বিক্রয় কর (Sale tax) হলো পণ্য ও পরিষেবা বিক্রির উপর সরকার কর্তৃক আরোপিত একটি কর শুল্ক। খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে বিক্রয়কেন্দ্র...
বিক্রয় কর (Sale tax) হলো পণ্য ও পরিষেবা বিক্রির উপর সরকার কর্তৃক আরোপিত একটি কর শুল্ক। খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে বিক্রয়কেন্দ্রে একটি প্রচলিত বিক্রয় কর আদায় করা হয় এবং সরকারকে দেওয়া হয়।
নিম্নে বিক্রয় কর সম্পর্কিত আইন বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
Laws relating to sale tax
বিক্রয় কর সম্পর্কিত আইন
কোন পণ্য বিক্রয়ের মুনাফার পর যে কর ধার্য করা হয়, তা হলো বিক্রয় কর। অর্থাৎ বিক্রয়ের উপর ভিত্তি করে করদাতা কর্তৃক যে কর প্রদান করা হয়, উহাই ‘বিক্রয়কর’ (Sale tax)। এই জাতীয় কর প্রধানতঃ প্রস্তুতকারী কিংবা আমদানিকারক কর্তৃক প্রদেয় হয়। এই করের বিধি-বিধানসমূহ ১৯৫১ সনের বিক্রয় কর আইনবলে নিয়ন্ত্রিত।যে সব পণ্যসমূহ ১৯৫১ সনের বিক্রয় কর আইনবলে করারোপযোগ্য তা হলো নিম্নরুপঃ
- বাংলাদেশে প্রস্তুত করা পণ্য দ্রব্যের উপর কর, যা প্রস্তুতকারী অথবা উৎপাদনকারী কর্তৃক প্রদেয় হয়।
- আমদানিকারক কর্তৃক বাংলাদেশে আমদানিকৃত পণ্য দ্রব্যের উপর প্রদেয় কর।
- এই রুপ প্রদেয় করের পরিমাণ পণ্য দ্রব্যের মূল্যের উপর ২০% হতে হবে। ‘বিক্রয় কর’ অথবা এইরুপ যে কোন কর বাংলাদেশ সরকার বিদেশে রপ্তানীকৃত পণ্য দ্রব্যের উপরেও আরোপ করা যেতে পারে।
বিক্রয় কর নির্ধারণের পদ্ধতি
বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত পণ্য দ্রব্যের উপর প্রদেয় কর অত্র আইনের ২ ধারায় (১৬) দফায় বর্ণিত বিক্রয় মূল্যের উপর ধার্য করা হবে। এই আইনের ১৮ ধারা এবং ১৯ ধারা মোতাবেক বিক্রয় মূল্যের উপর কর ধার্য করা হয়।
আমদানিকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে, শুল্ক বিভাগ হতে ছাড়পত্র লাভ করার পূর্বেই আমদানিকারককে তার পণ্যের উপর কর প্রদান করতে হবে।
তবে, অন্যান্য ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে কর প্রদান করতে হবে। যথাঃ
- বিক্রেতাকে পণ্যদ্রব্য হস্তান্তর করার পর কর প্রদেয় হবে।
- বিক্রেতা কোন পণ্যের মালিকানা লাভ মাত্রই কর প্রদান করবে।
- আবগারী শুল্ক প্রদত্ত হওয়ার পর করদাতাকে বিক্রয় কর প্রদান করতে হবে।
- পণ্য-দ্রব্য বাংলাদেশ হতে বহির্বিশ্বে প্রেরণ করার সময়ও করদাতাকে অবশ্যই বিক্রয় কর প্রদান করতে হবে।
অতএব, বিক্রয় কর এককভাবে বিক্রয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হয়ে থাকে। তিন মাস পর পর বিক্রয়ের বিবরণী পেশ করতে হয়। এই বিবরণীর ভিত্তিতেই বিক্রয় কর নির্ধারণ করা হয়।
আপীল
