বিধিবদ্ধের চাইতে নজির একটি ভিন্ন ধরণের আইন। বিধিবদ্ধ আইন সংসদ তৈরি করে এবং বিচারকদের দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়। নজির বিচারক দ্বারা তৈরি আইন। ত...
বিধিবদ্ধের চাইতে নজির একটি ভিন্ন ধরণের আইন। বিধিবদ্ধ আইন সংসদ তৈরি করে এবং বিচারকদের দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়। নজির বিচারক দ্বারা তৈরি আইন। তবে, বিধিবদ্ধের চেয়ে নজির শ্রেষ্ঠ নাকি বিধিবদ্ধ নজিরের চেয়ে উচ্চতর তা একটি বিতর্কিত প্রশ্ন।
নিম্নে আমি নজির ও বিধিবদ্ধ আইনের মধ্যে পার্থক্যসমূহ তুলে ধরব। আশা করি আপনি এতদ্ভয়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব বিচার করতে সক্ষম হবেন।
Superiority between Legislation and Precedent
সংবিধিবদ্ধ ও নজিরের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব
আধুনিক জগতে আইন প্রণয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। যথাযোগ্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আইনগত বিধি-বিধান জারী করাকে আইন প্রণয়ন বলে। ব্যাপক অর্থে আইন সৃষ্টির সকল পদ্ধতিই আইন প্রণয়নের অন্তর্ভূক্ত। কিন্তু সুক্ষ্ম অর্থে বা প্রকৃত অর্থে আইনসভা কর্তৃক সৃষ্ট আইনকে আইন প্রণয়ন বলা হয়। এরুপে প্রণীত আইনকে বিধিবদ্ধ আইন (enacted law) বা সংবিধিবদ্ধ আইন (Statutory law) বলে।
পক্ষান্তরে, ইংরেজিতে নজিরের সমার্থক শব্দ হলো- Precedent। আর Precedent শব্দের অর্থ, “পূর্ববর্তী ঘটনা বা মামলা যা পরবর্তী মামলার নিয়মের উদাহরণ হিসাবে গ্রহণ করা যেতে পারে, বা এর দ্বারা কিছু অনুরূপ আইন বা পরিস্থিতি সমর্থন বা ন্যায়সঙ্গত হতে পারে।” ইহাকে Case law বলা হয়।
এই দুই উৎসই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এদের মধ্যে তুলনা করলেই দেখা যায় যে, উভয়েরই কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। যেমন-
প্রথমতঃ প্রণীত আইন কেবল নতুন আইনের উৎসই নয়; বরং ইহা ইতোমধ্যে প্রচলিত আইনের সংশোধন বা বিলোপ সাধন করতে পারে। কিন্তু নজিরের শুধু গঠনমূলক ভূুমিকাই রয়েছে, প্রচলিত আইনকে এবং সুস্পষ্ট ও বাধ্যকর নজীরকে কোন নজির দ্বারা পরিবর্তন করা যায় না। সে হিসেবে প্রণীত আইনকে আইন সংস্কারের মাধ্যম হিসেবে গণ্য করাে হয়। নজির সর্বক্ষেত্র অনমনীয় নয়। যে ক্ষেত্রে আদালত তার নিজের সিদ্ধান্তকে পরিবর্তন করতে সক্ষম, সেক্ষেত্রে নজির দ্বারা আইন তৈরী করা যায় এবং বিলোপ করা যায়।
দ্বিতীয়তঃ প্রণীত আইনের ক্ষেত্রে দুই কর্তৃপক্ষ জড়িত। আইনসভা আইন প্রণয়ন করে এবং সেই আইন ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ করে আদালত।
তৃতীয়তঃ প্রণীত আইন যে সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় সে সকল ক্ষেত্রে সৃষ্টির পূর্বে প্রণীত আইন ঘোষণা করতে হয়। আইন কার্যকরী হবার পূর্বে তা জানার সুযোগ থাকতে হবে। স্বাভাবিক ন্যায় বিচারের এই শর্ত প্রণীত আইনের ক্ষেত্রে পূরণ করা হয়ে থাকে।
অপরদিকে, পূর্ব-সিদ্ধান্ত বা নজিরের ক্ষেত্রে সৃষ্ট আইনকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োগ করা হয়।
চতুর্থতঃ প্রণীত আইনের ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ প্রয়োগের জন্য পরিস্থিতির সম্ভাব্য দিকগুলি অনুমানের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করে বিধি-বিধান নির্দেশ করতে পারে। কিন্তু নজিরের ক্ষেত্রে আদালতে প্রকৃত পক্ষে মামলা উত্থাপিত হলেই বিধি-বিধান নির্দেশ করা হয়। প্রণীত আইনের কোন ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে আইনসভা সংশোধনের আকারে তা দূর করতে পারে। অবশ্য আদালতও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিধি নির্দেশ আরোপ করতে পারে। এভাবে প্রণীত আইন সম্পূর্ণতা অর্জন করে থাকে। কিন্তু নজির বা পূর্ব সিদ্ধান্তের আইন মূলতঃ অসম্পূর্ণ, অনিশ্চিত ও অবিন্যস্ত থাকে।
পঞ্চমতঃ প্রণীত আইন পূর্ব সিদ্ধান্ত বা নজিরের চেয়ে উৎকৃষ্ট বলে গণ্য হয়। ইহা সাধারণতঃ সংক্ষিপ্ত, সুস্পষ্ট ও সহজবোধ্য বলে গণ্য হয়, কিন্তু নজিরের বিধান ক্রমবর্ধমান মামলার নথিপত্রের মধ্যে এবং রিপোর্টেড হলে রিপোর্টের মধ্যে লুক্কায়িত থাকে। এগুলি জানা সহজসাধ্য নয়।
COMMENTS