সরকারের আয়ের প্রধান উৎস হলো রাজস্ব (Tax)। তবে, কর ফাঁকি ও অর্থ পাচার বাংলাদেশে নতুন কোন ইস্যূ নয়; বরং বছরে প্রায় দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাং...
সরকারের আয়ের প্রধান উৎস হলো রাজস্ব (Tax)। তবে, কর ফাঁকি ও অর্থ পাচার বাংলাদেশে নতুন কোন ইস্যূ নয়; বরং বছরে প্রায় দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশ হতে বিদেশে পাচার হয়ে থাকে। ফলশ্রুতিতে, বাংলাদেশের রাজস্ব খাতসহ সামাজিক অঙ্গনে এর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।
নিম্নে কর ফাঁকি ও কালো অর্থের বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
The adverse impacts of tax evasion and black money
কর ফাঁকি ও কালো টাকার ক্ষতিকর প্রভাব
আইনকে ফাঁকি দেয়ার উদ্দেশ্যে মিথ্যা বা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে কর এড়িয়ে যাওয়া বা কম কর প্রদান করাকে কর ফাঁকি (Tax evasion) বলে। একদিকে, এটা নৈতিক অপরাধ। অন্যদিকে, আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর বিধান অনুযায়ী একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
পক্ষান্তরে, কালো টাকার কোন সরকারী সংজ্ঞা নেই। ফলে, সাধারণ মানুষের কাছে কালো টাকা (Black money) বা ছায়া অর্থনীতি (Shadow economy) শব্দটি সর্বদা অস্পষ্ট। তবে, আইনে Black money বা কালো টাকার অর্থ হলো- অপ্রদর্শিত আয় (Undisclosed money)। সহজভাবে বলতে গেলে, যে আয়ের কর প্রদান করা হয় না। এছাড়া, কালো টাকার আয় দু’ভাবে হতে পারে। যথাঃ
- বৈধ পন্থায় প্রাপ্ত আয় যা করযোগ্য, কিন্তু কর প্রদেয় বা কর্তৃপক্ষের কাছে সম্পদ রিপোর্ট না করাকে বেছে নেয়া হলে, তাকে বৈধভাবে উপার্জিত কালো টাকা বলা হবে।
- বিশ্ব ব্যাংকের তথ্যমতে, অবৈধভাবে উপার্জিত কালো টাকার উৎস হলো- মাদক ব্যবসা, দুর্নীতি, ঘুষ, অবৈধ ব্যবসা ইত্যাদি।
কর ফাঁকি ও কালো টাকার উদ্দেশ্য একই অর্থাৎ কর না দেয়া কিংবা কম দেয়া। কর ফাঁকি ও কালো টাকার ক্ষতিকর প্রভাব নিম্নরুপঃ
সরকারের রাজস্ব হ্রাস
কর ফাঁকি ও কালো টাকার কারণে বাংলাদেশ সরকার প্রতি বছর একটি মোটা অংকের রাজস্ব হতে বঞ্চিত হয়। ফলশ্রুতিতে, দেশ উন্নতির অগ্রগতি হতে ব্যহত হয়। কারণ একটি দেশের সরকারের আয়ের প্রধান উৎস হলো রাজস্ব।
জাতীয় আয় এবং মাথাপিছু আয়ের উপর প্রভাব
কর ফাঁকি ও কালো টাকার মাধ্যমে জনগণ তাদের আয়কে কম প্রকাশ করে। ফলে, সরকারের জাতীয় আয়ের পরিমাণও কম হয়। পক্ষান্তরে, যদি জনগণ কর ফাঁকি ও কালো টাকার অর্থ পাচার না করে দেশে ট্যাক্স প্রদান করতো তাহলে এটি জাতীয় আয় ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করতো এবং সমগ্র জাতীর জীবন মান উন্নত হতো।
জনসাধারণের পণ্য ও পরিষেবার মান হ্রাস
জনসাধারণের পণ্য ও পরিষেবার মান হ্রাসের সহিত কর ফাঁকি ও কালো টাকার সম্পৃক্ততা রয়েছে। কারণ যারা ঘুষ দিতে পারবে তারা সাধারণ জনগণের তুলনায় মানসম্মত পণ্য ও পরিষেবা পাবে। ফলে, জনসাধারণকে দুর্ভোগের শিকার হতে হবে। যেমন, ভাল চাকুরি, সরকারী অফিসে কোন কাজ করিয়ে নেওয়া ইত্যাদি।
উচ্চতর কর এবং মূল্যস্ফীতি
শুল্কের পিছনে মূল কারণ হলো ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট তৈরির জন্য সরকার যে ব্যয় করেছে তার জন্য রাজস্ব আয় করা। সুতরাং এটাই সুস্পষ্ট যে, জনগণ সরকারের কাছ থেকে যে পরিমাণ কালো টাকা লুকিয়ে রেখেছে তা যদি সরকারের বাজেটের অন্তর্ভুক্ত হয় তবে করের হার হ্রাস পাবে। একইভাবে, দাম বাড়ানো বাজারের কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের জন্য প্রচুর পরিমাণে অর্থ সঞ্চয়ের ফলাফল।
আর্থিক নীতি গঠনে অসুবিধা
কালো টাকা লুক্কায়িত (Hidden) থাকার ফলে সরকার আর্থিক নীতিমালা‘তৈরীকালীন সঠিক জাতীয় আয় গণনা করতে ব্যর্থ হয়।
সমাজে অপরাধ প্রবণতার বৃদ্ধি
অবৈধভাবে উপার্জিত বা কালো টাকা সাধারণত সমাজে বিভিন্ন অবৈধ ক্রিয়াকলাপের জন্ম দেয় এবং দুর্নীতি তাদের মধ্যে অন্যতম। নির্বাচনের সময়ও কালো অর্থের অবৈধ ব্যবহার দেখা যায়। বিভিন্ন সন্ত্রাসী ক্রিয়াকলাপে কালো টাকার মজুতদারগণ রসদ যোগায় যা পুরো দেশের জন্য ক্ষতিকারক।
এছাড়া কালো টাকার সহয়তায় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ড্রাগস কারবার করা হয়ে থাকে যা যুব সমাজকে নানা ধরণের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের প্রতি ঠেলে দেয়।
COMMENTS