১৯৫১ সালের বিক্রয় কর আইনের ১৪ ধারার বিধান মোতাবেক যে কোন বিক্ষুব্ধ করদাতা বিক্রয় কর অফিসারের আদেশের বিরুদ্ধে আপীলেট যৌথ কর কমিশনেরর নিকট আপীল দায়ের করতে পারেন।
এই ধারার (১) উপধারায় বলা হয়েছে যে, করদাতার উপর ধার্যকৃত শাস্তি বা কর নির্ধারনের আপত্তি উত্থাপনের ক্ষেত্রে যে কোন বিক্ষুব্ধ কর দাতাকে তার উপর জারীকৃত তলবানা নোটিশ প্রাপ্তীর ৩০ দিনের মধ্যে এই উপধারার বিধান মোতাবেক আপীলেট সহকারী কমিশনার (যে পদটি বর্তমানে আপীলেট যৌথ কর কমিশনার হিসেবে পরিচিত) এর নিকট আপীল দায়ের করতে হবে। যদি আপীলেট যৌথ কর কমিশনার মনে করেন যে, আপীলকারীর উপর ধার্যকৃত কর যথাযথভাবে নিরুপিত হয়েছে তাহলে তিনি এই উপধারার অধীনে আপীল গ্রহণ করবেন না।
(২) উপধারায় বলা হয়েছে যে, একটি নির্ধারিত ফরমে এই আপীল দায়ের করতে হবে। (৩) উপধারায় বলা হয়েছে যে, আপীলেট যৌথ কর কমিশনার আপীলকারীকে শুনানির জন্য যথাযথ সুযোগ প্রদান করে ও আপীলের গুণাবলীর উপর ভিত্তি করে তিনি যেরুপ যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করেন সেরুপ আদেশ জারী করবেন।
যে সকল দালিলীক সাক্ষ্য করদাতা বিক্রয় কর অফিসারের নিকট দাখিল করেননি, সেগুলি যৌথ আপীলেট কর কমিশনারের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না, যদি না তিনি এরুপ দাখিল না করার যথার্থ কারণ দেখাতে সমর্থ হন।
এভাবে একজন করদাতা বিক্রয় কর অফিসারের আদেশের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করতে পারবেন।
রিভিশন দায়েরের পদ্ধতি
বিক্রয় কর সংক্রান্ত আদেশের বিরুদ্ধে বিক্রয় কর আইন, ১৯৫১ এর ১৬ ধারায় এবং বিক্রয় কর বিধির ৭৫ বিধিতে রিভিশনের বিধান রয়েছে। এই আইনের আওতায় কর উপ-কমিশনার বা আপীলেট যুগ্ম কমিশনার বা পারদর্শী যুগ্ম কমিশনার এর প্রদত্ত আদেশের রিভিশনের জন্য সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আদেশ প্রদানের ৩০ দিনের মধ্যে নির্ধারিত ফি সহ কর কমিশনারের নিকট আবেদন করতে পারেন। এই সময়ের মধ্যে আবেদন পত্র পেশ করার মত যথেষ্ট কারণ থাকলে এবং কমিশনার যথাযথ মনে করলে এই সময়ের পরেও আবেদন পত্র গ্রহণ করতে পারেন।
আবেদন পত্র পাবার পর কর কমিশনার সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়ে পাঠাতে পারেন এবং নিজে তদন্ত করতে পারেন কিংবা অপর কারো দ্বারা তদন্ত করতে পারেন। তদন্তের পর এই আইনের বিধান সাপেক্ষে যা যথাযথ মনে করেন সেরুপ আদেশ দিতে পারেন। তবে যে আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশনের দরখাস্ত করা হয় সে আদেশের চেয়ে বেশি প্রতিকূল আদেশ কমিশনার দিতে পারবেন না।
এছাড়া যেক্ষেত্রে আপিলেট যুগ্ম কমিশনার কিংবা আপীলেট ট্রাইব্যুনালের নিকট আপীল করা হয়েছে যা বিবেচনাধীন রয়েছে সেক্ষেত্রে কমিশনার কোন রিভিশনের আদেশ দিবেন না।
COMMENTS