আল্লাহ তায়া’লা পৃথিবীতে নবী ও রাসূল প্রেরণের ধারাকে আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ (ছাল্লাল্লাহু আ’লায়হি ওয়া সাল্লাম) কে প্রেরণের মাধ্যমে মোহরাংকিত...
আল্লাহ তায়া’লা পৃথিবীতে নবী ও রাসূল প্রেরণের ধারাকে আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ (ছাল্লাল্লাহু আ’লায়হি ওয়া সাল্লাম) কে প্রেরণের মাধ্যমে মোহরাংকিত করেছেন এবং শরীয়াতে মুহাম্মাদী দ্বারা দ্বীনকে পূর্ণতা দান করেছেন। তথাপিও, খাতামুন নাবীঈনকে অস্বীকার করে মিথ্যা নবুওয়াতের ঠিকাদারী নিয়েছে ভন্ডরা। আর শরীয়াতে মুহাম্মদীর পূর্ণতা সত্ত্বেও সুন্নাতের নামে বিদায়াত সৃষ্টির কারখানা খুলে বসে আছে কথিত সুন্নীরা।
তবে স্বার্থান্বেষী মহলের অপচেষ্টার গল্পের ইতি এখানেই নয়; বরং তারা হযরত মাহদী (রাঃ) কে নিয়ে রচনা করেছে নানা False narrative বা ভুয়া গল্প ও মিথ্যাচার। এমনকি সুন্নীদের একটি অংশ এই অপ-প্রচার মিশনে যোগ দিয়েছে। তবে কথিত সুন্নীদের এই মিথ্যাচারের নেপথ্যে কি শিয়া ষড়যন্ত্র? আসুন জেনে নেয়া যাক।
Hazrat Mahdi and Shia conspiracy
হযরত মাহদী ও শিয়া ষড়যন্ত্র
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা অনুসারে হযরত মাহদী (রাঃ) নিঃসন্দেহে কিয়ামতের পূর্বে দুনিয়াতে আবির্ভূত হবেন। তবে, বাংলাদেশসহ বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কিছু সংখ্যক সুন্নী খুব জোরে-শোরে হযরত মাহদী (রাঃ) এর আগমন প্রচারণায় ব্যস্ত। এমনকি তারা প্রমাণ করতে চায় যে, হযরত মাহদী (রাঃ) ইতিমধ্যে আগমন করে ফেলেছেন। (লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ)
কিন্তু তারা যদি সত্যিকারার্থে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের দাবিদার ও অনুসারী হতো, তাহলে কখনোও এরুপ আকিদা পোষণ করতে পারতো না। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়া’ত হযরত মুহাম্মদ (ছাল্লাল্লাহু আ’লায়হি ওয়া সাল্লাম) কে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হিসেবে আকিদা পোষণ করে থাকে। শুধু তাই নয়; বরং ‘শরীয়াতে মুহাম্মদী’ কিয়ামত অবধি বলবৎ থাকবে, এ ব্যাপারে তারা অটল।
কারণ, কুরআন ও হাদিছ দ্বারা প্রমাণিত ও স্বীকৃত যে, হযরত মুহাম্মদ (ছাল্লাল্লাহু আ’লায়হি ওয়া সাল্লাম) এর ইন্তিকালের পরে এবং পৃথিবী ধ্বংশের প্রাক্কালে পূর্ব-প্রেরিত আম্বিয়া (আঃ) গণের মধ্য থেকে পুনরায় প্রেরিত হবেন কেবল হযরত ঈসা (আ’লায়হিস সালাম)। সুতরাং হযরত মুহাম্মদ (ছাল্লাল্লাহু আ’লায়হি ওয়া সাল্লাম) এর পরে নতুনভাবে নবী হয়ে আসার কোন সুযোগ নাই। যেহেতু তিনি (ছাল্লাল্লাহু আ’লায়হি ওয়া সাল্লাম) “খাতামুন নাবীঈন”। (সূরা আহজাব, আয়াতঃ ৪০)। এছাড়া হযরত ঈসা (আ’লায়হিস সালাম) শরীয়াতে মুহাম্মদীর উপর আ’মল করবেন।
এ ব্যাপারে সহস্রাব্দের মুজাদ্দেদ (সংস্কারক) হযরত শায়খ আহমদ সেরহিন্দী (রহঃ) স্বীয় গ্রন্থ “মাব্দা ও মা’আদ” এ লিখেছেন-
