পণ্য ক্রয়ের পূর্বে পণ্যদ্রব্যটির গুণগত মান কিংবা খুঁত-নিখুঁত পরীক্ষা করে দেখার যথেষ্ট সুযোগ একজন ক্রেতার রয়েছে। কারণ, বিক্রেতা তার পণ্য-দ্রব...
পণ্য ক্রয়ের পূর্বে পণ্যদ্রব্যটির গুণগত মান কিংবা খুঁত-নিখুঁত পরীক্ষা করে দেখার যথেষ্ট সুযোগ একজন ক্রেতার রয়েছে। কারণ, বিক্রেতা তার পণ্য-দ্রব্যের দোষ প্রকাশের জন্য আইনগতভাবে বাধ্য নয়। ‘ক্রেতা সাবধান’ নীতি এমনই একটি মতবাদ যা পণ্য বিক্রয় আইন, ১৯৩০ এর ১৬ ধারাতে সন্নিবেশিত হয়। এই আইনটি ইংলিশ আইন ১৮৯৩ এর ১৪ ধারার সহিত সাদৃশ্য রাখে।
নিম্নে আমি ‘ক্রেতা সাবধান’ নীতি সম্পর্কে আলোচনা তুলে ধরব। আশা করি আপনি উপকৃত হবেন।
What is caveat emptor in law?
আইনে ক্রেতা হুঁশিয়ার নীতি কি?
Caveat emptor একটি ল্যাটিন শব্দবদ্ধ যার আক্ষরিক অর্থ- 'Let the buyer beware' ক্রেতাকে সতর্ক হতে দাও। ইংল্যান্ডের আদালত বহু বছর ধরে এই মতবাদটি অনুসরণ করে আসছে।
বাণিজ্যিক লেনদেনে প্রতিটি ক্রেতাকে পণ্য কেনার সময় সাবধান হতে হবে। কেণনা, পণ্য বিক্রয় আইনের ১৬ ধারা অনুযায়ী বিক্রেতা তার পণ্যের দোষ প্রকাশ করতে বাধ্য নয়। পণ্যের গুণাগুণ ও উপযোগিতা ভাল করে যাচাই করে নেয়া ক্রেতার কর্তব্য। বিক্রয়ের পর তা ধরা পড়লে বিক্রেতা তা ফেরত নিতে বাধ্য নয়। এজন্য ক্রেতাকে সাবধানে পণ্য ক্রয় করতে বলা হয়েছে। এই মতবাদকে ‘ক্রেতা সাবধান’ (caveat emptor) মতবাদ বলা হয়।
উদাহরণ
(১) ‘ক’ তার মোটর গাড়ী বিক্রয়ের প্রস্তাব ‘খ’ এর নিকট করে। ‘ক’ জানে যে তার গাড়ীর ইঞ্জিনে সমস্য আছে, সে তা ‘খ’ এর নিকটে প্রকাশ করেনি। ‘খ’ সাথে একটি মোটর মিস্ত্রি নিয়ে আসে। ‘ক’ এর গাড়ীটি পরীক্ষা করে চালায়ে দেখে এবং গাড়ীটি খরিদ করে নিয়ে যায়। ‘খ’ পরের দিন গাড়ীর ইঞ্জিনে সমস্যা আছে বুঝতে পারে এবং ‘ক’ প্রতারণা করেছে এই অভিযোগে চুক্তিটি বাতিল করতে চায়।
এক্ষেত্রে ক্রেতা যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন করেছে এবং একজন মোটর মিস্ত্রি দ্বারা গাড়ীটি পরীক্ষা করে নিয়েছে। এতদসত্ত্বেও গাড়ীটি খরিদ করার পর আর তা বাতিল করা যায় না। এছাড়া ‘ক’ কখনো বলে নাই যে, তার গাড়ীটি দোষমুক্ত কিংবা সে কোন প্রতারণার আশ্রয় নেয় নাই। মিথ্যা বর্ণনা বা প্রতারণার প্রমাণ থাকলে চুক্তিটি বাতিলযোগ্য হতো। কিন্তু সে সকল উপাদানও এক্ষেত্রে অনুপস্থিত। তাই কোন ক্রমেই ‘খ’ চুক্তিটি বাতিল করতে পারে না।
ক্রেতা সাবধান নীতির ব্যতিক্রম
Caveat emptor বা ক্রেতা সাবধান মতবাদের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যতিক্রম আছে। আসুন আমরা উক্ত ব্যতিক্রমগুলির প্রতি একটি সংক্ষিপ্ত নজর দেয়। যথাঃ
