অগ্র-ক্রয়াধিকার আইনটি উপ-মহাদেশে মুসলিম রাজত্বকালে প্রবর্তিত হয়। এই আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে জাতি বা ধর্মের কোন পার্থক্য করা হতো না। তাই হিন্...
অগ্র-ক্রয়াধিকার আইনটি উপ-মহাদেশে মুসলিম রাজত্বকালে প্রবর্তিত হয়। এই আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে জাতি বা ধর্মের কোন পার্থক্য করা হতো না। তাই হিন্দু ও মুসলমান সকলেরই উপরই এই নীতি প্রযোগ করা হতো। পরবর্তীকালে, প্রণীত আইনের মাধ্যমে সকলের উপরই আইনের বিধান হিসেবে প্রয়োগ হতে থাকে।
নিম্নে আমি অগ্র-ক্রয়াধিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করি আপনি উপকৃত হবেন।
What is pre emption under Muslim law?
মুসলিম আইনে জমি অগ্র-ক্রয়াধিকার কাকে বলে?
কোন স্থাবর সম্পত্তি বিক্রিত হবার পর ঐ শর্ত মেনে নিয়ে অন্য কোন ব্যক্তি ক্রেতার স্থলাভিষিক্ত হবার যে অধিকার স্বাীকৃত হয়েছে তাকে অগ্র-ক্রয়াধিকার বা “শুফা” বলে।
এ সম্পর্কে প্রখ্যাত মামলা গোবিন্দ দয়াল বনাম এনায়েতুল্লা [(১৮৮৫) ৭ এলাহাবাদ ৭৭৫] এর সিদ্ধান্তে বলা হয় যে, “প্রত্যেক মালিকের শান্তিপূর্ণভাবে তার স্থাবর সম্পত্তি ভোগ করার যে অধিকার রয়েছে তার বলে তার নিজের নয় এরুপ অন্য কোন স্থাবর সম্পত্তির মালিকানা স্বত্ব অর্জনের জন্য যে শর্তে বিক্রি করা হয়েছে তা পূরণ করে তদস্থলে ক্রেতার স্থলাভিষিক্ত হবার অধিকারকে অগ্র-ক্রয়াধিকার বলে।
প্রকৃতপক্ষে, ইহা একটি অধিকার যার বলে একটি স্থাবর সম্পত্তির মালিক অপর একটি স্থাবর সম্পত্তি যা অপর কারো নিকট বিক্রি করা হয়েছে তা ক্রয়ের মাধ্যমে অর্জন করতে পারে। এ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ৩ টি শর্ত পূরণ করা প্রয়োজনঃ
- অধিকারের দাবীদারকে কোন স্থাবর সম্পত্তির মালিক হতে হবে;
- দাবীদারের নয় এরুপ কোন স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি হতে হবে; ও
- দাবীদারের সাথে ঐ সম্পত্তির কোন সম্পর্ক থাকতে হবে।
কারা অগ্র-ক্রয়াধিকার প্রয়োগ করতে পারে
মুসলিম আইনের বিধান মতে, তিন শ্রেণীর ব্যক্তি এ অগ্র-ক্রয়াধিকার প্রয়োগ করতে পারে। যেমন-
- শাফী-ই-শরীক অর্থাৎ সম্পত্তির সহ-অংশীদার;
- শাফী-ই-খালিত অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির সাথে মিশ্রিতভাবে যার অধিকার বিদ্যমান; ও
- শাফী-ই-জার অর্থাৎ বিক্রিত সম্পত্তির সংলগ্ন জমির মালিক।
কখন অগ্রক্রয়ের অধিকার জন্মায়
অগ্র-ক্রয়াধিকার প্রয়োগের জন্য আনুষ্ঠানিকতা
- বিক্রির সংবাদ প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে কিংবা এর অব্যবহিত পরই শুফার দাবীদারকে তার অগ্র-ক্রয়ের অধিকার প্রয়োগের ইচ্ছা ঘোষণা করতে হবে। একে বলা হয় তলব-ই-মৌসিবত। এই দাবী পেশ করার সময় কোন সাক্ষীর প্রয়োজন হয় না।
- প্রথম দাবী পেশের পর আর অধিক বিলম্ব না করে উক্ত দাবীর প্রসঙ্গ উল্লেখ পূর্বক আবার দাবী পেশ করতে হবে। ক্রেতা বা বিক্রেতার সম্মুখে কিংবা বিক্রয়ের সম্পত্তির অঙ্গনে দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে এরুপ দাবীর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে হবে। একে বলা হয় তলব-ই-ইশাদ বা সাক্ষীসহ দাবী পেশ।
- তলব-ই-ইশাদের পর অগ্র-ক্রয়াধিকার দাবীদারকে আদলতে মামলা দায়ের করতে হবে। তলব-ই-মৌসিবত এবং তলব-ই-ইশাদের পর বিক্রেতা বা ক্রেতা দাবী না মানলে ইহা অর্জনের জন্য আদালতে মামলা দায়ে করতে হবে। এই দাবীকে বলা হয় তলব-ই-তামালিক বা তলব-ই-খুসুমাত।
COMMENTS