“হযরত মুহাম্মদ (ছাল্লাল্লাহু আ’লায়হি ওয়া সাল্লাম) এর ইন্তেকালের এক হাজার বছর পর এমন একটা জামানা আসবে যখন হাকিকাতে মুহাম্মদী স্বীয় মাকাম (স্থান) হতে উরুজ (উর্ধ্বগমন) করে হাকিকাতে কা’বার সাথে মিলিত হবে। এই সময় হাকিকাতে মুহাম্মদীর নাম হবে হাকিকাতে আহমদী। তখন উভয় মুবারক নাম (মুহাম্মদ ও আহমদ), হাকিকাতে মুহাম্মদী ও হাকিকাতে কা’বার মধ্যে স্থিতি হবে। এ সময় হাকিকাতে মুহাম্মদীর প্রথম মাকাম (যেখানে তা ইতোপূর্বে ছিলো) খালি থাকবে এবং তা ততোদিন খালি থাকবে, যতোদিন না হযরত ঈসা (আ’লায়হিস সালাম) অবতরণ করবেন। তিনি অবতরণের পর, শরীয়াতে মুহাম্মদী (ছাল্লাল্লাহু আ’লায়হি ওয়া সাল্লাম) এর উপর আ’মল করবেন। এই সময় হাকিকাতে ঈসুবী স্বীয় মাকাম হতে উরুজ করে, হাকিকাতে মুহাম্মদীর (ছাল্লাল্লাহু আ’লায়হি ওয়া সাল্লাম) এর শূন্যস্থানে অবস্থান করবে, যা এতোদিন খালি ছিলো।”
অথচ, কথিত সুন্নীগণ হযরত মাহদী (রাঃ) কে নিয়ে দু’টি মিথ্যাচার করছে। যথাঃ
- হযরত মাহদী (রাঃ) এর নামের শুরুতে ‘ইমাম’; ও
- হযরত মাহদী (রাঃ) এর নামের শেষে ‘আ’লায়হিস সালাম’ এর ব্যবহার।
ইদানিং কালের কথিত সুন্নীগণ কর্তৃক হযরত মাহদী (রাঃ) এর নামের শুরুতে ইমাম শব্দ বলতে শুনা যাচ্ছে, যা মূলতঃ শিয়া সম্প্রদায়ের আকিদা বা বিশ্বাস। শুধু তাই নয়; বরং শিয়া সম্প্রদায় হযরত মাহদী (রাঃ) কে তাদের ১২জন ইমামের সর্বশেষ ইমাম বিশ্বাস করে থাকে। তারা আরোও বিশ্বাস করে যে, হযরত মাহদী (রাঃ) তাদের ১১তম ইমাম হাসান আল-আসকারির একমাত্র পুত্র যিনি ইরাকের সামারায় ১৫ই শাবান ২৫৫ হিজরী মোতাবেক ৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতা যখন শহীদ হন তখন তিনি ঐশিকভাবে ইমাম নিযুক্ত ইমাম হন। নাউজুবিল্লাহ! কাজেই তারা হযরত মাহদী (রাঃ) কে এই অর্থে ইমাম আখ্যায়িত করে থাকে। যা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়া’তের আকিদার সহিত সাংঘর্ষিক।
অনুরুপভাবে, আহলে বায়তের অন্তর্ভূক্ত নবী দৌহিত্র হযরত হাসান ও হোসাইন (রাদ্বীয়াল্লাহু আ’নহুমা) এর নামের শুরুতে ইমাম শব্দ ব্যবহার করা সম্পুন্নভাবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়া’তের পরিপন্থী।
এছাড়াও কথিত সুন্নীগণকে হযরত মাহদী (রাঃ) এর নামের শেষে ‘আ’লায়হিস সালাম’ লিখতে ও বলতে শুনা যায়, যেমনটি শিয়া সম্প্রদায় তাদের ১২ জন ইমামের নামের শেষে ‘আ’লায়হিস সালাম’ এর ব্যবহার করে থাকে। উদাহরণস্বরুপ, হযরত ইমাম হাসান আ’লায়হিস সালাম, ইমাম হোসাইন আ’লায়হিস সালাম ইত্যাদি।
পক্ষান্তরে, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়া’তের আকিদা হলো-‘আ’লায়হিস সালাম’ শুধুমাত্র নবীগণের জন্য খাছ। তাই ‘আ’লায়হিস সালাম’ কেবল আম্বিয়াদের নামের শেষে প্রযোজ্য। অনুরুপভাবে, ‘রাদ্বীয়াল্লাহু আ’নহু’ নবীগণের ছাহাবাগণের জন্য খাছ। তাই ‘রাদ্বীয়াল্লাহু আ’নহু’ ছাহাবাগণের নামের শেষে প্রযোজ্য। (সূরা বায়্যিনা, আয়াত-৮)। এমনকি নবীগণের স্ত্রীদের নামের ক্ষেত্রেও ‘আ’লায়হিস সালাম’ প্রযোজ্য নয়। তথাপিও কতিপয় সুন্নী মুর্খতা বশতঃ মা হাওয়া (রাঃ) এর নামের শেষে “আ’লায়হাস সালাম” ব্যবহার করে থাকে।
কাজেই তাদের কাছে আমার প্রশ্ন যদি নবীগণের স্ত্রীগণের নামের শেষে ‘আ’লায়হাস সালাম’ ব্যবহার করা জায়েজ হতো, তবে উম্মাহাতুল মুমিনাগণের নামের শেষে ‘আলায়হাস সালাম’ ব্যবহার করা হয় না কেন? বরং উম্মাহাতুল মুমিনাগণের নামের শেষে ‘রাদ্বীয়াল্লাহু আ’নহা’ বলা হয়ে থাকে। যেমন, হযরত খাদিজা (রাঃ), হযরত আয়েশা (রাঃ) ইত্যাদি।
পরিশেষে বলব যে, কথিত সুন্নীগণ কর্তৃক হযরত মাহদী (রাঃ) কে ইমাম ও নবী হিসেবে আখ্যায়িত করার নেপথ্যে মূলতঃ শিয়া ষড়যন্ত্র।
COMMENTS