একটি রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে বিচার বিভাগ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আইন পরিষদ ছাড়াও রাষ্ট্র চলতে পারে। কিন্তু বিচার ব্যবস্থা ছাড়া কোন সভ্য সমাজ...
একটি রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে বিচার বিভাগ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আইন পরিষদ ছাড়াও রাষ্ট্র চলতে পারে। কিন্তু বিচার ব্যবস্থা ছাড়া কোন সভ্য সমাজের কল্পনা করা যায় না। তাই দেশে আইনের শাসন তথা গণতন্ত্রের উত্তরণ ও সংরক্ষণের জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতার গুরুত্ব অপরিসীম।
নিম্নে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
Is the judiciary of Bangladesh independent?
বাংলাদেশের বিচার বিভাগ কি স্বাধীন?
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে আইনের আওতাধীন থেকে সম্পূর্ণ নির্ভয়ে আইন পরিষদ নির্বাহী বিভাগসহ সকলের প্রভাবমুক্ত থেকে বিচারকগণ যদি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে বিচারকার্য সম্পন্ন করতে পারেন সেরুপ পরিবেশ নিশ্চিত করা বুঝায়।
এই মূলনীতির বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মূল সংবিধানের ১১৫ ও ১১৬ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী সুপ্রীম কোর্টের সুপারিশ ক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বিচার কাজের জন্য ম্যাজিষ্ট্রেট ও জেলা জজদের নিয়োগের বিধান করা হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালের চতুর্থ সংশোধনীর পর এই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বিচার বিভাগীয় পদে বা বিচার বিভাগীয় ম্যাজিষ্ট্রেট পদে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক উক্ত উদ্দেশ্যে প্রণীত বিধিসমূহ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নিয়োগদান করবেন।”
মূল সংবিধানের ১১৬ ধারায় বিচার কাজে নিয়োজিত ম্যাজিষ্ট্রেট ও অন্যান্য ব্যক্তিদের কর্মস্থল নির্ধারণ বা বদলী, পদোন্নতি, ছুটি ও শৃঙ্খলাবিধানের দায়িত্ব ছিল সুপ্রীম কোর্টের উপর। কিন্তু ১৯৭৫ এর সংশোধনীর পর এই দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয় রাষ্ট্রপতির উপর। তবেএই সময় ১১৬(ক) অনুচ্ছেদ সন্নিবেশিত করা হয় সেখানে বলা হয়েছে যে, এই সংবিধানের বিধানবলী সাপেক্ষে বিচারকাজে নিযুক্ত ব্যক্তিগণ এবং ম্যাজিষ্ট্রেটগণ বিচারকাজ পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবেন।
এছাড়া সংবিধানের ৯৪(৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, এই সংবিধানের বিধানবলী সাপেক্ষে প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারকগণ বিচারকার্য পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবেন।
কাজেই বিচারকের স্বাধীনতা সম্পর্কে সাংবিধানিক নিশ্চয়তা রয়েছে। কিন্তু এই স্বাধীনতা যথার্থ ও অর্থবহ করতে হলে ক্ষমতার পৃথকীকরণ প্রয়োজন। সেটা এখনো বাংলাদেশে প্রকৃত অর্থে অবর্তমান। বিচারকগণ ও ম্যাজিষ্ট্রেটগণ এখনো রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হন এবং তাঁদের পদোন্নতি, বদলী, পেনশন ইত্যাদি শাসনবিভাগ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। কেবল নির্বাহী বিভাগ হতে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ যথেষ্ট নয়। কেণনা, একক বিষয়ের উপর এই স্বাধীনতা নির্ভর করে না।
তবে বিচারকগণ ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ভোগ করে থাকেন। বিচারকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে বিচারকের কোন কাজের জন্য দেওয়ানী বা ফৌজদারী মামলা করা যাবে না এবং এতদসংক্রান্ত কাজের জন্য কোন বিচারকের আচরণ সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না। এছাড়া আদালত অবমাননার জন্য সুপ্রীম কোর্টকে পর্যাপ্ত ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
COMMENTS