মুসলিম আইনের ক্রমবিকাশ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ১০ হিজরীতে হযরতের পরলোকগমনের পরবর্তী ৩০ বছর খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে মুসলিম আইন যথেষ্ট উন...
মুসলিম আইনের ক্রমবিকাশ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ১০ হিজরীতে হযরতের পরলোকগমনের পরবর্তী ৩০ বছর খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে মুসলিম আইন যথেষ্ট উন্নতি লাভ করলেও শিয়া ও সুন্নী এই সম্প্রদায়ে মুসলমানগণ বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং তাদের বিবাদের সূচনা হয়। এতদসত্ত্বেও শরীয়া আইন ক্রম উন্নতি লাভ করতে থাকে এবং সপ্তদশ শতাব্দীতে এর চরম বিকাশ লাভ করে। আল-কুরআনের পরে ছহি বুখারী স্থান লাভ করে। অন্যান্য হাদিছও সংকলিত হয়। এছাড়া ইজমা ও কিয়াসের প্রবর্তন হয়।
নিম্নে আমি ইজমা ও কিয়াসের মধ্যের পার্থক্যসমূহ তুলে ধরব। আশা করি আপনি উপকৃত হবেন।
What is the difference between Ijma and Qiyas?
ইজমা ও কিয়াসের মধ্যে পার্থক্য কি?
আইন বিশারদগণের ঐক্যমতকে ইজমা বলে। কোন বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশ কুরআনে বা সুন্নায় না থাকলে ইজমার সাহায্যে তার সমাধান করা হয়। আধুনিক বিজ্ঞানীদের মতে, ইজমা মুসলিম আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস, কারণ মুসলিম আইনের একটি বিরাট অংশ গড়ে উঠেছে ঐক্যমতের ভিত্তিতে।
নবী করিম (সাঃ) এর যে বাণীর উপর ভিত্তি করে ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা হচ্ছে, “আমার উম্মতগণ কখনো কোন ভ্রান্ত মতবাদের উপর একমত হবে না।” হযরতের মৃত্যূর পর খলিফা নির্বাচনের বিষয়টি ইজমার মাধ্যমেই সাব্যস্ত হয়েছে। সর্বোপরি, প্রতি যুগের মুসলিম আইনবিদগণের সম্মিলিত মতকে ইজমা বলে।
পক্ষান্তরে, একটি তুলনামূলক পদ্ধতির মাধ্যমে যুক্তিপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণকে বলা হয় কিয়াস। ইজমা ও কিয়াসের মধ্যে উপরোক্ত সংজ্ঞাগত পার্থক্য ছাড়াও তাদের মধ্যে নিম্নোক্ত পার্থক্য বিদ্যমান।
- ইজমা মুসলিম আইনের তৃতীয় উৎস। কুরআন ও সুন্নাহর কোন বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশ না থাকলে ইজমার সাহায্যে তার সমাধান করা হয়। কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমার মাধ্যমে কোন সমস্যার সমাধান না পাওয়া গেলে কিয়াসের সাহায্য নেওয়া হয়। ইহা মুসলিম আইনের চতুর্থ উৎস।
- ইজমার মাধ্যমে আইন সৃষ্ট হয়। প্রকৃতপক্ষে মুসলিম আইনের একটি বিরাট অংশ গড়ে উঠেছে উলামাগণের ঐক্যমতের ভিত্তিতে। ‘কিয়াস’ কোন নীতি নির্ধারণ করে না; বরং প্রচলিত নীতির ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে মাত্র। তবে কোন কিয়াস যদি ইজমার দ্বারা সমর্থিত হয় তাহলে তা আইনের মর্যদা লাভ করে। তাই বলা যায় যে, কিয়াস কোন আইন সৃষ্টি করে না বটে তবে ইহা আইন উদ্ঘাটন করে।
- কুরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থী কোন ইজমা গ্রহণযোগ্য হয় না এবং কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমার পরিপন্থী কোন কিয়াস হতে পারে না।
- তিন ধরণের ইজমা রয়েছে। যথা- (ক) আছহাবদের ইজমা; (খ) মুসলিম আইন বিষেজ্ঞদের ইজমা; এবং (গ) জনগণ কর্তৃক গঠিত ইজমা। কিয়াস দুই প্রকারের। যথা- (ক) কিয়াস-ই-জলি বা সুস্পষ্ট; এবং (খ) কিয়াসে-ই-খাফই বা সুপ্ত। পবিত্র কুরআনে ‘খামর’ শব্দ দ্বারা মদকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ‘খামর’ শব্দের অর্থ উত্তেজক কোন কিছু। এজন্য ইহা সুস্পষ্ট যে মাদক জাতীয় উত্তেজক দ্রব্যাদি নিষিদ্ধ। আবার হাদিছ শরীফে রয়েছে যে, ৪০ টি ছাগল থাকলে ১টি আল্লাহর ওয়াস্তে দান করতে হবে। নিঃস্ব ব্যক্তির নিকট নগদ অর্থ বেশি গ্রহণীয় হতে পারে। তাই কিয়াস হচ্ছে যে, ছাগলের পরিবর্তে এর মূল্য দেয়া যেতে পারে। ইহা একটি কিয়াসে-খাফই।
- সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যুগ জিজ্ঞাসার সমাধানের জন্য ইজমার সৃষ্টি হয়েছে এবং চারটি সুন্নী মাযহাবেই ইহা অনুসৃত হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে, ইসলামী আইন ব্যবস্থায় ইজমার গুরুত্ব অধিক এবং এটি মানবজীবনের একটি ব্যবহারিক দর্শন।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর পরবর্তী যুগে মুসলিম ধর্ম ও রাষ্ট্র দ্রুত সম্প্রসারিত হতে থাকে এবং নিত্যনতুন পরিস্থিতির উদ্ভব হতে থাকে। তখন কিয়াসের মাধ্যমে সমাধান করা হতো। যে সব আইনের বিধি পূর্বেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার সাথে সাদৃশ্য অনুসন্ধান করে ফলপ্রসূ যুক্তি বা ইল্লাত দ্বারা বিশেষ পরিস্থিতিতে কিয়াসের মাধ্যমে প্রয়োগ যোগ্য করা হতো।
এভাবে মুসলিম আইনকে সব সময় যুগোপযোগী করার প্রচেষ্টা করা হয়েছে এবং পরবর্তীকালে ‘ইসতিহসান’ বা ন্যায়পরায়ণতা, ‘ইসতিসলাহ’ বা জনহিতকর নীতি এবং ‘ইসতিদলাল’ বা খাপ-খাওয়ানো উৎসগুলি সৃষ্টি হয়েছে।
ইজমার তো একটা সঠিক ভিত্তি পাইলাম কিন্তু কিয়াসের কোনো ভিত্তি পাইলাম না।।
ReplyDelete