জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলা (পিআইএল) হলো এক ধরণের আইনী পদক্ষেপ যা বাংলাদেশসহ ভারত ও পাকিস্তানের আইনী ব্যবস্থায় সুপ্রতিষ্ঠিত। যেখানে কোন ভুল দ...
জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলা (পিআইএল) হলো এক ধরণের আইনী পদক্ষেপ যা বাংলাদেশসহ ভারত ও পাকিস্তানের আইনী ব্যবস্থায় সুপ্রতিষ্ঠিত। যেখানে কোন ভুল দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিরা নিজেরাই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সামর্থ্য রাখে না বা অন্য কারণে যাদের আইনী ব্যবস্থায় অ্যাক্সেস নেই তাদের স্বার্থ রক্ষার্থে আইনের ব্যবহার।
নিম্নে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
What is Public Interest Litigation?
জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলা কি?
জনস্বার্থ মামলা, নিজেই বলে যে, এটি যে কোন জনস্বার্থের জন্য আনীত মামলা। জনস্বার্থ মামলার সংজ্ঞা কোন আইনসভায় অনুমোদিত বিধিবদ্ধ আইন (Statute) বা কোন অ্যাক্টে প্রদান করা হয় নি; বরং জনসাধারণের অভিপ্রায় বিবেচনা করার জন্য বিচারক দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
এটি রীট আবেদনের মতো, যা সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদ মোতাবেক সংবিধানে প্রদত্ত মৌলিক অধিকারসমূহ রক্ষার্থে ১০২ অনুচ্ছেদ অনুসারে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করার একটি মৌলিক অধিকার।
জনস্বার্থ মামলার প্রয়োজনীয়তা
সংবিধানে স্বীকৃত মৌলিক অধিকারসমূহ সরকার, আধা-সরকারি সংস্থা বা ব্যক্তি সর্বদা মেনে চলে না সেই কারণে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলার প্রয়োজন। বিশেষভাবে, যখন শোষিত বা ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষকে সনাক্ত করা সম্ভব হয় না এবং তারা ব্যক্তি বিশেষ না হয়ে সংঘবদ্ধ জনগোষ্ঠী হয়। উদাহরণস্বরুপ, ধরুন, আপনার এলাকায় একটি কারখানা বা শিল্প ইউনিট বায়ূ দূষণ সৃষ্টি করছে এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকেরা উক্ত বায়ূ দূষণের শিকার। এ ক্ষেত্রে বায়ূ দূষণের শিকার স্বতন্ত্রভাবে ব্যক্তি নয়; বরং সমগ্র এলাকাবাসী।
বাংলাদেশ সংবিধানের ১০২(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে, কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদনক্রমে প্রজাতন্ত্রের বিষয়াবলীর সাথে সম্পর্কিত কোন দায়িত্বরত ব্যক্তিসহ যে কোন ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট উপযুক্ত নির্দেশ বা আদেশ দান করতে পারবেন।
মোখলেসুর রহমান বনাম বাংলাদেশ (২ বি. এল. সি. ২৮৬) এবং ড. মহিউদ্দিন ফারুক বনাম বাংলাদেশ (৫০ ডি. এল. আর ৮৪) মামলায় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির পরিধি বিস্তৃত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, জনস্বার্থের খাতিরে প্রশাসনিক কর্মকান্ডের বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা (Judicial review) করা যায়।
বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণ যেনো আইনের সহায়তা পায় তা নিশ্চিত করা এবং প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে দেশের আইনের পদ্ধতি ও নর্মস অনুসৃত হওয়া।
যিনি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলা দায়ের করতে পারেন
জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলার ধারণাটি ভারতে প্রথম ১৯৭৬ সালে বিচারপতি কৃঞ্চ আয়ার মুম্বাই কামগার বনাম মেসার্স আব্দুলভাই ফয়জুল্লাভাই এবং অন্যান্য মামলায় (এ. আই. আর সুপ্রীম কোর্ট ১৪৫৫) সূচনা করেন। জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির ধারণাটি সম্প্রসারিত করা হয়েছে এবং যে কোন ব্যক্তি মামলা দায়ের করতে পারে বলে আদালত অভিমত ব্যক্ত করেন।
তবে, জনস্বার্থ মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে লোকাস স্ট্যান্ডি থাকা অত্যাবশ্যক। যেমন, একটি রীট আবেদনে ‘বেলার’ (Bangladesh Environmental Lawyers Association) সাধারণ সম্পাদক ড. মহিউদ্দিন ফারুক বন্যা নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা-২০ এর কার্যক্রমে টাঙ্গাইল জেলায় যে পরিবেশগত বিরুপ প্রতিক্রিয়ায় ১০ লাখেরও বেশি লোক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সে বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগে প্রতিকারের আবেদন জানান ড. মহিউদ্দিন ফারুকের কোন লোকাস স্ট্যান্ডি নাই অর্থাৎ মামলা করার কোন অধিকার নাই, যেহেতু তিনি সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি নয় এই অজুহাতে হাইকোর্ট বিভাগ তার আবেদন সরাসরি খারিজ করে দেন। আপীল বিভাগ এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে রায় দেন যে, জনস্বার্থে তার মামলা করার অধিকার রয়েছে।
বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদ বনাম বাংলাদেশ [৪৩ ডি. এল. আর (এডি) ১২৬] সংবাদপত্র মালিক সমিতি ওয়েজ বোর্ডের এক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে সমিতির লোকাস স্ট্যান্ডি (Locus standi) বা মামলা করার অধিকার নেই বলে তা নাকচ করে দেন, জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট নয় বলেও সুপ্রীম কোর্ট অভিমত ব্যক্ত করেন। সংবাদপত্রের মালিকেরা নিজেরা মামলা দায়ের করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী কল্যাণ সমিতি বনাম বাংলাদেশ (৪৬ ডি. এল. আর ৪২৬) মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ সমিতির স্ট্যাডিং রয়েছে বলে অভিমত দেন। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে, অবসরপ্রাপ্ত প্রত্যেক সরকারী কর্মচারীদের অভিন্ন সমস্যা রয়েছে এবং তাই তাদের সমিতি হচ্ছে একজন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি যার লোকাস স্ট্যান্ডি (Locus standi) রয়েছে।
তাই বলা যায় যে, জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলা সংক্রান্ত আইনটি বাংলাদেশে এখনো পরিপক্কতা লাভ করে নি। বিভিন্ন গতিপথে পরীক্ষামূলকভাবে অগ্রসর হচ্ছে।
COMMENTS