Anonymous বা বেনামী লেনদেন শব্দের অর্থ নামবিহীন। প্রকৃতপক্ষে কোন ব্যক্তি নিজ স্বার্থে ও নিজ অর্থে কোন সম্পত্তি ক্রয় করে ক্রেতা হিসেবে অন্য ব...
Anonymous বা বেনামী লেনদেন শব্দের অর্থ নামবিহীন। প্রকৃতপক্ষে কোন ব্যক্তি নিজ স্বার্থে ও নিজ অর্থে কোন সম্পত্তি ক্রয় করে ক্রেতা হিসেবে অন্য ব্যক্তির নাম উল্লেখ করলে তাকে বেনামী লেনদেন বলা হয়। তাই বেনামী লেনদেনে প্রকাশ্য মালিক প্রকৃত মালিক নয়, যে ব্যক্তি অর্থ প্রদান করে থাকে সে হচ্ছে এর প্রকৃত মালিক আর প্রকাশ্য মালিক হচ্ছে বেনামদার।
নিম্নে ‘বেনামী লেনদেন’ সংক্রান্ত আইন প্রদত্ত হলো।
Laws relating to anonymous transactions
বেনামী লেনদেন সংক্রান্ত আইন
এ ধরণের লেনদেন বাংলাদেশসহ এই উপমহাদেশে বহুদিন ধরে প্রচলিত থাকায় এটা একটা প্রথায় পরিণত হয়েছে যা আদালত কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছে। ইংল্যান্ডের প্রিভি কাউন্সিল মন্তব্য করেছেনঃ“হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তির নামে সম্পত্তি কেনার প্রথা ভারতে প্রচলিত এবং দীর্ঘকাল ধরে আদালত দ্বারা স্বীকৃত।”
বেনামী লেনদেনের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরুপঃ
- খরিদা সম্পত্তির মূল্য প্রদান করে একজন আর ক্রেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয় অপরজনের নাম;
- যার নামে সম্পত্তি ক্রয় করা হয় সে বেনামদার, প্রকৃত মালিক হচ্ছে যে ব্যক্তি অর্থ প্রদান করে সে ব্যক্তি;
- ক্রয়কৃত সম্পত্তিতে বেনামদারের কোন স্বত্ব সৃষ্টি হয় না;
- এরুপ সম্পত্তি প্রকৃত মালিকের অর্থাৎ অর্থ প্রদানকারীর দখলে থাকে এবং সে ব্যক্তি এর পরিচালনা করে থাকে।
বেনামী কার্যকারিতা যাচাই
নিম্নলিখিত উপায়ে একটি বেনামী লেনদেনের কার্যকারিতা যাচাই করা যায়ঃ
(১) বেনামী লেনদেন যাচাই এর জন্য প্রথমে খোঁজ নিবে হবে কে ক্রয়কৃত সম্পত্তির মূল্য প্রদান করেছে। যে ব্যক্তি এর মূল্য পরিশোধ করে থাকে তাকেই প্রকৃত মালিক বলা হয়। ( ২২ সি ডব্লিউ এন ৫২২)
(২) খরিদকৃত সম্পত্তির যিনি মূল্য প্রদান করেছেন এবং যার নামে এটা ক্রয় করা হয়েছে তাদের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক ও তাদের অবস্থান হতেই বেনামী লেনদেন যাচাই করা যায় বলে সাদেও বনাম উসমান (এ. আই আর ১৯৩৯) মামলায় আদালত অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
(৩) যে ব্যক্তি খরিদা সম্পত্তির মূল্য প্রদান করেছে তার উদ্দেশ্য বা মোটিভ কি অর্থাৎ অন্যের নামে সম্পত্তি ক্রয় করার মতলব কি তাও যাচাই করতে হবে। কেউ কর ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে আবার কেউ অবৈধ উপায়ে আয় করে থাকলে সেটা প্রকাশ হয়ে যাবার ভয়ে অন্যের নামে সম্পত্তি ক্রয় করে থাকে। বেনামী লেনদেন যাচাই এর জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
