ইসলামী ক্যালেন্ডারের ১২ মাসের মধ্যে ৪টি মাস তথা মহররম, রজব, জিলকদ, ও জিলহজ্বকে সম্মানিত মাস বলা হয়ে থাকে। অন্যদিকে, হযরত নবী করিম (সাঃ) স্বয়...
ইসলামী ক্যালেন্ডারের ১২ মাসের মধ্যে ৪টি মাস তথা মহররম, রজব, জিলকদ, ও জিলহজ্বকে সম্মানিত মাস বলা হয়ে থাকে। অন্যদিকে, হযরত নবী করিম (সাঃ) স্বয়ং শা’বান মাসকে তাঁর নিজের মাস হিসেবে হাদিছে উল্লেখ করেছেন। তবে, এই মহিমা মান্বিত মাসগুলিকে নিয়ে গড়ে উঠেছে মুসলমানদের মধ্যে নানা ধরণের সুন্নাহ বিরোধী কার্য-কলাপ, যা ঘৃনিত বিদয়াতের অন্তর্ভূক্ত।
নিম্নে আশুরা, ২৭ রজব ও শবে বরাত সম্পর্কিত বিদয়াত নিয়ে আলোচনা করা হলো।
Ashura, 27 Rajab and Shabebarat related bidayat
আশুরা, ২৭ রজব ও শবেবরাত সম্পর্কিত বিদয়াত
মক্কা থেকে হিজরতের পরে এবং রমদ্বানের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে হযরত নবী করিম (সাঃ) এবং ছাহাবাগণ মহররম মাসে রোজা রাখতেন কিন্তু রমদ্বানের রোজা ফরজের পর এই রোজার বাধ্যবাধকতা উঠে যায় অর্থাৎ নফলে পরিণত হয়।
তবে, পরবর্তীকালে আশুরার দিনটি শিয়া সম্প্রদায় জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। যেমন, বিশিষ্ট আইনবিদ Sayed Ameer Ali তার The Personal Law of the Mahommedans গ্রন্থে লিখেছেন-
“Muizuddowla also instituted the Yeum-i-ashura, the day of mourning, in commemoration of the martyrdom of Hussain and his family on the plains of Kerbala.” অর্থাৎ বুওয়াইহ ঘরানার মুঈজুদ্দৌলা ৩৩৪ হিজরী মোতাবেক ৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে বাগদাদে প্রাসাদের মেয়র হওয়ার পর সর্ব প্রথম কারবালার সমভূমিতে হুসেন (রাঃ) ও তাঁর পরিবারের শাহাদতের স্মরণে শোকের দিন “ইয়াওমে আশুরা”ও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
“আশরা এ-মহররম” নামে এই অনুষ্ঠানটি এখন শিয়া বিশ্ব জুড়ে পালিত হয়।
এছাড়া, মহররম, ২৭ রজব ও শবেবরাতকে কেন্দ্র করে এই জমানায় বিভিন্ন ধরণের বিদয়াতের সৃষ্টি হয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
- নফল নামাজের জামাত;
- মহররমে তাজিয়া ও মাতম; এবং
- শবেবরাতে হালুয়া-রুটি, ইত্যাদি।
নফল নামাজের জামাত
হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) তাঁর মাকতুবাতের ১ম খন্ডের ২৮৮ নম্বর মাকতুবাতে লিখেছেন-
“বর্তমান জমানার অধিকাংশ মানুষ নফল নামাজ পাঠ করার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়, কিন্তু ফরজ নামাজ সমূহের বিষয়ে অবহেলা করে। তারা ফরজ নামাজের মধ্যে সুন্নাত, মোস্তাহাব ইত্যাদির প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে না। পক্ষান্তরে, আশুরা বা ১০ই মহররমের নামাজ, শবেবরাত, ও ২৭ রজব ও রজবের প্রথম জুমা’রাত্র যাকে “লায়লাতুর রাগায়েব” বলে এর নামাজ অতি যত্ন ও পূর্ণ মনোযোগ সহকারে জামাতের সহিত আদায় করে থাকে এবং ইহাকে তারা অত্যন্ত পূণ্য ও উৎকৃষ্ট কার্য্য বলে ধারণা করে। তারা জানে না যে, ইহা শয়তানের প্রবঞ্চনা। শয়তান এই পাপকার্য্যকে তাদের সামনে উৎকৃষ্ট ও নেকি রূপে প্রদর্শন করে থাকে।”
অধিকন্তু, হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রহঃ) প্রাগুক্ত মাকতুবে শায়খুল ইসলাম মাওলানা এছামুদ্দীন হারাবী (রহঃ) কর্তৃক প্রণীত হানাফী মাযহাবের ফেকার কিতাব “শরহে বেকায়া” এর বরাত দিয়ে লিখেছেন-
“নফল নামাজ জামাতের সাথে পাঠ করা এবং ফরজ নামাজের জামাত তরক বা পরিত্যাগ করা শয়তানের ধোকা। কেণনা, নফল নামাজসমূহ জামাতের সাথে পাঠ করা ঐ নিন্দনীয় মাকরুহ (ঘৃনিত) বিদয়াতসমূহের অন্তর্ভূক্ত, যাকে হযরত নবী করিম (সাঃ) বলেছেন যে, “আমাদের দ্বীন ইসলামের মধ্যে যে ব্যক্তি নতুনত্ব সৃষ্টি করে, তা পরিত্যক্ত।” হাদিছটি উম্মুল মূমিনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) এর সনদে বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে।
তিনি (রহঃ) হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ যেমন, ফতওয়ায়ে সিরাজিয়া, ইমাম ছারাখছী (রহঃ) কর্তৃক প্রণীত ফতওয়ায়ে গিয়াছিয়া, খোলাছা, ফতুওয়ায়ে শাফীয়া ইত্যাদির উল্লেখপূর্বক বলেছেন যে, আশুরা, ২৭ রজব, শবেবরাত ইত্যাদি রাতে জনসমাগম করে নফল নামাজ আদায় করা ফকিহগণের (ইসলামী আইনজ্ঞ) সর্বসম্মতিক্রমে ঘৃনিত বিদয়াত।”
তিনি (রহঃ) এই মাকরুহ কাজের ভয়াবহতা সম্পর্কে বলেন যে, মাকরুহ কাজকে মুসতাহসান (ভাল) জানা কবিরা গোনাহ। কেণনা, হারাম কাজকে মোবাহ বা দোষ নাই এমন মনে করে করলে, তা কুফরীতে পরিণত হয়।
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, নামাজের মত এমন একটি এবাদাত যাকে জামে’ এবাদত (সমষ্টিভূত এবাদত) বলা হয়েছে, সেই এবাদাতটি যদি সুন্নাহ বহির্ভূত নিয়মে আদায়ের কারণে জঘন্য বিদয়াত হয়। তাহলে ছওয়াবের নিয়তে শবে বরাতে হালুয়া-রুটি, মহররমে তাজিয়া (শোক মিছিল), মাতম (বুক চাপড়ানো) কিংবা অনুরুপ সুন্নাহ বর্হিভূত কাজ নিঃসন্দেহে বিদয়াত, যা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই সবাইকে বলবো “Follow the sunnah not the society”।
COMMENTS