শরীয়া হলো একটি ধর্মীয় আইন যা কুরআন ও হাদীস থেকে প্রাপ্ত ইসলামী বিশ্বাস। তবে, আধুনিক যুগে এর প্রয়োগের পদ্ধতিটি রক্ষণশীল এবং উদারপন্থী মুসলম...
শরীয়া হলো একটি ধর্মীয় আইন যা কুরআন ও হাদীস থেকে প্রাপ্ত ইসলামী বিশ্বাস। তবে, আধুনিক যুগে এর প্রয়োগের পদ্ধতিটি রক্ষণশীল এবং উদারপন্থী মুসলমানদের মধ্যে বিবাদের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এটি বিশ্বজুড়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বিষয় হিসাবে রয়ে গেছে।
সুতরাং আমি এখানে বাংলাদেশে শরীয়া আইন কতটুকু প্রযোজ্য সে সম্পর্কে তুলে ধরব। আশা করি আপনি উপকৃত হবেন।
How much Sharia law is applicable in Bangladesh?
বাংলাদেশে শরীয়া আইন কতটুকু প্রযোজ্য?
‘শরীয়া’ বা শরীয়াত শব্দের অর্থ হচ্ছে পানির সন্ধান দানকারী। মরুভূমির দেশে পানির সন্ধান দেওয়া হচ্ছে ত্রাণের বার্তা। যে বিশেষ অর্থে ইহা ব্যবহৃত হয় তা হচ্ছে পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে আল্লাহর আদেশ এবং হাদিছ ও সুন্নাহর মাধ্যমে রাসূলের নির্দেশিত পথ। তাই ‘শরীয়া’ বলতে মূলতঃ কুরআন ও সুন্নাহর অনুশাসনকে এবং মানুষের পালনীয় কর্তব্যসমূহকেই বুঝায়। মানুষের যাবতীয় কার্যকলাপ-ধর্মীয়, নৈতিক কিংবা আইন সংক্রান্ত্র সকল কিছুই শরীয়াতের আওতাভূক্ত।
প্রকৃতপক্ষে, ‘শরীয়া’ হলো ইহকাল ও পরলোকে মানবজাতির কল্যাণের জন্য পথ প্রদর্শনকারী একটি সুবিন্যস্ত প্রক্রিয়া।
এই উপ-মহাদেশে মুগল শাসন আমলে শরীয়া আইন প্রয়োগ করা হতো। ব্রিটিশ শাসন আমলে এর কিছু কিছু পরিবর্তন হতে থাকে। ফৌজদারী কার্যবিধি এর আওতাবহির্ভূত করে সকলের জন্য ব্রিটিশ মডেলে নতুন আইন করা হয় যা এখনো প্রচলিত আছে। বিবাহ, দান, উইল, উত্তরাধিকার ইত্যাদি পারিবারিক বিষয় হিসেবে আখ্যায়িত করে ব্যক্তিগত আইন হিসেবে প্রয়োগ অব্যাহত থাকে।
এভাবে মুসলমান, হিন্দু, খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীরা তাদের পারিবারিক বিষয়ে তাদের ধর্মভিত্তিক পারিবারিক আইন প্রয়োগ করা হতো এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্রিটিশ মডেলে প্রণীত আইন সকলের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য হতো।
পাকিস্থান ও পরে বাংলাদেশ হবার পরেও এর তেমন কোন পরিবর্তন আসেনি। তাই বাংলাদেশে শরীয়া আইন সম্পূর্ণরুপে গ্রহণ করা হয়নি কিংবা সম্পূর্ণরুপে বর্জন করা হয়নি। যেমন শরীয়া আইনের মূল উৎস কুরআন ও সুন্নাহ। কুরআন ভিত্তিক উত্তরাধিকার আইনটি সম্পূর্ণরুপে গ্রহণ করা হয়েছে এবং আদালত কর্তৃক তা বলবৎযোগ্য করা হয়েছে। জাকাত প্রদানসহ অন্যান্য আবশ্যিক কর্তব্য যা কুরআন কর্তৃক নির্দেশিত হয়েছে তা গ্রহণ করা হয়নি। তাই আদালত কর্তৃক ইহা বলবৎযোগ্য নয়। কিন্তু আয়কর প্রদান সকলের জন্য প্রযোজ্য হয়েছে এবং আদালত কর্তৃক তা বলবৎযোগ্য হয়েছে।
তাই দেখা যায় যে, বাংলাদেশে শরীয়া আইন নিম্নোক্তভাবে প্রয়োগযোগ্য রয়েছেঃ
- কুরআন, সুন্নাহ ও প্রথাভিত্তিক কিছু বিধি-বিধান মুসলমানদের জন্য প্রয়োগযোগ্য রয়েছে, যেমন- উত্তরাধিকার, বিবাহ, তালাক, হেবা, উইল, অভিভাবকত্ব ইত্যাদি।
- সামাজিক মূল্যবোধের সাথে সামন্জস্য রেখে বিধিবদ্ধ আকারে কতিপয় আইন প্রয়োগ করা হয়। যেমন- ১৯৩৭ সালের শরীয়া আইন, ১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন, ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৮৫ সালের পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ইত্যাদি।
- নতুন সংবিধি দ্বারা প্রচলিত শরীয়া আইনের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে, যেমন- ফৌজদারী আইন।
সর্বোপরি, বাংলাদেশের একটি ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান রয়েছে তবে বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, ভরণ-পোষণ ও সম্পত্তির উত্তরাধিকার শরীয়া আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
COMMENTS