(৪) যিনি সম্পত্তির প্রকৃত মালিক তার দখলেই সাধারণত সম্পত্তি ও এতদসংক্রান্ত দলিলপত্র থেকে থাকে। কাজেই যদি দেখা যায় যে, যার নামে সম্পত্তি ক্রয় করা হয়েছে সম্মত্তি তার দখলে নাই তবে স্বাভাবিক ভাবেই ধরে নেওয়া যায় যে, তিনি ঐ সম্পত্তির বেনামদার।
(৫) সংশ্লিষ্ট জমির উৎপন্ন ফসল বা ঐ সম্পত্তি হতে উদ্ভূত আয় কে ভোগ করছে তা যাচাই করেও বেনামী চরিত্র উদ্ঘাটন করা যায়।
(৬) সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির দলিলপত্র কার নিকট রয়েছে এবং কে খাজনা বহন করেছে তা অনুন্ধান করা দরকার। যে ব্যক্তির নামে সম্পত্তি ক্রয় করা হয়েছে সে ব্যক্তির নিকট যদি ঐ জমির দলিলপত্র না থাকে এবং সে ব্যক্তি যদি খাজনাদি প্রদান না করে থাকে তবে এটা অনুমিত যে, ঐ ব্যক্তি প্রকৃত মালিক নয়, সে বেনামদার মাত্র।
(৭) বেনামী সম্পত্তি যাচাই করার জন্য ক্রয়ের পর সংশ্লিষ্ট পক্ষের আচরণ বেশ গুরুত্বপূর্ণ অর্থাৎ প্রকৃত মালিক ও বেনামদার কে তা তাদের আচরণ সংশ্লিষ্ট সম্পত্তিতে তাদের মনযোগ ও আগ্রহ দেখে ধরে নেওয়া যায়।
বেনামী লেনদেনের সীমাবদ্ধতা
বেনামী লেনদেনের নিম্নলিখিত সীমাবদ্ধতা রয়েছেঃ
- কোন বেনামী লেনদেন বিধিবদ্ধ আইনের পরিপন্থী হলে তা অসিদ্ধ হবে এবং নেনামদার প্রকৃত মালিকের অধীকার বা দাবিকে অস্বীকার করতে পারে। দেওয়ানী কার্যবিধির ৬০ ধারায় বেনামীতে নিলাম খরিদ নিষেধ করা হয়েছে। এটা অস্বীকার করে কেউ যদি বেনাম নিলাম খরিদ করে তবে সে ব্যক্তি উক্ত সম্পত্তিতে কোন স্বত্ব অর্জন করবে না।
- সামাজিক মূল্যবোধ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই গণনীতি বা সরকারী নীতির পরিপন্থী কোন বেনামী লেনদেন বৈধ হবে না। তাই অবৈধভাবে সম্পত্তি ক্রয় করা হলে প্রকৃত ক্রেতা বেনামদারের নিকট হতে সম্পত্তি উদ্ধার করতে পারবে না। অর্থাৎ গণনীতির পরিপন্থী বিধায় এই লেনদেনকে কার্যকর করা যাবে না।
- বেনামী লেনদেনের ক্ষেত্রে বেনামদার সম্পত্তির প্রকৃত মালিক নয়, দৃশ্যতঃ মালিক। এমতাবস্থায় কোন ব্যক্তি বেনামদারকে প্রকৃত মালিক মনে করে, বেনামী সম্পত্তির বিষয় অবগত না হয়ে সরল বিশ্বাসে ও যথাযথ মূল্য প্রদানে বেনামদারের নিকট হতে যদি সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি ক্রয় করে থাকে তাহলে প্রকৃত মালিক উক্ত ক্রেতার নিকট হতে তা আর পুনরুদ্ধার করতে পারবে না। অর্থাৎ বেনামী লেনদেন এক্ষেত্রে অকার্যকার হিসেবে গণ্য হবে।
আরোও প্রকাশ থাকে যে, অগ্রগতির নীতি বা (Principle of Advancement) বেনামী লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য যে, ১৯৮৪ সালের ১০ নম্বর ভূমি অধ্যাদেশ দ্বারা বেনামীতে সম্পত্তি ক্রয় করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কাজেই বেনামীতে লেনদেন বর্তমানে অবৈধ।
COMMENTS