যখন কোন দেশের সমাজের মানুষের নিকট গ্রহণযোগ্য ও চিন্তাশীল মানুষের অভাব দেখা দেয়, তখন সেই দেশের নির্বাচিত শাসকেরা একনায়ক সূলভ ও বাহুবলের দাপট ...
যখন কোন দেশের সমাজের মানুষের নিকট গ্রহণযোগ্য ও চিন্তাশীল মানুষের অভাব দেখা দেয়, তখন সেই দেশের নির্বাচিত শাসকেরা একনায়ক সূলভ ও বাহুবলের দাপট নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে, সে দেশে আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটতে থাকে এবং ঠিক তখনই সামরিক শাসনের উত্থান হয়। উদাহরণস্বরুপ, হিটলার মসোলিনি, বাংলাদেশে জিয়া ও এরশাদ।
ঔপনিবেশিক এশিয়া এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে হঠাৎ করে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক শাসন চলে আসে। ব্যতিক্রম কেবল ভারত। সম্প্রতি মিয়ানমারে নির্বাচনের সুষ্ঠতা ইস্যূতে সরকার-সেনার দ্বন্দ্বের জেরে সামরিক শাসনের অভ্যুত্থান (Coup) হয়। নিম্নে সামরিক আইন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
What is Martial law?
সামরিক আইন বা মার্শাল ল’ কি?
সামরিক আইন বলতে দেশের সাধারণ ও সাংবিধানিক আইন সাময়িকভাবে বন্ধ রেখে সামরিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সরকার পরিচালনা করা এবং সামরিক কর্তৃকপক্ষের আদেশ বাধ্যতামূলকভাবে নাগরিকের উপর প্রয়োগ করা। অর্থাৎ সামরিক আইন বলতে পুলিশ বাহিনী, দমকল বাহিনী, বা অন্যান্য বেসামরিক সরকার কর্তৃক জারীকৃত কোন আইন নয়; বরং সেনাবাহিনী কর্তৃক জারীকৃত আইনকে বুঝায়। এছাড়া মার্শাল ল’ এর শাসনকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন স্বয়ং সেনাবাহিনী প্রধান।
দেশের চরম সন্ধিক্ষণে এবং বেসামরিক সরকারের ব্যর্থতার কারণে সামরিক আইন জারি করা হয়। ইহা সম্পূর্ণ সাময়িক ব্যবস্থা। সামরিক আইন কোন সংহিতা বা আইনের সারগ্রন্থ কিংবা আইনের কোন বিধি নয়; বরং সামরিক কর্তৃপক্ষের ঘোষিত কিছু নির্দেশ বা নির্দেশাবলী যা সৈনিক ও সাধারণ নাগরিক উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সামরিক আইন জারীর পর কর্তৃপক্ষের নির্দেশ বা বিধি লংঘনের জন্য নাগরিককে সামরিক আদালতে সৌপর্দ করা হয়।
সামরিক আইন জারীর ফলে দেশের সংবিধান সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয় বা বাতিল করা হয়।প্রকৃতপক্ষে, একটি দেশ বা অঞ্চল নির্বাচিত ব্যক্তি বা সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তবে, সামরিক আইন জারী হলে সেই দেশের নির্বাচিত প্রধিনিধিগণ ক্ষমতাচ্যূত হয়ে থাকেন। এমনকি সামরিক আইন জারী হলে নাগরিক স্বাধীনতা যেমন- অবাধ চলাফেরার অধিকার, বাক-স্বাধীনতা, বা অযৌক্তিক অনুসন্ধান থেকে সুরক্ষা স্থগিত করা হতে পারে।
এছাড়া, সামরিক শাসনের ফলে, নাগরিকদের মৌলিক অধিকার খর্ব না হলেও গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুন্ন হতে পারে।
দৃশ্যতঃ সামরিক আইন ও সেনা আইন (Military law) এক ও অভিন্ন মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে সেনা আইন স্বতন্ত্র। কেণনা, সেনা আইনের মধ্যে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ বিদ্যমানঃ
- সেনা আইন বলতে সৈনিক আদালত এখতিয়ারাধীন স্থল, নৌ, ও বিমান বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত সশস্ত্র বাহিনীর আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রচলিত আইনকে বুঝায়।
- সেনা আইন সৈনিকদের মধ্যে শৃঙ্খলা রক্ষার নিমিত্তে অবশ্য পালনীয় সৈনিক বিধি যা লংঘন করলে সুশৃঙ্খল সৈনিক আদালতে বিচার করা হয়।
- সেনা আইন কোন বিশেষ সময় কালের জন্য জারী করা হয় না। যুদ্ধকালীন অবস্থা বা শান্তিকালীন অবস্থা বা শান্তিকালীন অবস্থায় সৈনিকগণ সেনা আইন দ্বারা পরিচালিত হয়।
- সেনা আইন কেবল সৈনিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
- সেনা আইন কখনো অকার্যকর হয়ে পড়ে না। কারণ, এটা হলো পরিপূর্ণ আইনের সারগ্রন্থ এবং সামরিক আইন এর স্থলাভিষিক্ত হতে পারে না।
- সৈনিকগণ তাদের কৃত অপরাধের জন্য সামরিক আইন জারীর পূর্বে বা পরে সকল সময়ে সৈনিকদের জন্য প্রণীত আইন মোতাবেক সৈনিক আদালতে বিচার করা হয়।
- সেনা আইনের ভিত্তি হচ্ছে আইনসভা বা পার্লামেন্ট।
COMMENTS