গার্লস নট ব্রাইডের হিসেব অনুসারে, বছরে প্রায় ১৫ মিলিয়ন মেয়ে ১৮ বছরের পূর্বেই বাল্য বিবাহের শিকার হয়। আরোও বিস্ময়কর তথ্য হলো- কিরগিজস্তানে...
গার্লস নট ব্রাইডের হিসেব অনুসারে, বছরে প্রায় ১৫ মিলিয়ন মেয়ে ১৮ বছরের পূর্বেই বাল্য বিবাহের শিকার হয়। আরোও বিস্ময়কর তথ্য হলো- কিরগিজস্তানে প্রতি ৪০ মিনিটে প্রায় একজন যুবতী মেয়ে অপহৃত হয় এবং প্রতি পাঁচজন যুবতী মেয়েদের একজনকে বিবাহের জন্য অপহরণ করা হয়ে থাকে।
‘আলা-কচু’ যাযাবর কাল থেকে প্রচলিত মধ্য-এশিয়ার এক রোম্যান্টিক ঐতিহ্যের নাম। পুরানো এই প্রথাটি আরও বেশি সাধারণ হয়ে উঠছে।
The custom of kidnapping the bride; Ala-Kachuu
নববধু অপহরণ প্রথা; আলা-কচু
‘আলা-কচু’ (Ala-Kachuu) হলো কিরগিজ শব্দ এবং অনুবাদ করলে হয়- Grab and run “ধরুন এবং পালান”। এটি একটি বিনোদনমূলক জনপ্রিয় খেলা বলে মনে হলেও আসলে মেয়েদের অপহরণ এবং তাদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার ব্যাপক প্রথা।
‘আলা-কচু’ কনে অপহরণের এক রূপ যা মূলত অসম্মতিপূর্ণ এবং প্রায়শই নারীদের উপর সহিংস নির্যাতন ও ধর্ষণ জড়িত প্রথা। এই প্রথাটি মধ্য এশিয়ার একটি রোম্যান্টিক ঐতিহ্য থেকে শুরু করে, যেখানে সম্ভাব্য বর কনের বাড়ি থেকে সম্ভাব্য বধূকে 'অপহরণ' করে যাতে সে তাকে বিয়ে করতে পারে।
জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের তথ্য অনুসারে, অনেক ক্ষেত্রে বর তার অপহৃত কনেকে লজ্জায় তার পরিবারে ফিরে আসতে বাধা দিতে ধর্ষণ করে থাকে।
প্রাথমিকভাবে ‘আলা-কচু’ সম্পর্কে ধারণা করা হতো যে, এই প্রথাটি কেবল উইঘুরদের মধ্যে প্রচলিত আছে। অবশেষে জানা যায় যে, মধ্য এশিয়া জুড়ে কনে অপহরণের প্রবণতা বিদ্যমান। আমেরিকা ভিত্তিক ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলেছেন, মধ্য এশিয়ার দেশটির গ্রামীণ অঞ্চলে আর্মেনিয়া, ইথিওপিয়া, কাজাখস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশেও অপহরণের ঘটনা ঘটে।
ডেমোগ্রাফি জার্নালে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে, অপহরণ করা কনেদের মধ্যে জন্ম নেওয়া বাচ্চাদের ওজন অ্যারেঞ্জ বিবাহের চেয়ে ৮০ থেকে ১৯০ গ্রাম কম ওজনের হয়। আরোও বলা হয়েছে যে, ছোট জন্মের ওজনগুলি রোগের ঝুঁকি, নিম্ন শিক্ষার হার এবং উপার্জনের সাথে যুক্ত হয়েছে।
এই শিশুরা কেন ছোট হয় তা স্পষ্ট নয়, তবে জোর করে বিয়ে করার কারণে মা যে মানসিক আঘাতের শিকার হয়েছেন সম্ভবত তাদের মায়ের মনস্তাত্ত্বিক সঙ্কটের কারণে ঘটে থাকে বলে সমীক্ষায় সহ-লেখক অর্থনীতির অধ্যাপক চার্লস বেকার মন্তব্য করেন।
আইন কোথায়?
১৯৯৪ সালে কিরগিজস্তানের ফৌজদারী কোডে ‘আলা-কচু’ বা কনে অপহরণকে অবৈধ করা হয়েছিল। ২৫ শে জানুয়ারী ২০১৩, রাষ্ট্রপতি আলমাজব্যাক আতম্বায়েভ একটি আইন পাস করেন। কিরগিজ ফৌজদারী কোডের ১৫৪ অনুচ্ছেদ এবং ১৫৫ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে কনে অপহরণের জন্য সর্বাধিক কারাবাসের সাজা সাত বছর, এবং যেখানে নববধূ নাবালিকা ১০ বছর বাড়িয়েছেন।
২০১৯ সালের প্রথম ছয় মাসে, সারা দেশে কনে অপহরণের ১১৮ টি ফৌজদারি মামলা হয়েছিল। ইউনিসেফের অনুমান, আরও অনেক মামলা সংঘটিত হয়েছিল, তবে প্রায়ই এই ঘটনাগুলি প্রতিবেদনিত হয় না। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, কিরগিজস্তানে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ১১ জন মেয়ের মধ্যে ১ জন বিবাহিত।
আইনবিদগণ মনে করেন যে, এটি কোন ঐতিহ্য নয়; বরং একটি অপরাধ। তবু ঐতিহ্যের নামে কিরগিজস্তানি নাগরিকরা এটি এখনও অনুশীলন করছেন।
COMMENTS