‘আয়’ হলো কোন নির্দিষ্ট উৎস হতে নিয়মিতভাবে প্রাপ্ত কোন আর্থিক সুবিধা। তবে, বাংলাদেশে প্রযোজ্য ১৯৮৪ সালের আয়কর আধ্যাদেশে আয়করযোগ্য আয়ের খাত সম...
‘আয়’ হলো কোন নির্দিষ্ট উৎস হতে নিয়মিতভাবে প্রাপ্ত কোন আর্থিক সুবিধা। তবে, বাংলাদেশে প্রযোজ্য ১৯৮৪ সালের আয়কর আধ্যাদেশে আয়করযোগ্য আয়ের খাত সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে।
নিম্নে আমি আয়ের ৭টি খাত সম্পর্কে আলোচনা করব। আশা করি আপনি উপকৃত হবেন।
What are the seven heads of income?
আয়ের সাতটি খাত কি কি?
১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের ২০ ধারা অনুসারে আয়ের খাত নিম্নবর্ণিত ৭টিঃ
- বেতন (Salary);
- লগ্নিপত্রের উপর সুদ (Interset on securities);
- গৃহ সম্পত্তি হতে আয় (House property);
- কৃষি আয় (Agriculture);
- ব্যবসায় অথবা পেশাগত আয় (Business and Profession);
- মূলধনী লাভ (Capital gain ); ও
- অন্যান্য উৎস হতে আয় (Miscellaneous)।
বেতন
এই অধ্যাদেশের ২(৫৮) ধারায় বেতনের সংজ্ঞা এবং ২১ ধারায় এর গণনা পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। এই ধারা মতে, বেতন (অগ্রিম বা বকেয়া) মজুরি, বার্ষিক সালিয়ানা, অবসরবৃত্তি, আনুতোষিক, ফী-কমিশন, বেত-পূরক, মাহিনার বদলে মুনাফা কিংবা বেতনাতিরিক্ত মুনাফা বা উপরি মজুরি প্রাপ্তি বা আয় প্রকৃতপক্ষে পাওয়া যাক বা না যাক, প্রদেয় হলেই এগুলিকে বেতন আয় বলে ধরা যাবে। এই আয়গুলি ‘বেতন আয়’ খাতে করযোগ্য বলে গন্য হবে।
লগ্নি পত্রের উপর সুদ
সরকারের কোন লগ্নিপত্রের উপর সুদ এবং স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন প্রতিষ্ঠান অথবা কোম্পানী কর্তৃক বা তার পক্ষে কেউ যদি কোন ডিবেঞ্চার বা ঋণপত্র বিলি করে থাকে, তবে ঐ ডিবেঞ্চার বা ঋণপত্র হতে প্রাপ্ত সুদ এই অধ্যাদেশের ২২ ও ২৩ ধারা অনুসারে লগ্নিপত্রের উপর সুদ খাতে গণনা করা হবে এবং করযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
গৃহ সম্পত্তি হতে আয়
গৃহ সম্পত্তির মালিককে তার গৃহাদির বা এর সংশ্লিষ্ট ভূমি বার্ষিকমূল্যের ভিত্তিতে কর প্রদান করতে হয়। এই অধ্যাদেশের ২(৩) ধারায় বলা হয়েছে যে, গৃহ সম্পত্তি ভাড়া দেয়া থাকলে ভাড়াটের নিকট হতে প্রতি বছর যে ন্যায়সঙ্গত ভাড়া আশা করা যায় তা অথবা প্রকৃত ভাড়া ন্যায়সঙ্গত ভাড়া হতে অধিক হলে, এ দুই অংকের অধিকতর অংশ গৃহ সম্পত্তির বার্ষিক মূল্য বলে এবং তার বার্ষিক মূল্য ১০ হাজার টাকা বাদ দিয়া যে অংক থাকবে তা অথাব করদাতার মোট আয়ের দশ শতাংশ- এই দুই অংকের নিম্নতর অংক তার বার্ষিক মূল্য হবে। আয়কর অধ্যাদেশের ২৪ ও ২৫ ধারা অনুসারে গৃহ সম্পত্তির বার্ষিক মূল্যের উপর ভিত্তি করে আনুমানিক আয়ের উপর গৃহ সম্পত্তি হতে আয়খাতের কর ধার্য করা হয়।
কৃষি আয়
এই অধ্যাদেশে ২(১) ধারায় কৃষি আয়ের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এতে বর্ণিত আছে যে, বাংলাদেশে অবস্থিত িএবং কৃষি কাজের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত ভূমি যে আয় যা কৃষি কাজের দ্বারা অথবা উৎপন্ন ফসলকে বিক্রয়যোগ্য করার জন্য সাধারণ প্রক্রিয়ার দ্বারা কৃষকের যে আয় হয় অথবা অন্যকে তার ভূমি ব্যবহার করার জন্য স্বত্ব প্রদান করে তার নিকট হতে যে অর্থ প্রাপ্ত হয় সে সকল আয় কৃষি আয়ের অন্তর্ভূক্ত হবে।
যে গৃহ ভূমির সন্নিকটে অবস্থিত এবং গৃহটি ভূমির সহিত সম্পর্কবশতঃ কৃষকের বসবাসের জন্য অথবা গৃহটি ফসল বিক্রয়যোগ্য করার জন্য প্রক্রিয়া সংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত হয় সে গৃহ হতে আয়ও কৃষি আয় হবে।
ব্যবসায় অথবা পেশাগত আয়
আয় বছরের যে কোন সময়ে করদাতা কর্তৃক পরিচালিত কোন ব্যবসায় বা পেশা হতে যে মুনাফা লাভ হয় তা এই খাতে আয় বলে গণ্য হবে। ব্যবসায় হতে অথবা পেশাগত কাজের জন্য কোন সুখ স্বাচ্ছন্দ বা সুবিধা লাভ করলে তা অর্থের বিনিময়ে হোক বা না হোক তা ব্যবসার বা পেশার আয় খাতে করযোগ্য হবে। এছাড়া অনাদেয় বাকী আদায় হলে, ব্যবসায়িক দায়-দায়িত্ব হতে নিষ্কৃতি পেলে অথবা বাদ দেয়া খরচ আদায় হলে এবংব্যবহৃত সম্পত্তির বিক্রয় মূল্য হ্রাসকৃত মূল্য অপেক্ষা অধিক হলে সেগুলিও ব্যবসার ও পেশাগত আয় খাতে ২৮ ধারার বিধান মতে করযোগ্য হবে।
মূলধনী লাভ
মূলধনী সম্পত্তি বিক্রয় বা হস্তান্তরের ফলে যে লাভ হয়, তাকে মূলধনী লাভ বলে। এই লাভ আয়কর অধ্যাদেশের ৩১ ও ৩২ ধারা অনুযায়ী করযোগ্য।
অন্যান্য উৎস হতে আয়
লভ্যাংশ, সুদ, গ্রন্থস্বত্ত্ব, টেকনিক্যাল সার্ভিসের ফী, কলকব্জা ও যন্ত্রপাতির ভাড়া বাবদ আয়, লটারী, রেস, জুয়া বা বাজী দ্বার যে আয় হয় কিন্তু উপরোক্ত খাতের আওতায় পড়ে না, সে সকল আয় অধ্যাদেশের ৩৩ ও ৩৪ ধারা অনুসারে ‘অন্যান্য উৎস হতে আয়’ খাতে করযোগ্য।
COMMENTS