একটি চুক্তি বিভিন্ন কারণে বাতিল বা অকার্যকর হতে পারে। গঠনগত কারণে কোন কোন চুক্তি শুরুতেই অকার্যকর (Void) হয়ে পড়ে। আবার কোন কোন চুক্তি সামাজ...
একটি চুক্তি বিভিন্ন কারণে বাতিল বা অকার্যকর হতে পারে। গঠনগত কারণে কোন কোন চুক্তি শুরুতেই অকার্যকর (Void) হয়ে পড়ে। আবার কোন কোন চুক্তি সামাজিকভাবে ক্ষতিকারক বা জননীতির (Public policy) পরিপন্থী হবার কারণে বাতিল হিসেবে বিবেচিত হয়। তন্মধ্যে ব্যবসায় নিরোধমূলক চুক্তি অন্যতম।
নিম্নে ব্যবসায়-বাণিজ্যে বাধামূলক চুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
What is agreement in restraint of trade?
ব্যবসায় নিরোধমূলক চুক্তি কি?
যে চুক্তি কোন লোকের বৈধ ব্যবসায়, চাকুরী, বা পেশা পরিচালনার ব্যাপারে বাধার সৃষ্টি করে সে চুক্তি আইনত বাতিল। বাংলাদেশ চুক্তি আইনের ২৭ ধারায় বলা হয়েছে যে, যে চুক্তি দ্বারা কোন ব্যক্তিকে যে কোন বৈধ ব্যবসায় বা পেশা থেকে নিবৃত্ত রাখা হয়, সে সীমা পর্যন্ত তা বাতিল।
উদাহরণ- ১
Madhab Chander Vs. Rajcoomer Dass [(1874) 14 B.L.R. 76] মামলায় ‘ক’ ও ‘খ’ কলকাতার একই এলাকায় একই ধরণের ব্যবসায় পরিচালনা করতো। ‘খ’ ঐ এলাকায় ব্যবসায় বন্ধ করবে এবং এর প্রতিদান হিসেবে ‘ক’ নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিবে এই মর্মে একটি চুক্তি হয়। ‘খ’ ব্যবসায় বন্ধ করে কিন্তু ‘ক’ প্রতিশ্রুত অর্থ প্রদান করেনি। এমতাবস্থায় ‘খ’ ঐ অর্থ আদায়ের উদ্দেশ্যে মামলা দায়ের করে। আদালত বলেন যে, যদিও এরুপ নিষিদ্ধকরণ আংশিক কেননা কলকাতার একটি নির্দিষ্ট এলাকার জন্য প্রযোজ্য তবুও তা ব্যবসায় নিরোধমূলক তা বাতিল। তাই ‘খ’ ঐ অর্থ উদ্ধার করতে পারবে না।
উদাহরণ-২
The Brahmaputra Tea Co. Ld. Vs. E. Scarth [(1885) ILR 11 Cal 545] মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত প্রদান করেন যে, পূর্বতন মালিকের নিকট হতে কর্মত্যাগ করে ৫ বছরের জন্য ৪০ মাইলের মধ্যে ঐ একই ধরণের কাজ করতে পারবে না এরুপ চুক্তি বাতিল।
উদাহরণ- ৩
Cohes Vs. Wilkie [16 C.W.L. 534] মামলার ঘটনা ছিল এরূপ একজন অভিনেতাকে ইংল্যান্ড হতে ভারতে আনা হয়েছিল এবং ভারত সফরকালে তিনি আর অন্য কোন মঞ্চে অভিনয় করবেন না এরূপ শর্ত আরোপ করে তার সাথে চুক্তি করা হয়েছিল। আদালতের মতে এ চুক্তিটি বাতিল।
এই ধরণের চুক্তি বাতিল হবার কারণ হলো- ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করা প্রত্যেকেরই অধিকার রয়েছে। চুক্তির মাধ্যমে এ অধিকার বাধা প্রদান করার উদ্দেশ্যে হচ্ছে ব্যবসায়ে প্রতিযোগিতা রোধ করা এবং একচেটিয়া ব্যবসায় পরিচালনা করে অধিক মুনাফা অর্জন করা। ইহা ব্যক্তি স্বাধীনতাও খর্ব করে এবং সামাজিক স্বার্থেরও পরিপন্থী। তাই এ ধরণের প্রতিবন্ধকতাকে আইনে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
এই প্রকার নিরোধের সীমারেখা নিম্নরুপঃ
ব্যবসায় সুনাম (Goodwill)
কোন ব্যবসায়ের সুনাম যদি বিক্রি করা হয়, তবে সুনাম বিক্রেতা ক্রেতার সাথে এই মর্মে চুক্তি করতে পারেন যে, যতদিন ক্রেতা একটা নির্দিষ্ট এলাকায় উক্ত ব্যবসায় পরিচালনা করেন, ততদিন সুনাম বিক্রেতা ঐ এলাকায় একই ব্যবসায় পরিচালানা করা থেকে বিরত থাকবেন। অবশ্য এই সীমা যুক্তিসঙ্গত হতে হবে।
উদাহরণঃ
‘ক’ একটি নদীর নির্দিষ্ট ঘাটের খেয়া পারাপারের মাঝি। সে ‘খ’ এর নিকট তার এই ব্যবসায় বিক্রি করে এই শর্তে যে, সে আর ঐ ঘাটে নৌকা চালাবে না। এরুপ প্রতিবন্ধকতা বৈধ।
