ইকুইটি (Equity) শব্দের অর্থ হচ্ছে ন্যায়পরতা বা পক্ষপাতহীনতা (Fairness)। এই আইনটির উৎপত্তি মূলতঃ ইংল্যান্ডের আদী আইন কমন ল’ কোর্টের বিচারকদের...
ইকুইটি (Equity) শব্দের অর্থ হচ্ছে ন্যায়পরতা বা পক্ষপাতহীনতা (Fairness)। এই আইনটির উৎপত্তি মূলতঃ ইংল্যান্ডের আদী আইন কমন ল’ কোর্টের বিচারকদের বিচারকাজের সীমাবদ্ধতা থেকে হয়েছিল।
নিম্নে বাংলাদেশের আদালতসমূহে ইকুইটি কিভাবে প্রয়োগ করা হয় তা সবিস্তারে আলোচনা করা হলো।
How is equity applied the courts of Bangladesh?
বাংলাদেশের আদালতসমূহে ন্যায়পরতা কিভাবে কার্যকর হয়?
ইংল্যান্ডে চ্যান্সেরী কোর্টের মত ইকুইটির জন্য বাংলাদেশে পূর্বেও কোন আদালত ছিল না বর্তমানেও নেই। যেক্ষেত্রে সুস্পষ্ট আইনের বিধান বা নীতি পরিলক্ষিত হয় না, সেক্ষেত্রে আদালতকে নিম্নোক্ত তিনটি মৌলনীতির উপর নির্ভর করে অগ্রসর হতে হয়ঃ
- ন্যায় বিচার (Justice);
- ন্যায়পরতা (Equity); এবং
- সুবিবেচনা (Conscience)।
১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন
১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনটি মূলতঃ ইংল্যান্ডের ইকুইটি হতে আহরতি হয়েছে। চুক্তি রদ, দলিল রদ, নিষেধাজ্ঞা, সুনির্দিষ্টভাবে চুক্তি পালন সংক্রান্ত আইনের বিধানগুলি ইংল্যান্ডের ইকুইটি বিধির সংবিধিবদ্ধ প্রতিফলন।
১৮৮২ ট্রাস্ট আইন
বাংলাদেশের আদালতসমূহ ন্যায়পরতার নীতিমালার ভিত্তিতে ১৮৮২ সালের ট্রাস্ট আইনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে থাকেন এবং ট্রাস্ট সম্পত্তির স্বার্থ সংরক্ষণ করে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের এই বিধিবদ্ধ আইনে ইংল্যান্ডের ইকুইকুটি আদালত কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ট্রাস্ট্রের পূর্ণাঙ্গ কাঠামোই সন্নিবেশ করা হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, ট্রাস্টি কর্তৃক অন্যায়ভাবে ট্রাস্ট সম্পত্তি ক্রয় এবং হস্তান্তর সম্পর্কিত বিধান সংরক্ষণ করার মাধ্যমে ন্যায়পরতার নীতিকে সুস্পষ্টভাবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে।
১৮৭২ সালের চুক্তি আইন
১৮৭২ সালের চুক্তি আইনের ৬৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, চুক্তির যে পক্ষ চুক্তি বাতিল করেন, সেই পক্ষ অপর পক্ষের নিকট হতে যে সুবিধা অর্জন করেছেন তা তিনি প্রত্যাপর্ণ করতে বাধ্য। এছাড়া ৬৫ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, যদি কোন চুক্তি বাতিল বলে গণ্য হয় কিংবা বাতিল করা হয়, তবে ঐ চুক্তি অনুযায়ী যদি কোন পক্ষ সুবিধা পেয়ে থাকেন, তবে তিনি যার নিকট হতে তা পেয়েছেন, তাকে ইহা প্রত্যার্পণ করতে বাধ্য করা বা এর জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করা যাবে এ বিধিানগুলি ইকুইটি নীতির প্রতিফলন মাত্র।
১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইন
স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে এই বিধিবদ্ধ আইনে ইকুুইটির চেতনা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। রেহেন সংক্রান্ত বিধান, বিশেষ করে ন্যায়পর রেহেন (Equitable mortgage), রেহেন মুক্তি (Redemption), নির্বাচন মতবাদ (Doctrine of Election), আংশিক সম্পাদন নীতি (Principles of part performance) ইত্যাদি বিধানাবলীতে ইকুইটির প্রতিচ্ছবি পরিলক্ষিত হয়।
১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধি
দেওয়ানী কার্যবিধির ১৫১ ধারায় আদালতকে অন্তর্নিহিত ক্ষমতা (Inherent Power) দেয়া হয়েছে। যেক্ষেত্রে আইনের কোন সুস্পষ্ট বিধান নেই, সেক্ষেত্রে আদালতকে ন্যায় বিচারের প্রয়োজনে যা সুবিবেচনা ও ন্যায়সঙ্গত মনে হবে সে পদ্ধতি অবলম্বন করে তার অন্তর্নিহিত ক্ষমতাবলে বিচারকার্য সম্পন্ন করার জন্য বলা হয়েছে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেই আদালতকে এরূপ বিশেষ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
১৯৭২ সালের বাংলাদেশ সংবিধান
১৯৭২ সালের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ১৯(১) অনুচ্ছেদের ‘সমতা নীতি’ (Principle of Equity) বিশেষভাবে প্রাধন্য লাভ করেছে।
এগুলি ছাড়াও ১৯৩০ সালের পণ্য বিক্রয় আইন (The Sale of Goods Act, 1930), ১৯৩২ সালের অংশীদারী আইন (The Partnership Act, 1932), ১৯২৫ সালের উত্তরাধিকারী আইন (The Succession Act, 1925), ১৮৯০ সালের তত্ত্বাবধায়ক ও নাবলকত্ব আইন (The Gurdian and ward Act, 1890), ১৮৮১ সালের হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন (The Negotiable Instrument Act, 1881), ও ১৯০৮ সালের তামাদি আইন (The Limitation Act, 1908), ইত্যাদি আইনগুলি ইকুইটির নীতিমালার উপর ভিত্তিশীল।
ইংল্যান্ডের ন্যায় বাংলাদেশে ইকুইটির নীতিমালা প্রয়োগের কোন সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্র নেই এবং ইকুইটি ও আইনের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করে না। ইংল্যান্ডের ইকুইটি নীতিমালা প্রয়োজনীয় সংশোধনী সাপেক্ষে উপরোক্ত আইনের বিধানসমূহের মাধ্যমে আইন হিসেবেই বাংলাদেশের আদালতসমূহ প্রয়োগ করে থাকে।
COMMENTS