে ধর্ষকদের প্রত্যেকই মৃত্যূদন্ডে দন্ডিত হবেন। এতদ্ভিন্ন তাদেরকে অতিরিক্ত অন্যূন ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড দেওয়া হবে।
বিভিন্ন সংস্থার দীর্ঘদিনের দাবীর সূত্র ধরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর শাস্তির স্তর বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি দ্রুত বিচার ও রায় কার্যকর করার জন্য আইনটি সংশোধন করা হয়।
ইতিপূর্বে, ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুসারে বাংলাদেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, এছাড়া ধর্ষিতা মহিলা বা শিশু মারা গেলে বা গণধর্ষণের ক্ষেত্রে সর্বাধিক শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং উভয় ক্ষেত্রে জরিমানার বিধান ছিল।
সর্বোপরি, ধর্ষণের সর্বোচ্চ ‘শাস্তি মৃত্যূদন্ড’ কেবল বাংলাদেশে নয়; বরং ইরান, সৌদি আরব, মিশর, ইরাক, বাহরাইন এবং উত্তর কোরিয়ার মতো বেশ কয়েকটি দেশে ধর্ষণের জন্য মৃত্যুদণ্ড বহাল রয়েছে।
COMMENTS