সাধারণ অর্থে, Dispute বা বিরোধ বলতে দুই বা ততোধিক পক্ষের মধ্যে উপলব্ধি, মানসিকতা এবং চাহিদা নিয়ে পারস্পারিক দ্বন্দকে বুঝায়। অনুরুপভাবে, শ্রম...
সাধারণ অর্থে, Dispute বা বিরোধ বলতে দুই বা ততোধিক পক্ষের মধ্যে উপলব্ধি, মানসিকতা এবং চাহিদা নিয়ে পারস্পারিক দ্বন্দকে বুঝায়। অনুরুপভাবে, শ্রমিক বা নিয়োগকর্তার মধ্যে মতামত বা চাহিদার অমিল বা অন্য কোন পার্থক্য দেখা দিলে শ্রম আইনে তাকে শিল্প বিরোধ বলা হয়। তাছাড়া, পক্ষগুলির মধ্যে শিল্প বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য শ্রম আইনে নির্ধারিত কতিপয় পন্থা রয়েছে।
নিম্নে শিল্প বিরোধ ও নিষ্পত্তির পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
Industrial dispute and settlement process
শিল্প বিরোধ ও নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া
Industrial dispute বা শিল্প বিরোধকে কোন ব্যক্তির চাকুরির নিয়োগ সংক্রান্ত বা চাকুরির শর্তাবলী বা কাজের অবস্থা বা পরিবেশ (Environment) সম্পর্কিত কোন বিষয়ে মালিক এবং মালিক, মালিক এবং শ্রমিক বা শ্রমিক এবং শ্রমিকের মধ্যে মতামতের পার্থক্য হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। চাকুরি থাকা বা না থাকা, চাকুরির শর্ত এবং কোন ব্যক্তির কাজের শর্ত এই তিন বিষয়ের সহিত সংশ্লিষ্ট বিরোধ শিল্প বিরোধের অন্তর্ভূক্ত।এছাড়া ব্যক্তিগত বিরোধও শিল্প বিরোধ হিসেবে গণ্য হতে পারে যদি তা সে ব্যক্তির চাকুরি সংক্রান্ত হয়ে থাকে। আরোও উল্লেখ্য যে, শ্রম আইন, ২০০৬ ধারা ২১০ অনুসারে শিল্প বিরোধ কেবল মালিক (Employer) এবং যৌথ দর-কষাকষি প্রতিনিধি (Collective Bargaining Agent) উত্থাপন করতে পারেন।
শ্রম আদালত কর্তৃক সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে শিল্প বিরোধগুলি রোধ ও নিষ্পত্তি করার জন্য শ্রম আইন, ২০০৬ এর ২১০ ও ২১১ ধারায় বিধান রয়েছে। এ সকল বিধান অনুসারে শিল্প বিরোধ নিষ্পত্তির স্তরগুলি নিম্নরুপঃ
- সংলাপ (Dialogue);
- সালিশ (Conciliation); এবং
- মধ্যস্থতা (Arbitration)।
সংলাপ (Dialogue)
২১০ ধারায় বিধান রয়েছে যে, মালিক কিংবা যৌথ দর-কষাকষি প্রতিনিধি যদি বুঝতে পারেন যে, মালিক এবং কোন শ্রমিকের মধ্যে শিল্প বিরোধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, তবে অবস্থানুসারে মালিক বা যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিজের মতামত লিখিতভাবে অপর পক্ষকে জানাবেন।
এ মতামত পাবার ১৫ দিনের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌছাবার উদ্দেশ্যে পক্ষগণের বা তাদের প্রতিনিধিগণের মধ্যে একটা বৈঠকের ব্যবস্থা করতে হবে।
আপোষ-মীমাংসা সম্ভব হলে মীমাংসার বিবরণ লিখে উভয় পক্ষের স্বাক্ষর নিতে হবে। এর অনুলিপি সালিশ পরিচালক ও সরকারের নিকট পাঠাতে হবে।
সালিশ (Conciliation)
শ্রম আইন, ২০০৬ এর ২১০(৫) উপধারার বিধান অনুসারে সরকারী গেজেটে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সরকার সালিশ হিসেবে কাজ করার জন্য বিবেচনামত লোক (Conciliator) নিয়োগ করবেন এবং তাদের এখতিয়ারভূক্ত প্রতিষ্ঠান বা শিল্প ও আঞ্চলিক সীমানা নির্ধারণ করে দিবেন।
আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসায় পৌছতে ব্যর্থ হলে তাদের যে কেউ সালিশের কাছে সে মর্মে রিপোর্ট করতে পারেন এবং বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সালিশী করার জন্য ১৫ দিনের মধ্যে তাকে অনুরোধ জানাতে পারেন। এরুপ অনুরোধ প্রাপ্তির পর ১০ দিনের মধ্যে সালিশ বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কাজ শুরু করবেন। [২১০(ছ)]
এভাবে নিষ্পত্তি হলে সালিশ এ সম্পর্কে সরকারের নিকট একটি রিপোর্ট পেশ করবেন এবং তার সাথে উভয় পক্ষ কর্তৃক স্বাক্ষরিত নিষ্পত্তিনামার একটি কপি দিবেন।
মধ্যস্থতা (Arbitration)
সালিশ কর্তৃক অনুরোধ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে যদি বিরোধটি নিষ্পত্তি না হয় তাহলে সালিশী কার্যক্রম ব্যর্থ হয়েছে বলে গণ্য হবে।
অতঃপর সালিশ উভয় পক্ষকে বিরোধটি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে কোন মধ্যস্থতাকারীর (Arbitrator) নিকট পাঠাতে প্রস্তাব দিবেন। এতদ্দুশ্যে সরকার একটা মধ্যস্থতাকারীর তালিকা প্রস্তুত করবেন।
পক্ষগণ রাজী হলে উক্ত তালিকা হতে তাদের নিকট গ্রহণযোগ্য মধ্যস্থতাকারীর (Arbitrator) নিকট যৌথ অনুরোধ পত্র পাঠাবেন। অনুরোধ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে অথবা পক্ষগণ কর্তৃক লিখিতভাবে স্বীকৃত কোন বর্ধিত সময়ের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী তার রোয়েদাদ (Award) প্রদান করবেন। এই রোয়েদাদ চুড়ান্ত হিসেবে গণ্য হবে এবং ২ বছর পর্যন্ত বহাল থাকবে। এর বিরুদ্ধে কোন আপীল (Appeal) চলবে না।
সর্বোপরি, ব্যয়, সময়সীমা, কার্যকারিতা, বিরোধ ও বিচার বিভাগের সমাধানের মতো সমস্ত সুবিধা মূল্যায়নের পরে এ কথা বলা যায় যে, পক্ষগুলির মধ্যে শিল্প বিরোধ দেখা দিলে শ্রম আদালত কর্তৃক সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে শিল্প বিরোধগুলি রোধ ও নিষ্পত্তি করার জন্য শ্রেষ্ঠতর উপায় হলো সংলাপের মধ্যে পারস্পারিক সমঝোতা।
COMMENTS