উপরোক্ত ক্ষেত্রে যদি এই মর্মে চুক্তি হয় যে, ‘ক’ আর কোন নদীতেই খেয়া পারাপারের ব্যবসা চালাবে না তবে এরূপ প্রতিবন্ধকতার সীমা যুক্তিসঙ্গত নয় হেতু তা বাতিল।
অংশীদার আইন (Partnership Act)
১৯৩২ সালের অংশীদার আইনের ১১(২) ধারায় এরুপ বিধান রয়েছে যে, অংশীদারগণ এই মর্মে চুুক্তি করতে পারেন যে, অংশীদারী ব্যবসায় ব্যতীত অন্য কোন ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারবে না। ৩৬(২) ধারানুসারে, কোন বিদায়ী অংশীদারদের সাথে বর্তমান অংশীদারগণও এরুপ চুক্তি করতে পারেন। ৫৪ ধারায় এরুপ বিধান রয়েছে যে, অংশীদারী ব্যবসায় বিলোপের পর অংশীদারগণ বা তাদের কেউ কেউ কোন নির্দিষ্ট এলাকায় বা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফার্মের অনুরুপ কোন ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারবেন না। চুক্তি আইনের ২৭ ধারার বিধানকে এখানে উপেক্ষা করা হয়েছে।
উপরোক্ত সংবিধিবদ্ধ ব্যতিক্রম ছাড়াও আদালত কর্তৃক নিম্নোক্ত ব্যতিক্রম গ্রহণযোগ্য হয়েছেঃ
চাকুরি চুক্তিতে নিরোধক (Restraint upon employees)
কোন কর্মচারীর সাথে নিয়োগকর্তা এই মর্মে চুক্তি করতে পারেন যে, চাকুরিকালীন সময়ে সেই কর্মচারী অন্যত্র চাকুরি করতে পারবেন না। অবশ্য সুনির্ষ্টি প্রতিকার আইনের বিধান অনুসারে কোন ব্যক্তিকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে চাকুরি অব্যহত রাখতে বাধ্য করা যাবে না, কিন্তু অন্যত্র চাকুরি করতে পারবে না এরুপ ’না’ সূচক শর্ত বৈধ। কাজেই নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত চাকুরি করার চুক্তি করলেও সেই কর্মচারী চাকুরি ছেড়ে দিতে চাইলে তাকে আটকানো যাবে না বটে তবে অন্যত্র চাকুরি করা হতে বিরত রাখা যাবে।
উদাহরণঃ
ভারতীয় সুপ্রীম কোর্ট Niranjan Shankar Golikari Vs. The Century Spinning And Mfg. Co. [AIR (1967) SCR 1098] এই মর্মে অভিমত ব্যক্ত করেন যে, কোম্পানীর অধীনে কর্মরত একজন কর্মচারীকে ৫ বছরের জন্য এই শর্তে নিয়োগ করে যে, ইতিমধ্যে কাজ ছেড়ে দিলে অন্যত্র কোন কাজ করতে পারবে না। এরূপ শর্ত বৈধ।
ট্রেড কম্বিনেশ (Trade combination)
কতিপয় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যবসায়ের উন্নতিকল্পে একত্রিত হয়ে এই মর্মে চুক্তি করতে পারে যে, তাদের মধ্যে অহেতুক প্রতিযোগীতা পরিহার করে বাজারে পণ্য সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করে এবং মুনাফা সাধারণভাবে বন্টন করবে। একে সাধারণভাবে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট বলে। এগুলি জননীতির পরিপন্থীও নয় এবং ব্যবসায় নিরোধক নয়। তাই এরুপ চুক্তি বাতিল নয়।
উদাহরণঃ
Fraser & Co. vs Bombay Ice Co. [(1906)29 Bom. 107] মামলায় আদালতে ধার্য হয়ে যে, কয়েকটি বরফ প্রস্তুত কারক একটি নির্দিষ্ট মূল্যের কমে বরফ বিক্রি করবেন না এই মর্মে তাদের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি বৈধ। তবে েএই জোট যদি জনস্বার্থ বিরোধী হয় তবে তা বৈধ হবে না।
সলুস এগ্রিমেন্ট (Solus agreement)
কখনো কখনো কোন পণ্যের প্রস্তুতকারক বা বিক্রেতা এই মর্মে চুক্তি করতে পারে যে, তাদের সকল পণ্য একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রয় করবে, অন্য কারো কাছে নয়। এ ধরণের এগ্রিমেন্টকে Solus agreement বলে। এতে একচেটিয়া ও অযৌক্তিক মুনাফা না থাকলে তা বাতিল নয়।
COMMENTS