উত্তরাধিকারের প্রতিবন্ধকতা হলো একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত কাজ বা বৈশিষ্ট্য যা উত্তরাধিকার সূত্রে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করে। মুসলিম আইনে কিছু প্রতিব...
উত্তরাধিকারের প্রতিবন্ধকতা হলো একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত কাজ বা বৈশিষ্ট্য যা উত্তরাধিকার সূত্রে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করে। মুসলিম আইনে কিছু প্রতিবন্ধকতা ও অন্তরায় রয়েছে যা একজন উত্তরাধিকারীকে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি থেকে উপকার পেতে বাধা দেয়।
নিম্নে তা বাংলাদেশে প্রচলিত মুসলিম আইনানুসারে আলোচনা করা হলো-
General impediments to inheritance
উত্তরাধিকারের প্রতিবন্ধকতা সমূহ
মুসলিম আইন অনুসারে দুইভাবে উত্তরাধিকারী হতে বঞ্চিত হতে পারে। প্রথমতঃ আংশিকভাবে বা অসম্পূর্ণভাবে এবং দ্বিতীয়তঃ সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত। পিতা, মাতা, স্বামী, স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা- এরা কখানো উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হয় না কিন্তু এদের সকলের উপস্থিতিতে অন্যান্য উত্তরাধিকারীগণ যথা, ভাই-বোন কোন অংশ পায় না। চারটি ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরুপে বঞ্চিত হয়। এগুলি হচ্ছে-
- ধর্মের পার্থক্য (Difference in religion);
- দাসত্ব (Slavery);
- জারজস্ব (Illegitimacy); ও
- নর হত্যা (Homicide)।
উল্লেখিত প্রতিবন্ধকতা সমূহের মধ্যে ‘ধর্মের পার্থক্য’ বাধাটি ১৮৫০ সালের ২১ নম্বর আইন The Caste Disabilities Removal Act, (1850) দ্বারা রহিত করা হয়েছে। আর ‘দাসত্বের’ বাধাকে ১৮৪৩ সালের ৫ নম্বর আইন Indian Slavery Act, (1843) দ্বারা অপসারিত করা হয়েছে। সুতরাং বর্তমানে বাংলাদেশে কেবল একটি প্রতিবন্ধকতার জন্য উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হতে হয়, তা হলো- নরহত্যা।
হত্যাকারীর উত্তরাধিকার
যদি কেউ, যার উত্তরাধিকারী সে হবে, তার মৃত্যূ ঘটায়, তা হলে বিশ্বের সকল আইনেই রয়েছে যে, সাধারণ ন্যায়-নীতি অনুসারে সে তার উত্তরাধিকারী হতে পারবে না। মুসলিম আইনেই উহা রয়েছে। কিন্তু মুসলিম সুন্নী আইনের শর্তগুলো অন্যান্য আইন অপেক্ষা কঠোর।
শীয়া আইনে রয়েছে যে, যদি ঐ মৃত্যূ ইচ্ছাপ্রসূত এবং হিংসাত্মক হয়, তা হলেই শুধু হত্যাকারী উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হবে।
কিন্তু সুন্নী আইনে রয়েছে যে, মরহুমের মৃত্যূ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো হয়, কিংবা অসাবধানতার দরুন ঘটে, এমন কি দুর্ঘটনাক্রমেও যদি ঘটে, অর্থাৎ উত্তরাধিকারী যদি ছাদ হতে মরহুমের ওপর হঠাৎ পতিত হওয়ার দরুন তার মৃত্যূ ঘটে, তা হলেও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ তার উত্তরাধিকার হতে পারবে না।
অবশ্য উক্ত ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে মৃত্যূ ঘটা চাই। কারও কার্যদ্বারা পরোক্ষভাবে যদি কোন মৃত্যূ ঘটে, তা হলে সে উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হবে না। সুতরাং যদি কেউ কোন রকম কুপ খনন করে এবং তার মধ্যে মরহুম পতিত হয়ে মৃত্যূ বরণ করে, তা হলে, ঐ কুপ খননকারীর পক্ষে মরহুমের উত্তরাধিকার হতে কোন বাধা সৃষ্টি করবে না।
যদি কোন শিক্ষক ছাত্রকে পিতার সম্মতিক্রমে শাস্তি প্রদান করতে গিয়ে, কিংবা পিতার তার পুত্রকে বেত্রাঘাত করতে গিয়ে ছাত্র কিংবা পুত্রের মৃত্যূ ঘটায় তা হলে তারা তাদের উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হবে না। তবে পিতার ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) ভিন্ন মত পোষণ করেন।
ঘাতকের পক্ষে উত্তরাধিকার লব্ধির এ প্রতিবন্ধকতা শুধু ব্যক্তিগত। অর্থাৎ যে হত্যার কারণ সেই শুধু বঞ্চিত হবে। অন্য অনেক আইনে তার বংশধরগণও উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হয়, কিন্তু মুসলিম আইনে তা হবে না।
তবে লাহোর হাইকোর্টের এক-বিচারকবিশিষ্ট আদালতে ধার্য করেছে যে, উহা সাধারণ নীতির বিরোধী, সুতরাং তার বংশধরগণও বঞ্চিত হবে।
সর্বোপরি, মহানবী (সাঃ) বলেছেন-
“হত্যাকারীর উত্তরাধিকারী হওয়ার কোন অধিকার নেই এবং যদি মৃত ব্যক্তির কোন উত্তরাধিকারী না থাকে তবে তার উত্তরাধিকারী তার নিকটতম আত্মীয় হবে। হত্যাকারীর উত্তরাধিকারসূত্রে কিছুই প্রাপ্য নেই ।” (আবু দাউদ শরীফ)
COMMENTS