বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ আছে, “যেখানে একটি অধিকার রয়েছে, সেখানে একটি প্রতিকার রয়েছে”। আর প্রতিকারের অধিকার ঐতিহাসিকভাবে সমস্ত আইনী ব্যবস্থ...
বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ আছে, “যেখানে একটি অধিকার রয়েছে, সেখানে একটি প্রতিকার রয়েছে”। আর প্রতিকারের অধিকার ঐতিহাসিকভাবে সমস্ত আইনী ব্যবস্থায় স্বীকৃত ও মৌলিক অধিকারগুলির মধ্যে একটি।
নিম্নে মৌলিক অধিকার ও উহা লঙ্ঘনের প্রতিকার বিধান আলোচনা করা হলো।
What is the remedy for violation of fundamental rights?
মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের প্রতিকার কি?
যে সকল অধিকার বা সুযোগ-সুবিধা মানুষের সুষ্ঠ ও স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য অপরিহার্য সেগুলিকে সাধারণতঃ মৌলিক অধিকার বলা হয়। নাগরিকদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য এ সকল অধিকার অত্যাবশ্যকীয়। সর্ব প্রথম ফ্রান্সের সংবিধানে মৌলিক অধিকারসমূহ স্থান পেয়েছিল। পরবর্তীকালে পৃথিবীর প্রায় সকল রাষ্ট্রই মৌলিক অধিকারকে তাদের সংবিধানে সংযোজন করেছে।
বস্তুতঃ মৌলিক অধিকার জনগণের মর্যদার প্রতীক। বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকার সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে এবং বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টকে এ অধিকার সংরক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
মানুষের সহজাত বৃত্তিগুলোর সংরক্ষণ ও বিকাশের জন্য তাকে অবশ্যই মৌলিক অধিকার ভোগ করার সুযোগ দিতে হবে। এ অধিকারগুলো এমন প্রকৃতির যে, সেগুলোর কোন পরিবর্তন করা যায় না, যদিও সাময়িকভাবে সেগুলো স্থগিত রাখা যায়। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদ হতে ৪৪ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত নিম্নলিখিত মৌলিক অধিকারের উল্লেখ করা হয়েছেঃ
- আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান (২৭ অনুচ্ছেদ)।
- ধর্ম, বর্ণ প্রভৃতি কারণে বৈষম্য (২৮ অনুচ্ছেদ)।
- সরকারী নিয়োগ (২৯ অনুচ্ছেদ)।
- রাষ্ট্র কর্তৃক উপাধি প্রদান (৩০ অনুচ্ছেদ)।
- আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার (৩১-৩২ অনুচ্ছেদ)।
- গ্রেপ্তার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ (৩৩)।
- বাধ্যতামূলক শ্রম নিষিদ্ধ করণ (৩৪ অনুচ্ছেদ)।
- বিচার ও দন্ড সম্পর্কিত অধিকার (৩৫ অনুচ্ছেদ)।
- চলাচলের স্বাধীনতা (৩৬ অনুচ্ছেদ)।
- সমাবেশের অধিকার (৩৭ অনুচ্ছেদ)।
- সংগঠনের অধিকার (৩৮ অনুচ্ছেদ)।
- চিন্তা, বিবেক এবং বাক স্বাধীনতা (৩৯ অনুচ্ছেদ)।
- বৃত্তি বা পেশা গ্রহণের স্বাধীনতা (৪০ অনুচ্ছেদ)।
- ধর্মের স্বাধীনতা (৪১ অনুচ্ছেদ)।
- সম্পত্তির অধিকার (৪২ অনুচ্ছেদ)।
- বাসস্থানের নিরাপত্তা ও চিঠিপত্রের গোপনীয়তা অধিকার (৪৩ অনুচ্ছেদ)।
এই গুলি হচ্ছে উল্লেখযোগ্য মৌলিক অধিকার যা বাংলাদেশ সংবিধানে বিবৃত হয়েছে।
মৌলিক অধিকার বলবৎকরণ
অধিকাংশ লিখিত সংবিধান মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক প্রতিকার প্রদান করে থাকে। সেই হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধান ব্যতিক্রম নয়। ফলে, যদি কোন নাগরিকের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়, তবে তিনি প্রতিকার দাবি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কোন নাগরিক তার মৌলিক অধিকার বলবৎ করতে চাইলে সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদের বিধান মোতাবেক সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে মামলা দায়ের করতে হবে।
উদাহরণঃ
ধরুন, আইন আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী হঠাৎ আপনাকে গ্রেপ্তার করেছিল। তবে গ্রেপ্তারের কারণ আপনাকে অবহিত না করে আটকিয়ে রাখা হয়। এছাড়া আপনাকে আপনার মনোনীত আইনজীবী হতে পরামর্শ এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। এই মুহুর্তে আপনি কী করবেন?
উপরোক্ত পরিস্থিতিতে আপনার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। কারণ, বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদ “গ্রেপ্তার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ” অনুসারে, কোন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হলে যথা শিঘ্রই তার আটকের কারণ অবহিত না করে আটক রাখা যাবে না এবং গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে তার আইনজীবীর সহিত পরামর্শক্রমে আত্মপক্ষ সমর্থন অধিকার হতে বঞ্চিত করা যাবে না। সেই অনুচ্ছেদে আরোও বলা হয়েছে যে, আটককৃত ব্যক্তিকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করতে হবে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ব্যতীত অতিরিক্ত সময় আটকে রাখা যাবে না।
কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে উপরোক্ত আইনী বিষয়গুলির কোনটিই প্রয়োগ করা হয়নি। যার কারণে আপনার মৌলিক অধিকার খর্ব হয়েছে। কাজেই আপনি আপনার মনোনিত আইনজীবীর মাধ্যমে হাইকোর্ট ডিভিশনে Writ of Habeas Corpus (বন্দী হাজির রিট) পিটিশন দায়ের করে আপনার অধিকার আদায় করতে পারবেন। হাইকোর্ট বিভাগ ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯১ ধারায় হেবিয়াস কর্পাস রিট জারি করে আইন বহির্ভূতভাবে আটককৃত ব্যক্তিকে মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দিতে পারবেন।
COMMENTS