অবহেলা হলো এক ধরণের ব্যক্তিগত আঘাতের মামলা। যখন কেউ অযত্নে কাজ করে এবং তার অযত্ন অন্যের ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়, এমতাবস্থায় টর্ট আইনের অধীনে অ...
অবহেলা হলো এক ধরণের ব্যক্তিগত আঘাতের মামলা। যখন কেউ অযত্নে কাজ করে এবং তার অযত্ন অন্যের ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়, এমতাবস্থায় টর্ট আইনের অধীনে অসতর্ক ব্যক্তি উদ্ভূত ক্ষতির জন্য দায়বদ্ধ হতে পারে। তবে, সেটার জন্য কিছু উপাদান রয়েছে।
নিম্নে, বাদীকে অবহেলার মামলায় কৃতকার্য হতে হলে কি কি ঘটনা অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে তা পূর্ণাঙ্গ আলোচনা করা হলো।
How to win a negligence case?
অবহেলা মামলা কিভাবে জিতবেন?
সাধারণ অর্থে অবহেলা (Negligence) বলতে যা বুঝা যায়, আইনগত অর্থে তা হতে কিছুটা ভিন্নতর বুঝায়। অমনোযোগীতা, অসাবধানতা, অযত্ন, বেপরোয়াভাব ইত্যাদি আপাতঃ দৃষ্টিতে অবহেলার সমার্থক প্রতীয়মান হয়। আইনী ভাষায় বলতে গেলে, অবহেলা হলো কোন পরিস্থিতিতে যুক্তিসঙ্গত যত্ন নেয়ার ব্যর্থতা।
অসাবধানতা দূষণীয় নয়। কিন্তু সাবধানতা অবলম্বন করা যখন আইনগত কর্তব্য তখন অসাবধানতা নিঃসন্দেহে সেই কর্তব্য লঙ্ঘন দূষণীয়। অতএব বিবাদী কর্তৃক বাদীর প্রতি যে পরিমাণ যত্ন নেয়া কর্তব্য তার অভাবকে অবহেলা বলা হয়। ব্লাইথ বনাম বার্মিংহাম ওয়াটার ওয়ার্কস কোং মামলায় এ্যালডারসন অবহেলায় যে সংজ্ঞা দিয়েছেন তা প্রায়ই উল্লেখ করা হয়। তার মতে, সাধারণতঃ যে সকল কার্যাবলী মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রিত করে, সেগুলির দ্বারা পরিচালিত হয়ে একটা স্বাভাবিক বিবেকসম্পন্ন মানুষ যা করে তা করা হতে বিরত থাকা অথবা যা করা হতে বিরত থাকে সে কাজ করাকে অবহেলা বলে।
উইনফিল্ড একটা সহজ সংজ্ঞা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যে সাবধানতা অবলম্বন আইনগত কর্তব্য, তা লঙ্ঘনের ফলে বিবাদীর ক্ষতি সাধিত হলে টর্ট হিসেবে ‘অবহেলা’ চিহ্নিত হবে। অতএব অবহেলার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান হচ্ছেঃ
- দায়িত্ব (Duty);
- দায়িত্ব লঙ্ঘন (Breach of duty); ও
- ক্ষতি (Damages)।
সুতরাং অবহেলার অভিযোগে আনীত মামলায় অবহেলা প্রতিষ্ঠার জন্য, বাদীকে অবশ্যই তিনটি “উপাদান” প্রমাণ করতে সক্ষম হতে হবে।
দায়িত্ব
সংজ্ঞা হতেই বুঝা যায় যে, অবহেলা হচ্ছে একটা যত্নের অভাব, যে যত্ন কোন বিশেষ লোকের প্রতি নেয়া আবশ্যকীয়। অতএব সেই বিশেষ লোকের প্রতি যত্ন নেয়ার কোন আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকলে অবহেলার প্রশ্নই উঠে না। কোন কোন ক্ষেত্রে এরুপ বাধ্যবাধকতা আছে তা সহজে নির্ণয় করা যায় না।
একটা মোটর গাড়ী চালক যখন গাড়ীর হর্ণ, ব্রেক ইত্যাদি যথাযথ কার্যক্ষম কিনা তা যাচাই করা এবং সাবধানে গাড়ী চালনা করা তার কর্তব্য যেনো অন্যান্য পথচারীদের কোন ক্ষতি না হয়। আবার গ্রামে বা ফাঁকা রাস্তায় যতটুকু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, শহরে বা জনবহুল রাস্তায় তার চেয়ে অধিক মাত্রায় সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। কিন্তু একটি স্বাভাবিক সক্ষম ব্যক্তির চেয়ে অক্ষম, বধির, শিশু ও বৃদ্ধ লোকের প্রতি এরুপ সাবধানতার মাত্রা আরো তীব্র।
