মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইন দুটি ভিন্ন ধরণের আইনের বর্ণনা ও পার্থক্য করতে ব্যবহৃত পরিভাষা। বাংলাদেশে, এই উভয় ধরণের আইনই প্রচলিত আইন, সংবিধান, বি...
মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইন দুটি ভিন্ন ধরণের আইনের বর্ণনা ও পার্থক্য করতে ব্যবহৃত পরিভাষা। বাংলাদেশে, এই উভয় ধরণের আইনই প্রচলিত আইন, সংবিধান, বিধিবদ্ধভাবে প্রণীত আইন এবং বিচারিক সিদ্ধান্ত সহ বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত।
নিম্নে উভয় প্রকার আইনের সংজ্ঞা ও পার্থক্য তুলে ধরা হলো।
The difference between Substantive Law and Procedural Law
মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইনের মধ্যে পার্থক
আইন বিজ্ঞানে মূলতঃ দু’ ধরণের আইনের উল্লেখ রয়েছে। এগুলি হচ্ছেঃ
- মূল আইন (Substantive Law); ও
- পদ্ধিতগত (Procedural Law) আইন।
মূল আইন (Substantive Law)
যে আইনের মাধ্যমে জনগণ, সরকারের বিভিন্ন অঙ্গ বা মামলার পক্ষগণের পারস্পারিক অধিকার ও দায়িত্ব নির্ধারণ করে তা হচ্ছে মূল আইন (Substantive Law)। তাই সাংবিধানিক আইন, দন্ডবিধি, ভূমি আইন, চুক্তি আইন, ইত্যাদি হচ্ছে মূল আইন। মূল আইনের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরুপঃ- অভিযুক্ত ব্যক্তির দায়িত্ব ও অধিকারকে সংজ্ঞায়িত করা।
- উপাদানের উপর ভিত্তি করে অপরাধের ধরণ এবং তীব্রতা নির্ধারণ করা।
- দোষী সাব্যস্ত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তি কি ধরণের শাস্তির মুখোমুখি হতে পারে তা নিরুপণ করা।
- কোন কাজটি বৈধ হবে আর কোন কাজটি অবৈধ হবে, কোন নির্দিষ্ট অপরাধ আর্থিক দন্ডে দন্ডনীয় না কারা দন্ডে দন্ডনীয়, কোন নির্দিষ্ট সম্পত্তি পুনরুদ্ধারযোগ্য কিনা ইত্যাদি।
- মূল আইন মামলার বিষয়বস্তুর সাথে জড়িত থাকে এবং ন্যায় পরিচালনার অভীষ্ট লক্ষ্যের সহিত সংশ্লিষ্ট থাকে।
বর্তমানে খুনের শাস্তি মৃত্যূদন্ড। এই মৃত্যূদন্ডের বিধান বিলোপ সাধন করলে মূল আইনের পরিবর্তন করা হবে। আইনে বলবৎযোগ্য সম্মতি হচ্ছে চুক্তি। কিন্তু কখন একটি সম্মতি আইনে বলবৎযোগ্য হতে পারে তা মূল আইনের বিষয়বস্তু। একইভাবে, কোন কোন চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে পালন করতে হবে তাও মূল আইনের বিষয়। তাই দেখা যায় যে, মূল আইন শুধু অধিকার নির্ধারণ করে না, অধিকার লঙ্ঘনের প্রতিকারও দেয়।
প্রকৃতপক্ষে, মূল আইন অনেক ব্যাপক এবং এর পরিধি অনেক বিস্তৃত। স্যামন্ডের মতে, পদ্ধতিগত আইন ব্যতীত অন্য সকল আইনই হচ্ছে মূল আইন। আইনের যে শাখা মামলার প্রণালী নির্ধারণ করে তা হচ্ছে পদ্ধতিগত আইন।
পদ্ধতিগত আইন (Procedural Law)
মূল আইনকে বাস্তবে প্রয়োগ করার জন্য যে আইন অনুসৃত হয় তাকে পদ্ধতিগত আইন বলে। বিচার প্রশাসনের জন্য মূল আইনের ন্যায় পদ্ধতিগত আইনও সমধিক গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, বাংলাদেশে প্রযোজ্য দন্ডবিধি আইনটি প্রণীত হয়েছিল ১৮৬০ সালে। ইহা মূলতঃ মৌল আইন। বিভিন্ন অপরাধের সংজ্ঞা, এর উপাদান ও শাস্তির বিধান এতে রয়েছে। কিন্তু ফৌজদারী আইন প্রশাসনের জন্য এগুলো যথেষ্ট নয়। ফলশ্রুতিতে, পদ্ধতিগত আইন নিম্নোক্ত বিষয়গুলি নিয়ে কাজ করেঃ
- একটি ফৌজদারী মামলা কোথায় ও কিভাবে করতে হবে।
- মামলার রায় বা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোথায় আপীল করতে হবে।
- অপরাধীদের গ্রেপ্তার, আদালতে উপস্থাপন, আদালত গঠন, মামলা পরিচালনা, নিষ্পত্তি ও রায়।
কাজেই বলা যায় যে, পদ্ধতিগত আইন হচ্ছে সম্পূরক যা মৌল আইনে বর্ণিত অভীষ্ঠ লক্ষ্যে উপনীত হতে সাহার্য করে। মূল আইন যে, অধিকার ও দায়িত্ব নির্ধারণ করে তা ভঙ্গ করলে পদ্ধতিগত আইন প্রতিকার দেয়।
তাই এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে স্যামন্ড বলেন যে, আইনের যে শাখা মামলার প্রণালী নির্ধারণ করে তা হচ্ছে পদ্ধতিগত আইন। প্রকৃতপক্ষে, পদ্ধতিগত আইন মামলার কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
তবে, স্যামন্ডের মতে, এ পার্থক্য শুধু আনুষ্ঠানিকতা মাত্র, বাস্তব ক্ষেত্রে এর তেমন গুরুত্ব নেই। অনেক পদ্ধতিগত বিধি-বিধান তাদের বাস্তব কার্যকারিতার দিক দিয়ে সম্পূর্ণভাবে না হলেও উল্লেখযোগ্যভাবে মূল আইনের সম পর্যায়ের। তাই আপীল করার অধিকার, আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য সাক্ষ্যদানের অধিকার ইত্যাদি পদ্ধতিগত আইনের আওতাভূক্ত হলেও এগুলো অধিকার নির্ধারণ করে থাকে।
পরিশেষে বলা যায় যে, মানুষের অধিকার ও দায়-দায়িত্ব নিরুপণ করে মূল আইন এবং সেই অধিকার প্রয়োগ করার পদ্ধতি শেখায় পদ্ধতিগত আইন।
COMMENTS