ক্রেতার জন্য পণ্যটির উপযুক্ততা
যদি ক্রেতা বিক্রয়কারীকে তার পণ্যটি ক্রয়ের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত করে, তাহলে এটি বুঝাবে যে, সে বিক্রেতার বিচারের উপর নির্ভর করছে। এ ক্ষেত্রে বিক্রেতার উচিত হবে যে পণ্যটি ক্রেতার কাঙ্ক্ষিত ব্যবহারের সহিত যথার্থ হবে তা নিশ্চিত করা। যেমন, ‘ক‘, ‘খ’ কে জানায় যে, সে পর্বত ট্রেকিংয়ের জন্য একটি সাইকেল কিনতে চান। কিন্তু ‘খ’ যদি তার কাছে একটি সাধারণ সাইকেল বিক্রি করে, তাহলে ‘খ’ দায়ী হবে। কেণনা, একটি সাধারণ সাইকেল ‘ক’ এর উদ্দেশ্য পূরণে অক্ষম। আরেকটি উদাহরণ প্রিস্ট বনাম লাস্ট এর মামলা।
নমুনা দ্বারা বিক্রয়
ক্রেতা যদি একটি স্যাম্পল বা নমূনা পরীক্ষা করে তার জিনিস কিনে থাকে এবং বাকী সবগুলি পণ্য যদি নমূনার সহিত সাদৃশ্য না থাকে, তাহলে এই নীতি প্রযোজ্য হবে না। যেমন, ‘ক’ একটি মাত্র খেলনা গাড়ীর নমূনা দেখে ‘খ’ এর কাছে ১০০টি খেলনা গাড়ী ক্রয়ের অর্ডার দেয়। ‘ক’ একটি নমূনা পরীক্ষা করে দেখে, যার রঙ্গ লাল। কিন্তু অর্ডার ডেলিভ্যারি হওয়া পর ‘ক’ দেখে যে, সব খেলনা গাড়ীগুলি কমলা রঙ্গের। এ ক্ষেত্রে এই নীতি প্রযোজ্য হবে না। ফলে, ‘খ’ দায়ী থাকবে।
ব্র্যান্ড নামের অধীনে ক্রয়কৃত পণ্য
যখন ক্রেতা একটি ব্র্যান্ড নামের অধীনে অথবা ব্র্যান্ডযুক্ত পণ্য ক্রয় করে তখন বিক্রয়কারী এর কার্যকারিতা বা গুণমানের জন্য দায়বদ্ধ নয়। সুতরাং ইহাতে নিহিত কোন শর্ত নেই যে, পণ্যগুলি ক্রেতার অভিপ্রেত উদ্দেশ্যে উপযুক্ত হবে।
পণ্য বিবরণে বিক্রয়
যখন ক্রেতা কেবল পণ্যের বিবরণের উপর ভিত্তি করে পণ্য ক্রয় করে, সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হবে। যেমন, যদি পণ্যের বিবরণের সহিত মালের গুণগত মানের মিল না থাকে, তবে বিক্রেতা দায়ি থাকবে।
পরিশেষে বলা যায় যে, ভোক্তা অধিকার সুরক্ষার জন্য আধুনিক প্রবণতা ‘ক্যাভেট এম্পটর’ নীতির গুরুত্বকে হ্রাস করেছে। ক্যাভেট এমপোটর নিয়মের উদ্ভব হয়েছিল এমন সময় যখন পণ্যগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খোলা বাজারে বিক্রি হতো। ফলে, ক্রেতাদের পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষা করার যথেষ্ট সুযোগ ছিল। বর্তমানে বেশিরভাগ দ্রব্য উৎপাদনকারীর দ্বারা প্যাক ও সিল করা হয়। তারপরেও ক্রেতা বস্তাবন্দী পণ্যগুলির গুণগত মান, উহার মেয়াদ উত্তির্ণের তারিখ, ব্র্যান্ড, লোগো ইত্যাদি বিষয় কভারে প্রদর্শিত বিবরণের মাধ্যমে পরীক্ষা করতে পারে।
COMMENTS