কোন ক্ষেত্রে কতটুকু সাবধনতা অবলম্বন করতে হবে তার জন্য অ্যাটকিন টেষ্ট (Atkin's Test) প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। ডোনাগ বনাম ষ্টিভেনসন মামলায় লর্ড অ্যাটকিন বলেছেন যে, কারো প্রতিবেশীর ক্ষতি করা চলবে না। তারপর প্রতিবেশীর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন যে, কোন কাজের ফলে যার ক্ষতি হবার আশাঙ্কা রয়েছে সে ব্যক্তিই উক্ত কাজ সম্পাদনকারীর প্রতিবেশী। কাজেই এই টেষ্টকে ‘প্রতিবেশী নীতি’ (Neighbour principle) বলা হয়।
এই ‘প্রতিবেশী নীতি’ ও দূরদৃষ্টি’ টেষ্ট দ্বারা সাবধানতার ক্ষেত্র অনেক দিন যাবৎ নির্ণিত হয়ে আসছে। তবুও এর অস্পষ্টতার জন্য অনেকেেই এর সমালোচনা করেছেন।
‘দূরদৃষ্টি’ টেষ্ট অবশ্য প্রয়োগ করা যায় যেক্ষেত্রে সম্ভাবনা খুব বেশি। ফারডন বনাম হারকাউট রিভিংটন মামলায় বিজ্ঞ বিচারকগণ বলেছেন যে, জনগণ যুক্তিযুক্ত সম্ভবনার জন্য সাবধানতা অবলম্বন করবে কিন্তু কাল্পনিক সম্ভাবনার জন্য সাবধানতা অবলম্বন করতে বাধ্য নয়। আবার এ সাবধানতা অবলম্বনের দায়িত্ব শুধু বাদীর প্রতি রয়েছে, অন্য কারো প্রতি নয়। হে বনাম ইয়াং মামলায় লর্ডস সভা মন্তব্য করেন যে, সাবধানতার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে যারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে অনুমান করা যায় শুধু তাদের প্রতিই এ দায়িত্ব রয়েছে। আবার স্বাভাবিক বিবেক সম্পন্ন ব্যক্তি কোন ক্ষেত্রে কিরূপ সাবধানতা অবলম্বন করবে তা নির্ভর করবে সামগ্রিক পরিস্থিতির উপর। যদিও মান সমান, তবুও সাবধানতা অবলম্বনের মাত্রা বিভিন্ন হতে পারে। কেউ বন্দুক নিয়ে চলাফেরার সময় যতটুকু সাবধানতা অবলম্বন করবে, শুধু একটিা লাঠি নিয়ে চলাফেরার সময় ঐ পরিমাণ সাবধানতার অবলম্বনের প্রয়োজন নেই। যদিও উভয় ক্ষেত্রে দায়িত্বের মান সমান।
নর্থ ওয়েষ্টার্ন ইউটিলিটিজ লিমিটেড বনাম গ্যারিন্টি এন্ড এ্যাকসিডেন্ট কোং মামলায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, সাবধানতা অবলম্বনের মাপকাঠি নির্ভর করে কাজটি কিরূপ ঝুঁকিপূর্ণ তার উপর; অর্থাৎ কাজ যত ঝুঁকিপূর্ণ হবে, সাবধানতা অবলম্বনের মাত্রা তত বেড়ে যাবে।
দায়িত্ব লঙ্ঘন
দায়িত্ব লঙ্ঘনের বিষয়টি ঘটনার ব্যাপার। তাই সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে নির্ণয় করতে হবে বিবাদী সাবধাণতার কর্তব্য ভঙ্গ করেছে কিনা। অবহেলার মামলায় প্রমাণের দায়িত্ব সম্পূর্ণরুপে বাদীর। বিবাদী যে শুধু অসতর্ক ছিল তা নয়, তার অসতর্কতার ফলে বাদীর ক্ষতি হয়েছে এটাও বাদীকে প্রমাণ করতে হবে। অবশ্য ব্যক্ত বা অব্যক্ত চুক্তির ফলে যে ক্ষেত্রে বিবাদীর যত্ন নেয়া বা সাবধানতা অবলম্বনের দায়িত্ব, সে ক্ষেত্রে বিবাদীকেই প্রমাণ করতে হবে যে, সে অসতর্ক ছিল না।
উদ্ভূত ক্ষতির
অবহেলার তৃতীয় উপাদান হচ্ছে বিবাদীর অসাবধানতার ফলে বাদীর ক্ষতি, যা বিবাদীর কার্য হতে সরাসরি উদ্ভূত অতি দূরবর্তী নয়।
COMMENTS