সংবিধান একটি দেশের মাটি ও মানুষের আইন হিসাবে পরিচিত। সংবিধান দেশের জনগণকে অধিকার এবং সরকারকে ক্ষমতা এবং সীমাবদ্ধতা প্রদান করে। নিম্নে সাংবিধ...
সংবিধান একটি দেশের মাটি ও মানুষের আইন হিসাবে পরিচিত। সংবিধান দেশের জনগণকে অধিকার এবং সরকারকে ক্ষমতা এবং সীমাবদ্ধতা প্রদান করে।
নিম্নে সাংবিধানিক সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
What is constitutional sovereignty?
সাংবিধানিক সার্বভৌমত্ব কি?
সাংবিধানিক সার্বভৌমত্ব বলতে সংবিধানের অপরিসীম কার্যকরী প্রভাবকে বুঝায়। সংবিধানের মাধ্যমেই একটি দেশের সার্বিক শাসনাবস্থা এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গসমূহের মধ্যে সম্পর্ক ও সরকারী কার্যাবলী নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়ে থাকে। দেশের কোন আইন-কানুন ও নিয়মাবলী বা কোন কার্যাবলী সংবিধানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতীয়মান হলে সংবিধানকেই প্রাধান্য দেয়া হয়, কারণ সংবিধানের মাধ্যমেই দেশের জাতীয় জীবন এবং রাষ্ট্রীয় চেহারা প্রতিফলিত হয়।
বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই সাংবিধানিক প্রাধন্য স্বীকৃত রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর প্রয়োগ সর্বাধিক। সেখানে সংবিধানকে সকল কিছুর উর্ধ্বে স্থান দেওয়া হয়েছে এবং বিচার বিভাগকে সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে কাজ করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীমকোর্ট বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা দ্বারা প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেসের প্রণীত কোন আইন সংবিধানের পরিপন্থী প্রতীয়মান হলে সুপ্রীমকোর্ট তা বাতিল করতে পারে। এভাবে সেখানে সাংবিধানিক প্রাধান্য বজায় রাখা হয়।
ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব স্বীকৃত। যুগ যুগ ধরে বিবর্তনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সংবিধানের বিকাশ ঘটেছে। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট জনগণের মৌলিক চাহিদা ও আশা আকাংখা পূরণের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে সংবিধানকে সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাই সেখানে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্বের দ্বারা কার্যত সাংবিধানিক প্রাধন্য স্বীকৃতি লাভ করেছে।
সাংবিধানিক সার্বভৌমত্ব মতবাদটি বাংলাদেশেও স্বীকৃতি লাভ করেছে। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭(১) অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃক কার্যকরী হবে। ৭(২) অনুচ্ছেদে আরোও বলা হয়েছে যে, “জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরুপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোনও আইন যদি এই সংবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হয় তবে সেই আইনের সাথে এটি যতটা বেমানান তা বাতিল হয়ে যাবে।”
এগুলি বিশ্লেষণ করলে ইহাই প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশের সংবিধান হচ্ছে দেশের চুড়ান্ত ও সর্বোচ্চ আইন এবং সকল ক্ষমতার উৎস। সাংবিধানিক এই প্রাধান্য সংবিধানের মাধ্যমেই স্বীকৃত হয়েছে।
সাংবিধানিক সার্বভৌমত্বের বৈশিষ্ট্য
সাংবিধানিক সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা
- সংবিধান যে দেশের সর্বোচ্চ আইন এবং সকল ক্ষেত্রে এর স্থান সকলের ঊর্ধ্বে তা সংবিধানেই উল্লেখ করতে হবে। এর ফলে আইন পরিষদ কর্তৃক প্রণীত কোন আইন সংবিধানের পরিপন্থী বা েএর বিধানের সাথে অসামঞ্জস্য হতে পারে না। শাসক গোষ্ঠীর পরিবর্তন হলেও এরুপ সাংবিধানিক প্রাধন্য অপরিবর্তিত থাকে।
- সংবিধান লঙ্ঘিত হলে বা এর সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হলে তা বাতিল করার ক্ষমতা বিচার বিভাগের উপর অর্পণ করা হয়। কিন্তু সংবিধান হচ্ছে জনগণের আশা আকাংখার প্রতীক তাই সামাজিক মূল্যবোধ, নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, দেশাচার ইত্যাদির প্রতি লক্ষ রেখে সংবিধানের বিধি-বিধানগুলি বিচার বিশ্লেষণ করা হয়। তাই জনগণের মধ্যে যেনো বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি না হতে পারে সেদিকেও বিচার বিভাগকে খেয়াল করতে হবে।
- লিখিত সংবিধান সাধারণতঃ দুষ্পরিবর্তনীয় হয়ে থাকে। তাই শাসক শ্রেণীর ইচ্ছামত তা পরিবর্তন করা যায় না হেতু লিখিত সংবিধানের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করা সহজ।
- সরকার বা কোন কর্তৃপক্ষই যেনো সংবিধানকে উপেক্ষা করতে না পারে সেজন্য জনগণকে সচেতন হতে হবে এবং প্রয়োজনবোধে তাদেরকে সোচ্চার হতে হবে।
COMMENTS