নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে আদালতের একটি নির্দেশ যদ্বারা কোন ব্যক্তিকে একটি অন্যায় কাজ করা হতে বিরত থাকতে অথবা তার দ্বারা কৃত একটি অন্যায় কাজ অপসারণ কর...
নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে আদালতের একটি নির্দেশ যদ্বারা কোন ব্যক্তিকে একটি অন্যায় কাজ করা হতে বিরত থাকতে অথবা তার দ্বারা কৃত একটি অন্যায় কাজ অপসারণ করতে বলা হয়। লর্ডস হ্যালসবেরীর মতে, নিষেধাজ্ঞা হলো এমন একটি বিচার বিভাগীয় কার্যক্রম যদ্বারা কোন পক্ষকে নির্দিষ্ট কোন কাজ করা হতে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান করা হয়।
অতএব, সহজ ভাষায় বলতে গেলে নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে আদালতের একটি নির্দেশ, যা কোন ব্যক্তির উপর প্রদান করা হয় এবং সে ব্যক্তিকে আসন্ন কোন অন্যায় কার্য করা হতে নিবৃত্ত রাখা হয় অথবা তার দ্বারা কৃত কোন অন্যায় কার্যটি অপসারণ করা হয়। ইকুইটি হতে উদ্ভুত এ অন্যায় নিরোধক প্রতিকারটি বেশ কার্যকরী প্রতিয়মান হওয়ায় বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং প্রায় সকল আদালতই তাদের ইচ্ছাধীন ক্ষমতায় নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করে থাকে।
নিম্নে আমি সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ১৮৭৭ এ প্রদত্ত নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে আলোচনা উপস্থাপন করব। আশা করি আপনি উপকৃত হবেন।
How many kinds of injunctions in the SR Act?
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে কত প্রকারের নিষেধাজ্ঞা আছে?
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের বিভিন্ন প্রকার নিষেধাজ্ঞা নিম্নরুপঃ
অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Temporary Injunction)
সাময়িক কালের জন্য অথবা একটি নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত যে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকে তাকে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বলে। মামলার যে কোন অবস্থায় ইহা মঞ্জুর করা যায় এবং দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের ৩৯ নম্বর আদেশ, ১ নম্বর বিধি দ্বারা ইহা নিয়ন্ত্রিত হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা (Interim Injunction)
অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে এমন একটি নিষেধাজ্ঞা যা অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার প্রার্থনা শুনানী এবং তদ্বিষয়ে আদেশকাল পর্যন্ত কার্যকর থাকে। সাধারণত নোটিশ জারীর পূর্বেই এবং দরখস্ত প্রদানের সাথে সাথেই অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা হয়। নোটিশ জারী হবার পূর্বেই অন্যায়কারী তার অন্যায় কার্য করে ফেলতে পারে এই আশাংকায় তা রোধকল্পে স্থিতিবস্থা বজায় রাখার জন্য এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা হয়।
চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Perpetual Injunction)
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৫৪ ধারার বিধান মতে কোন আইনগত বাধ্যবাধকতার ভঙ্গ প্রতিরোধ করার জন্য স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা যায়। এই ধারায় আরো বলা হয়েছে যে, যখন এরুপ বাধ্যবাধকতা চুক্তির ফলে উদ্ভূত হয়, তখন আদালত সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের দ্বিতীয় অধ্যায় অর্থাৎ সুনির্দিষ্টভাবে চুক্তি সম্পাদনের বিধানবলীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে।
এছাড়া যখন একটি বাধ্যবাধকতার ভঙ্গকে প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করা আবশ্যক হয় তখন ৫৫ ধারার বিধান মতে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদনে বাধ্য করার জন্য নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা হয়।
সাক্ষ্য প্রমাণাদি শুনানির পর মামলার গুণাগুণ বিচার করে ডিক্রীর মাধ্যমে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা হয় এবং ইহা সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
আদেশমূলক নিষেধাজ্ঞা (Mandatory Injunction)
১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৫৫ ধারায় ম্যান্ডেটরী বা আদেশমূলক নিষেধাজ্ঞার সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে যে, যখন একটি বাধ্যবাধকতা ভঙ্গ করাকে রোধ করার জন্য কোন একটি কাজ করার আবশ্যক হয়, সেক্ষেত্রে আদালত তার স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা বলে প্রয়োজনীয় কাজ করার আদেশ দিতে পারেন। যেমন, বাদীর ভূমিতে যদি কেউ প্রাচীর নির্মাণ করে তবে তা অপসারণ করার জন্য আদালত ম্যান্ডেটরী বা আদেশমূলক নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করতে পারে।
নিষেধমূলক নিষেধাজ্ঞা (Prohibitory Injunction)
কোন অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখার জন্য নির্দেশ দিয়ে বিবাদীর প্রতি যে নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা হয় তাকে প্রহিবিটরী বা নিষেধমূলক নিষেধাজ্ঞা বলে। যেমন, বাদীর জানালা দিয়ে আলো বাতাস রোধ করে প্রাচীর নির্মাণ করা উদ্যোগ নিলে বিবাদীর বিরুদ্ধে প্রহিবিটরী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা যায়।
COMMENTS